দেখিয়ে এবং মেমোতে উল্লেখ করে ভ্যাট নেয় এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে ফলোআপ নিউজ। তারা এনবিআর অনুমোদিত ভেন্ডরদের কাছ থেকে ক্রয়ক্রত সফটওয়্যারে ভ্যাট কাটে, ফলে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই বলে প্রচলিত ধারণা। ফলোআপ নিউজ-এর সম্পাদক দিব্যেন্দু দ্বীপ পরিচালিত একটি গবেষণার অংশ হিসেবে রিপোর্ট করতে গিয়ে ফলোআপ নিউজ-এর প্রতিবেদক এই পর্যবেক্ষণটি তৈরী করেছে।
খুলনা কাস্টমস্ কমিশনারেট থেকে সিটি-ইন হোটেল থেকে ভ্যাট আদায়ের যে তথ্য পাওয়া গেছে— সেটি পাঁচ লক্ষ টাকার মতো একটি পরিমাণ। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট প্রতি মাসে কত আদায় করা উচিৎ, সে প্রশ্ন এক্ষেত্রে করার সুযোগ নেই, কারণ, সিটি ইন ভ্যাট নেয় ১৫% উল্লেখ করে, এবং সফটওয়্যারের মাধ্যমে। ফলে এখানে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। কিন্তু এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকদের কাছে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে— সফটওয়্যার ম্যানিপুলেট (নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা) অথবা বাইপাস (পাশ কাটিয়ে ডুপ্লিকেট কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা বা না করা) করার সুযোগ আছে কিনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজস্ব কর্মকর্তা জনাব ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এনবিআর থেকে সফটওয়্যারগুলো যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে, তাতে তার জানামতে ম্যানুপুলেট করার সুযোগ নেই, তবে বাইপাস করে অন্যকোনো উপায়ে অনেক প্রতিষ্ঠান বিল করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
অনুসন্ধান বলছে— বিক্রিতে যে ভ্যাটের টাকা তারা আদায় করছেন, সেটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ঠিকমতো জমা দিচ্ছেন না। প্রশ্ন উঠেছে দৈনিক মাত্র এক লক্ষাধিক টাকা বিক্রয় করে কি সিটি ইনের মতো হোটেলের টিকে থাকা সম্ভব? হোটেল সিটি ইনের বিক্রি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব না হলেও ভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে সিটি ইনের একজন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ ফায়জুল আরেফিন বলেছেন, তাদের মাসিক খরচ কোটি টাকার ওপরে। প্রশ্ন হচ্ছে— সে কোটি টাকা খরচ করতে গেলে বিক্রি হতে হয় কত? সে অনুপাতে ভ্যাট হলে মাসিক ভ্যাট আদায় কত হওয়া উচিৎ? অন্যভাবে এই ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বলেছেন, হোটেলের মোট কক্ষের ৫০% বিক্রি হলে খরচখরচা ওঠে।
হোটেল সিটি ইন, ইজি ফ্যাশন, রং, অঞ্জনস্ —এরকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান চালিয়ে ফলোআপ নিউজ দেখেছে সিটি ইন সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্রেতার কাছ থেকে উল্লেখ করে ১৫% ভ্যাট নেয়। অর্থাৎ, সারাদিনে ৩ লক্ষ টাকা বিক্রি হলে ৪৫ হাজার টাকা ভ্যাট আদায় করছে বলে ধরে নিতে হবে। যদি তাদের বিক্রির পরিমাণ এরকম বা আরো বেশি হয়ে থাকে। তবে ভ্যাট আদায়ের তথ্য অনুযায়ী তাদের বিক্রি এর চেয়ে অনেক কম।
দুর্গা পুজা উপলক্ষে খুলনার পোশাকের দোকানগুলোতে বিক্রি ভালোই ছিলো। স্বাভাবিকভাবেই সেপ্টেম্বর মাসের বিক্রি তার আগের মাসের তুলনায় কয়েকগুণ হওয়ার কথা। দিগুণ বিক্রি হয়েছে ধরলেও ভ্যাট দিগুণ হওয়ার কথা। দিগুণ আদায় হয়েছে কিনা? সফটওয়্যারে আদায় হলে তো সঠিকভাবেই হওয়ার কথা। ঈদের মাসের আদায়ের তথ্যটিও এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক।
পোশাকের দোকান রং-এর খুলনা শাখা এ বিষয়ে তথ্য দিতে রাজি নয়। অঞ্জনস্-এর খুলনা শাখা বলছে, তাদের ২৪ টি শাখার ভ্যাট কেন্দ্রীয়ভাবে মিরপুরে জমা হয়। তারাও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে রাজি নয়। খুলনা কাস্টমস্ কমিশনারেটে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। ক্রেতাদের প্রশ্ন— ভ্যাট দেয় জনগণ, আর জনগণ জানতে পারবে না যে, আদায়কৃত ভ্যাট ঠিকমতো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে কিনা?
ক্রেতার কাছ থেকে রিসিট কেটে ভ্যাট নিলেও তারা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তা ঠিকমতো জমা করে না —এমন দাবী মেনে নিয়ে খুলনা কমিশনারেট-এর রাজস্ব কর্মকর্তা জনাব শিহাব আহমেদ বলেন, তারা হয়তো দু’টো মেশিন ব্যবহার করে। কোনো-না-কোনোভবে তারা কারসাজি করে, যেটি আমরা ধরতে পারি না। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না।
এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নিতে দিব্যেন্দু দ্বীপ খুলনা কাস্টমস্ কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার জনাব মোহাম্মদ সেলিম শেখ-এর সাথে দিব্যেন্দু দ্বীপ গবেষণার প্রয়োজনে কথা বলতে চাওয়ায় তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রশ্নপত্র জমা দিতে হবে। দিব্যেন্দু দ্বীপ কোনো সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করেননি বলে তিনি দাবী করেন, একইসাথে ওনার সাথে দেখা করতে পারার বিষয়টিকে দিব্যেন্দু দ্বীপের সৌভাগ্য বলে বর্ণনা করেন। কোনো দাপ্তরিক প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে দেখা করায় তিনি অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন।
সাংবাদিক এবং গবেষক হিসেবে তার (জনাব মোহাম্মদ সেলিম শেখ) সাথে দেখা করায় আপত্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আঞ্চলিক তথ্য অফিস খুলনার পরিচালক গাজী জাকির হোসেন বলেন, সাধারণত গবেষক-সাংবাদিকদের সবাই সমীহ করে, যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে। এক্ষেত্রে কেনো তিনি অস্বস্তি বোধ করলেন বোধগম্য নয়। দাপ্তরিক কাজের বাইরে কেউ দেখা করতে পারবে না —এমন কিছু তাদের আইনে আছে কিনা আমার জানা নেই। তিনি এনবিআর কতৃপক্ষের সা
সংবাদ সংযোগ
২৮ তম বিসিএস-এর এ কর্মকর্তা (মোহাম্মদ সেলিম শেখ) এর আগে কাস্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট চট্টগ্রামের যুগ্ম কমিশনার ছিলেন। এরপর বদলি হয়ে তিনি যশোর কমিশনারেটে যুগ্ম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে খুলনায় আসার আগে তিনি যশোর এবং শুল্ক, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় যশোর এবং চট্টগ্রামে চাকরি করা এ কর্মকর্তা ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত মোংলা কাস্টমসের উপ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ঢাকা দক্ষিণে বদলি হয়ে যান।

সম্পর্কিত সংবাদ
