আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। খাদ্য বিভাগের কাজ শুধু নাগরিকদের কাগজে কলমে নাগরিক সুবিধা দেওয়ার বিষয় নয়, এই বিভাগ থেকেই সরাসরি মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন খাদ্য সরবরাহ করা হয়। অন্যসব বিভাগের একটি অফিস হয়তো সকল উপজেলায় রয়েছে, কিন্তু খাদ্য বিভাগের অতিরিক্ত হিসেবে প্রতি উপজেলায় রয়েছে একটি খাদ্য গুদাম। এখান থেকেই ওএমএস, টিসিবি, টিআর কাবিখা সহ সকল রেসন সরবরাহ হয়। ফলে খাদ্য পরিদর্শক এবং গুদাম সংরক্ষক (ওসিএলএসডি) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ।
জেলা খাদ্য সংরক্ষক বা ডিসি ফুড উপজেলার এ দু’টি অফিসের নিয়ন্ত্রণকারী কতৃপক্ষ হলেও বিভাগভিত্তিক বা আন্তঃজেলায় এ পদ দু’টিতে পদায়নকারী (বদলী) কতৃপক্ষ হচ্ছেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক। এ কারণে বদলীসংশ্লিষ্ট বড় অংকের টাকা লেনদেন হয়, বিশেষ করে ওএলএসডি পদে পদায়ন এবং বদলীর ক্ষেত্রে। দেখা যায়— এ কারণেই উপজেলাগুলোতে ধান চাল ক্রয়ে এবং তা বিতরণে দুর্নীতির মহোৎসব হয়। অর্থাৎ দুর্নীতির শুরুটা হয় নিয়োগ এবং বদলী থেকে। বড় কর্তাদের হাত ধরেই দুর্নীতির ক্ষেত্র রচিত হয়। সেই বড় কর্তারাই যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালান, সেটি শুনতে ভালো শুনালেও কার্যত তা অর্থহীন হয়।

যেমন, খুলনায় আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তার অধীনে ৫৯টি খাদ্য গুদাম রয়েছে। উপজেলা অফিস এবং জেলা অফিস তো রয়েছেই। খাদ্য গুদামের রক্ষক ওসিএলএসডি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মাল খাওয়ার বিস্তর সুযোগ আছে বলে। এ কারণেই এ পদে পদায়নের ক্ষেত্রে বড় অংকের টাকা লেনদেন হয়। বড় অংকের টাকা দিয়ে গুদামের রক্ষক হওয়ার পরে তারা মরিয়া হয়ে ওঠে টাকা উঠাতে। মরিয়া হতে হতে কেউ কেউ আবার নতুন কোনো কর্মকর্তার হাতে মারা খায়। অর্থাৎ নতুন কোনো কর্মকর্তা এসে তাকে সরিয়ে দিয়ে নতুন কাউকে পদায়ন করে। সে হয়ে যায় আবার খাদ্য পরিদর্শক। খাদ্য পরিদর্শকেরও মাল খাওয়ার সুযোগ আছে, তবে গুদাম সংরক্ষকের মতো অতটা নয়। এজন্য ওসিএলএসডি বা গুদাম সংরক্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ বদলী।

প্রশ্ন হচ্ছে— এই যখন বাস্তবতা তখন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওঝা হয়ে আসলে কী ঝাড়বেন? প্রসঙ্গত, অনিয়ম ঠেকাতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ফেব্রুয়ারি থেকে অভিযান শুরু করেছে। চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করতে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন বলে জানা গিয়েছে। চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের ১১ জেলায় গঠন করা হয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। তারাও বিভিন্ন খাদ্য গুদামে অভিযান চালাচ্ছেন। ফলোআপ নিউজ জানতে চায় কী হচ্ছে এসব— কে সাপুড়ে, কে সাপ, আর কে কার বাপ আসলে? কিছুই তো হিসেব মিলছে না। জনগণের বক্তব্য— তারা সবদিক থেকেই বাঁশ খায়, তবে বড় কর্তারাই যে বড় বাঁশটা দিয়ে রাখে, সে খবর জনগণ রাখে না, বুঝতেও পারে না।
খাদ্য বিভাগের দুর্নীতি আদ্যপান্ত জানতে ফলোআপ নিউজে চোখ রাখুন।
সম্পর্কিত সংবাদঃ‘