মন্দিরভিত্তিক অর্থনীতি এবং ক্ষমতার সুফল ভোগ করছে কারা?

শীতলাবাড়ী মন্দির

বাংলাদেশে বর্তমানে বারোয়ারি মন্দিরের সংখ্যা প্রায় ৫০০০০ টি। ২০১১ সালের হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৪০,৪৩৮টি বারোয়ারি হিন্দু মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে খুব ছোট এবং পাড়ার মন্দিরগুলো, বা বটতলা জাতীয় মন্দিরগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বাংলাদেশে বর্তমানে হিন্দু জনসংখ্যা অনুযায়ী প্রতি তিন থেকে চারশো মানুষের জন্য একটি মন্দির রয়েছে। তবে এই পরিসংখ্যানে বিশেষ গলদ আছে। এই পরিসংখ্যানের মধ্যেও রাজনীতি আছে। প্রকৃতপক্ষে মন্দিরের সংখ্যা লক্ষ ছুঁয়ে যাবে।

হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী বারোয়ারী মন্দিরে সাধারণ মানুষের দৈনিক অংশগ্রহণের রেওয়াজ যেহেতু নেই, তাই এই মন্দিরগুলো হয়ে উঠেছে কতিপয়শ্রেণীর। বেশিরভাগক্ষেত্রে ব্যবসায়ীক গোষ্ঠী মন্দিরগুলোকে তাদের ব্যবসার অনুষঙ্গ করে নিয়েছে। যেমব, খুলনার বড় বাজারের একাধিক মন্দির এবং মন্দিরের সম্পত্তি কয়েকজন ব্যবসায়ী ভোগদখল করছে।

খুলনা
মন্দিরটি ব্যক্তিগত, নাকি বারোয়ারী, সেটি নিয়েই রয়েছে বড় প্রশ্ন।

অনেকের জন্য মন্দিরগুলোই হয়ে উঠেছে মূল ব্যবসা। ঢাকার রমনা কালি মন্দির দখল করে ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার উৎপল কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঢাকা শহর সহ প্রতিটি বড় শহরে রয়েছে মন্দির বাণিজ্য। এমনকি মন্দিরের জায়গা কমিটি বিক্রি করে দিয়েছে এমন নজিরও রয়েছে। খুলনার টুটপাড়া মন্দিরের জায়গা কমিটিই বিক্রি করেছে বলে ফলোআপ নিউজ জানতে পেরেছে। মন্দিরের সম্পত্তি যোগসাজশে ভাগ করে নেওয়ার দৃষ্টান্ত অনেক।

এক সময় এ অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ই প্রধানত বসবাস করতো। ফলে বিভিন্নরকম মন্দির বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। এসব মন্দিরের সাথে ইতিহাস ঐতিহ্যের সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে অনেক মন্দিরকে শুধু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা না করে প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন থাকলেও হিন্দু সমাজপতিরা মন্দিরগুলোকে কুক্ষিগত করে রাখতেই বেশী আগ্রহী।

বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ মন্দিরগুলোর মূল পরিচালক, এবং প্রতিপালকের দাবীদার হলেও তারা মূলত মন্দির বাণিজ্যে লিপ্ত বলেই অভিযোগ রয়েছে। পুজা উদযাপন পরিষদের বিভিন্ন স্তরের কমিটি পর্যালোচনা করলেও সে অভিযোগের সত্যতা মেলে। ঘুষখোর, আড়ৎদার, মজুদদার, চোরাচালানকারী, এলাকার ক্রিমিনাল, সাইকো থেকে শুরু করে অস্বীকৃত হলেও অনুমিত চোর ডাকাতরাই মন্দির সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোতে প্রধানত পদ পায়। প্রকৃতপক্ষে আধ্যাত্মিক এবং মানবহিতৈষী মানুষগুলোর এখানে বেল নেই। তাদেরকে সাইড করে দেওয়া হয়।

শীতলাবাড়ী মন্দির
খুলনা দোলখোলায় অবস্থিত শীতলা বাড়ীর এ মন্দির কমিটির কাছে জনসাধারণের প্রশ্ন রয়েছেঃ মন্দিরটি সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক চর্চা এবং আধ্যাত্মিক চিন্তার কেন্দ্রস্থল হতে পেরেছে, নাকি কতিপয়ের ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার এবং মন্দিরভিত্তিক অর্থনীতিতে ভাগ বসানো সহ মন্দিরে অনুদানের ভণিতায় নিজের ব্যবসায়ীক স্বার্থ রক্ষা করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে?

অথচ মন্দিরের সংখ্যা এবং সম্পত্তি বিবেচনায় নিলে মন্দিরগুলোই হয়ে উঠতে পারতো কমপক্ষে এক কোটি সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের অন্যতম আশ্রয়স্থল। মেডিকেল ক্যাম্প, লঙ্গর —এরকম অনেক কিছুই পরিচালনা করা সম্ভব ছিলো। একদিকে এখনো হরিজন সম্প্রদায়ের মতো অনেক মানুষে ঠিকানা বিহীনভাবে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে, অন্যদিকে এইসব তথাকথিত সমাজপতিরা মন্দিরগুলোর দখল নিয়ে তাদের ব্যবসার অনুষঙ্গ করে নিয়েছে। তারা মন্দিরগুলো ব্যবহার করছে বিভিন্ন কৌশলে নিজস্বার্থে। দিনকে দিন এটি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

[চলবে…]

সম্পর্কিত সংবাদ

১. বেদখল হয়ে যাওয়া মন্দিরের জায়গা উদ্ধার, হিন্দু সম্প্রদায়ে স্বস্তি

২. ১৫ বছর পর দখলমুক্ত হলো কালি মন্দিরের জায়গা

৩. কুষ্টিয়ায় মন্দিরের সামনে জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণ

৪. ধর্মপাশায় মন্দিরের জায়গা দখলের অভিযোগ

৫. খুলনায় মন্দিরের তালা কেটে আড়াই মিনিটেই কৃষ্ণের মূর্তি চুরি

৬. মসজিদ-মন্দির কমিটি থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ সরছে, দখল করছে অপরাধীরা: সংসদীয় কমিটি

৭. আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মন্দির দখলের অভিযোগ

৮. পাইকগাছায় মন্দির কমিটি নিয়ে হামলায় আহত ১০

৯. দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে অপহরণ ও গুলি

১০. বগুড়ায় ২৫ কোটি টাকা মূল্যের দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল

১১. ২০০ কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধার, তৈরি হবে নতুন মন্দির

১২. আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

১৩. আখালিয়ায় শতকোটি টাকার দেবত্তোর সম্পত্তি দখল বিক্রি!

১৪. চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

১৫. ফুলবাড়ীতে মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

১৬. জামালগঞ্জে দেবোত্তর সম্পত্তি দখলে দু’দফা হামলা, আহত ১৫

১৭. ‘দেবোত্তর’ সম্পত্তি নিয়ে ভূমির মালিক-এলাকাবাসীর সঙ্গে ইসকনের বিরোধ

১৮. দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী

প্রাসঙ্গিক ছবি

খুলনার দোলখোলায় অবস্থিত শীতলাবাড়ী মন্দিরের এই গাছটি অত্যন্ত পুরাতন, এবং বিরল প্রজাতির।
খুলনার দোলখোলায় অবস্থিত শীতলা বাড়ী মন্দির চত্বরে অবস্থিত এই গাছটি ইউফোবিয়া গোত্রের, গাছটি বিরল প্রজাতির। এ ধরনের গাছ এ ধরনের বৃক্ষাকার হতে বহু বছরকাল সময় লাগে।