
ফলোআপ নিউজ খুলনার বিভিন্ন শরবত বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে মিষ্টত্বের জন্য তারা ঘনচিনিই ব্যবহার করছে। বেশিরভাগ বিক্রেতা ঘনচিনির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানেই না, ফলে অকপটে তারা কথা বলেছেন।
খুলনা নিউমার্কেটে শরবত বিক্রেতা ইয়াকুব আলী (ছদ্মনাম) বলেন, আমি এটার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানি না। ঘন চিনি কিনতে আমার কোনো সমস্যা হয় না। আমার শরবতের ক্রেতারা এসব নিয়ে ভাবে না। আপনার কাছ থেকে প্রথম জানলাম এটা ক্ষতিকর।
ঘনচিনি চিনি চিনির চেয়ে পঞ্চাশ গুণ মিষ্টি। অর্থাৎ, কোনো খাবারে মিষ্টতা আনতে যদি ৫০ কেজি চিনির প্রয়োজন হয় সেখানে মাত্র ১ কেজি ঘনচিনিই যথেষ্ট।
গরমের ক্লান্তি কাটাতে ফুটপাত থেকে শ্রমজীবী মানুষ যে কারণে এক গ্লাস শরবত পান করে, চিনির পরিবর্তে ঘনচিনি ব্যবহার করার সে উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে, কারণ, ঘনচিনিতে ক্যালরি নেই।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে ফলোআপ নিউজ জানতে পেরেছে— অনেক ভালো ভালো দোকানেও মিষ্টতা আনতে ঘনচিনি ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে নামে বেনামে বাজারজাত হওয়া জুসগুলো নিয়েও। মিষ্টির দোকানে ঘনচিনি ব্যবহৃত হয় কিনা— সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে, তবে মিষ্টি যেহেতু কেজি হিসেবে বিক্রি হয়, এবং দুধের ছানার দাম কেজি হিসেবে চিনির দামের চেয়ে বেশি, ফলে কেজি মেটাতে মিষ্টির দোকানদারদের জন্য চিনির ব্যবহারই লাভজনক। ফলোআপ নিউজের বিশ্লেষণী অনুসন্ধান বলছে— মিষ্টির দোকানে ঘনচিনির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য নয়। বেকারীতে ব্যাপকভাবে ঘনচিনি ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ফলোআপ নিউজ জানতে পেরেছে। এ কারণে আকারের তুলনায় পাউরুটি এবং কেকগুলো হালকা, কারণ, চিনির ওজন সেখানে নেই, কিন্তু মিষ্টতা আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘনচিনি ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে, মানব হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়; এছাড়া পুরুষত্ব হানিও ঘটতে পারে। বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে দেশে ২০০৬ সালে ঘনচিনির আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য ১৯৬০ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৯ সালে ঘনচিনির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। দেরীতে হলেও বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ হয়েছে, কিন্তু কার্যকর হয়নি। (সূত্রঃ যুগান্তর)
সরকারের তথ্য বলছে— খাদ্য হিসেবে সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ঘনচিনি বিষাক্ত। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে এটি দ্বারা শরীরের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
প্রশ্ন উঠেছে— আমদানী নিষিদ্ধ হলেও ঘনচিনি কীভাবে আমদানী হচ্ছে? ঘনচিনি দেখতে সাইট্রিক অ্যাসিড ও সোডিয়াম সাইট্রেটের মতো। এ জন্যই এই দুই দ্রব্যের নামে ঘনচিনি আমদানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
২০২২ সালে রাজধানীর মিটফোর্ডের একটি বাণিজ্যিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ২০ হাজার ১৬০ কেজি ক্যালসিয়াম কার্বোনেট পাউডার (চুনাপাথর) আমদানি করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমসের এআইআর (গোয়েন্দা) শাখা পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা করে দেখতে পায়, চালানে ১৪ হাজার কেজি ঘনচিনি এবং ৬ হাজার কেজি ক্যালসিয়াম কার্বোনেট পাউডার রয়েছে। এ ঘটনায় আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও জেটি সরকারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, সেই পণ্য পরে খালাস হয়ে যায়। বস্তুত এভাবেই বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে ঘনচিনিসহ আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য।
এটি একটি উদাহরণ মাত্র। এরকম ঘটনা অনেক। তাহলে ধারণা করা যাক— কী পরিমাণ ঘনচিনি ভোক্তার পেটে যাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে চিনি হিসেবে আমরা বাজার থেকে যা কিনছি, সেটিও ঘনচিনি মিশ্রিত এক ধরনের ক্রিস্টাল কিনা। তথ্য বলছে— বাজারে চিনি হিসেবে যা মিলছে সেগুলোও অনেকক্ষেত্রে ঘনচিনি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল-বিএআরসির গবেষণায় দেশের বিভিন্ন বাজার থেকে প্যাকেটজাত ও খোলা চিনির নমুনা পরীক্ষায় সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ঘনচিনির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিএআরসি প্যাকেটজাত চিনির ১২টি ও খোলা চিনির চারটি নমুনা সংগ্রহ করে তা সিঙ্গাপুরের প্যাসিফিক ল্যাব থেকে পরীক্ষা করায়। ওই পরীক্ষায় সবগুলো নমুনাতেই সোডিয়াম সাইক্লামেটের অস্তিত্ব ধরা পড়ে।

প্রাসঙ্গিক তথ্যঃ
সোডিয়াম সাইক্লোমেট মূলত সাইক্লোহেক্সিলামিন-এর সালফোনেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাইক্লোহেক্সিলামিনকে সালফামিক অ্যাসিড বা সালফার ট্রাইঅক্সাইড বা ক্লোরোসালফোনিক অ্যাসিড এর সাথে বিক্রিয়া করানো হয়। এরপর প্রাপ্ত সাইক্লোহেক্সিলামিনকে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের মতো ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে সোডিয়াম লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম সাইক্লোমেট তৈরি করা হয়।
ঘনচিনি কারা উৎপাদন করে?
আখের চিনি চেনার জন্য ঘরোয়া পরীক্ষা
সম্পর্কিত সংবাদ
নিষিদ্ধ ‘ঘন চিনি’ দিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুখাদ্য
সোডিয়াম সাইক্লামেট মুক্ত হোক চিনি
মিথ্যা ঘোষণায় আসছে ঘনচিনি, ব্যবহার হচ্ছে মিষ্টি বেকারিতে
আমদানি করা সাদা চিনিতে মিলেছে ক্ষতিকর রাসায়নিক
অন্য নামে ঘনচিনি আমদানি?
সোডা অ্যাশের ঘোষণা দিয়ে ঘন চিনি আমদানি
বন্দরে এবার আমদানি নিষিদ্ধ ‘ঘনচিনি’, দুই চালানে ৮৯ টন
…
