আমি বলছি না সবাই লুটপাটকরী, কিন্তু বাংলাদেশে সঙ্ঘবদ্ধ লুটপাট টিকিয়ে রাখতে তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তারা। কীভাবে সম্ভব?! কিন্তু এটাই তো বাংলাদেশে আসলে হয়ে আসছে।
আপনি মিষ্টি কারখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, বেকারি পণ্যের ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, স্বর্ণ ব্যবসার ফাঁকি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন— বলবে এগুলো দেখার জন্য তো বিভিন্ন দপ্তরের ডজন খানেক সরকারি অফিসার আছে। আবার আপনি কেনো?
সাংবাদিক পরিচয় দিলে তাদের সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে হাত করা তাদের প্রয়োজন বলে তারা মেনে নিয়েছে, কিন্তু সাংবাদিকদের তারা উটকো ঝামেলা মনে করে। তাছাড়া পুলিশ প্রশাসনকে তারা ভয় পায়, কারণ, তাদের সরাসরি শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার আছে। কিন্তু সাংবাদিকদের তারা ভয় পায় না, কারণ, সাংবাদিকরা একলা মানুষ, পুলিশ কমিশনার বা বিভাগীয় কমিশনারের মতো সুরক্ষিত বাংলোতে একজন সাংবাদিক থাকে না। এজন্য পরোক্ষভাবে একজন সাংবাদিককে হুমকি দিতে তারা দ্বিধা করে না।
তারা জানে না— একজন সাংবাদিক কতটা গভীরে কাজ করতে পারে, কতটা গভীর জ্ঞান এবং অন্তদৃষ্টিসম্পন একজন সাংবাদিক হতে পারে, এটা বোঝার প্রয়োজন তারা বোধ করে না। কারণ, ঐতিহ্যগতভাবে সরকারি অফিসারদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে তারা অভ্যস্ত। তারা মাথা কিনতে চায়। এজন্য সমাজে নতুন মাথা তারা গজাতে দিতে চায় না। নতুন মাথা আছে এটা বিশ্বাস করতে তারা নারাজ। এটা তাদের ভীষণ অপছন্দ। তারা প্রেসক্লাব কিনবে, আলাদাভাবে তাহলে কোনো সাংবাদিককে তারা গুণবে কেনো?
বিশ হাজার টাকার মদের বোতলে তাদের আপত্তি নেই, ধর্মগুলোও তাদের দখলে, শুধু মানবিক কোনো কাজে তাদের তীব্র অনিহা। থাকবেই বা কেনো? মানুষ তো শুধু তাদের কাছে ক্রেতা। সমাজ বিষিয়ে রেখেছে যারা তারা সমাজের হাল ধরার ভণিতা করবে, প্রকৃতপক্ষে কেউ কাজ করতে চাইলে তাকে এগোতে দেবে কেনো?
তারা জানে না— সরকারি কর্মকর্তা, তিনি যত বড় পদাধিকারীই হোন না কেনো, তাকে কলম উঁচিয়ে প্রশ্ন করার দায়িত্ব একজন সাংবাদিকের। একজন ব্যবসায়ী, তিনি যত টাকার মালিকই হন না কেনো, তাকে কলম উঁচিয়ে প্রশ্ন করার দায়িত্ব একজন সাংবাদিকের।
স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্নটি আসে, এদেশের দুবৃত্ত ব্যবসায়ী বা একজন ভালো ব্যবসায়ী, উভয়ের কাছেই— একজন সাংবাদিককে এই কথা বলার সাহস আপনারা কোথা থেকে পান? কেউ যখন বলেন, “বাংলাদেশের সমস্যা দেখার দায়িত্ব আপনার নয়”। তখন তাকে ভালো ব্যবসায়ী না ভেবে কোনো সাংবাদিক যদি দুবৃত্তের তল্পিবাহক ভেবে বসে, তাকে কি দোষ দেওয়া চলে? একজন সাংবাদিকের স্বদিচ্ছা, দায়িত্ব, যোগ্যতা সম্পর্কে সামান্য ধারণা থাকলেও তো একথা বলার সাহস হবার কথা নয়। আপনারা কাকে হুমকি দিচ্ছেন? তার কাজ এবং জীবন জানেন? জানার সময় আছে আপনাদের? কাকে আপনারা এসপি ডিসির ভয় দেখাচ্ছেন? ডিসি এসপি কার?
আমাকে, মানে জনগণকে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে হাত মিলিয়ে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত করছে যারা, জনগণ তাদের কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারবে না? জনগণ বলতে পারবে না— ১২ ঘণ্টা পরিশ্রম করেও তোমার জন্য আমার জীবীকানির্বাহ হয় না। তুমিই এদেশকে কলুষিত করে রেখেছো। তোমাদের ডেরা আমরা চিনি। খুব ভালো চিনি।
দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তারাও এদেশে দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা এইসব সিন্ডিকেটের কারণে। তারা বলেছেন, এরা অনেক শক্তিশালী, রাজনৈতিক মদদপুষ্ট সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক পরিচয়ে শক্তিশালীদের সাথে এরা হাত মিলিয়ে রাখে। বিনিময়ে সবাই তাদের কাছে তুচ্ছ, সবাই তাদের কাছে ক্রেতা।
এর অবসান হতে হবে। মানুষের হয়ে আমাদের কণ্ঠস্বর আরো জোরালো করতে হবে। যাদের নাম ভাঙ্গিয়ে বলার হিম্মত তার হয়েছে— পুলিশ আছে, প্রশাসন আছে, আপনি কে? সেই পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে আমি প্রশ্ন করতে চাই— কাদের হয়ে আপনারা আছেন? জনগণের হয়ে, নাকি এসব সিন্ডিকেটের হয়ে? জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে, নিপিড়ীত বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে সকল প্রশাসনিক ইউনিটকে বলছি, আমাদেরকে উত্তর দিতে হবে। দিতেই হবে।
দিব্যেন্দু দ্বীপ
সম্পাদকঃ ফলোআপ নিউজ
