বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের পাঁচ ফুট বাই সাত ফুটের রুম বনাম রাষ্ট্রের এক্সিকিউটিভদের ত্রিশ ফুট বাই ত্রিশ ফুটের আলিসান রুম

নির্বাহী প্রকৌশলী

খুলনার বিএসটিআই-এর অফিসটি যদি কেউ দেখে থাকেন তাহলে এই প্রশ্ন আপনার মনে আসতে বাধ্য— কীসের নিমিত্তে এই অফিস? অফিসে সর্বসাকুল্যে বিশজন কর্মকর্তা কর্মচারীও নেই। মাত্র তিনটি জেলার জন্য এই অফিস! কেন্দ্রীয় অফিসটিও এত বড় না হলে চলে।

স্বাস্থ্য ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অফিসে যান— একই অবস্থা। নির্বাহী প্রকৌশলী এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর রুমে ঢুকলে মনে হয় যেন কোনো স্বৈরতান্ত্রিক রাজার রুমে ঢুকেছি। উপরেই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর অফিস। একই রকম সুসজ্জিত। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কেউ এখানে দায়িত্বরত নেই। নির্বাহী প্রকৌশলীই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

ভবনের বাকী বেশিরভাগ রুম খালি পড়ে আছে। কর্মকর্তাদের কাজও তেমন কিছু নেই। অফিসে গেলে নির্বাহী প্রকৌশলীকে বেশিরভাগ সময়ই পাওয়া যায় না। থাকলেও অন্যরা বলেন, নেই। কেনো?

এই অফিসের কাজ— সদর হাসপাতালগুলো মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা। ফলোআপ নিউজ সাতক্ষীরা এবং খুলনার বিভিন্ন সদর হাসপাতাল সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখেছে— হাসপাতালগুলো ঠিকমতো মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না, বিপরীতে যতটুকু কাজ হয়, সেখানেও দুর্নীতির এক ভয়ালো চিত্র পাওয়া গিয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী
বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

বিভাগীয় শ্রম দপ্তর খুলনার অফিসে গেলে ভবনের নতুনত্ব দেখে চমকে উঠতে হয়, কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নগুলো কীভাবে চলছে ভাবলেমগা শিউরে ওঠে। ট্রেড ইউনিয়নগুলোতে নিয়মিত নির্বাচন হয় না। শ্রমিক অধিকার বলে কিছু নেই। ব্যতিক্রম বাদ দিলে মালিকপক্ষের দালাল হিসেবেই কিছু লোক নেতা হিসেবে আবির্ভুত হয়। তাদের কাজ চাঁদাবাজি করা, মালিকপক্ষের সাথে আঁতাত রাখা।

উদাহরণ হিসেবে স্বর্ণ শিল্প শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর কথা উল্লেখ করা যায়। বিশেষ করে ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর মূল কাজই হচ্ছে চাঁদাবাজি। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে— রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে এদের নেতৃত্বেও পরিবর্তন আসে। খুলনার ৪ নম্বর ঘাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা সেজে এসে সরকারি অফিসকেও জিম্মি করে রেখেছে কয়েকজন। অনেকক্ষেত্রে সরকারি অফিসের কেউ কেউ এদের সাথে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট করে ফেলে।

এগুলো মাত্র কয়েকটি উদাহরণ। বিগত সরকার জনগণের পকেট কেটে ভবনের পর ভবন বানিয়ে গেছে, কিন্তু সেবার মান এবং মানব উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। কাঠামোগত উন্নয়নও সমানতালে হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের রুমে গেলে শিক্ষার্থীরা বসার জায়গা পায় না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রুমের প্রশ্বস্ততা এবং সাজসজ্জা খুবই প্রয়োজন। কারণ, একজন অধ্যাপককে থিসিস সুপারভাইজার হিসেবে তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রায়শই তার রুমে বসতে হয়।

ফলোআপ নিউজ-এর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে— বিগত সরকার নির্বাহী বিভাগের ঘাড়ে ভর করতে গিয়ে রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বঞ্চিত করে রেখেছিলো। বিপরীতে নির্বাহী বিভাগের প্রতিটি দপ্তরে কাঠামোগত উন্নয়নে সীমাহীন খরচ করেছে, যেটি আরো ধীরে করলেও চলতো। এ কারণে জনগণ ভুগছে মুদ্রাস্ফিতি জনিত সমস্যায় জর্জরিত হয়ে।