
খাবার ও পানীয় সংক্রান্ত নিষেধ
১. মায়ের দুধ ছাড়া কিছুই খাওয়াবেন না। পানি, মধু, গ্লুকোজ, ফলের রস, দুধের গুঁড়া বা অন্য কিছু নয়। একান্ত প্রয়োজনে মায়ের দুধের বিকল্প ইনফ্যান্ট ফর্মুলা দিতে হবে।
২. বাইরের কোনো খাবার এমনকি সামান্য পরিমাণেও দেওয়া যাবে না।
শরীর ও যত্ন নেওয়ার বিষয়ে
১. নাভির নাড়ি শুকানোর আগে পানি লাগাবেন না। সংক্রমণ হতে পারে।
২. সুগন্ধি পাউডার, তেল বা লোশন বেশি ব্যবহার করবেন না। শিশুর ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল। সমস্যা হতে পারে।
৫. জোরে ঝাঁকানো বা দোলানো নিষেধ। এতে মস্তিষ্কে আঘাত (shaken baby syndrome) হতে পারে।
স্বাস্থ্য ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা
১. অনেক লোকের কোলে দেবেন না। ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
২. ধূমপান বা ধোঁয়ার পরিবেশে রাখবেন না।
৩. অসুস্থ ব্যক্তি যেন শিশুর কাছে না যায়।
৪. ঠান্ডা বা গরমে হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন করবেন না।
ঘুম ও নিরাপত্তা বিষয়ে
১. বালিশ, কম্বল, খেলনা দিয়ে চারপাশ ভরিয়ে রাখবেন না। শ্বাসরোধের ঝুঁকি থাকে।
২. পেটের উপর শুইয়ে রাখবেন না। সবসময় পিঠের ওপর ঘুমানো নিরাপদ।
৩. অন্ধকার ঘরে একা ফেলে রাখবেন না।
অভিভাবকের আচরণ ও যত্ন
১. চুমু খাওয়া (বিশেষ করে মুখে) থেকে বিরত থাকুন। ঠোঁট বা মুখের ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।
২. শিশুর কান টানাটানি বা নাক পরিষ্কার করতে বস্তু ঢোকাবেন না।
৩. অতিরিক্ত আওয়াজ বা টিভির শব্দে রাখবেন না।
৪. অবহেলা বা ভয় দেখানো আচরণ কখনো করবেন না।
৫. ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট নিজে থেকে দেবেন না। ডাক্তার ছাড়া কিছুই দেবেন না।
ছয় মাস বয়স হলে শক্ত খাবার দেওয়া শুরু করতে হবে যেভাবে
ছয় মাস বয়সে শিশুর জন্য শক্ত খাবার শুরু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ, এসময় শুধু মায়ের দুধে সব পুষ্টি মেলে না।
ধাপে ধাপে শুরু করার নিয়ম
১. সময় নির্বাচন
-
দিনে শিশুর যখন মেজাজ ভালো থাকে, তখন নতুন খাবার দিন (সাধারণত সকালে বা দুপুরে)।
-
একবারে অল্প করে দিন (১-২ চা চামচ), ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ান।
২. প্রথম দিকে যেসব খাবার দেওয়া যায়
প্রথম কয়েক সপ্তাহে একবারে এক ধরনের খাবার দিন, যাতে অ্যালার্জি বা হজমের সমস্যা বুঝতে পারেন।
| খাবার | প্রস্তুত প্রণালী | পরিমাণ |
|---|---|---|
| চাল/চালের গুঁড়ো খিচুড়ি | চাল, পানি ও সামান্য ডাল ভালোভাবে সেদ্ধ করে পাতলা করে দিন | ২ চা চামচ থেকে শুরু |
| সুজি (সেমোলিনা) | দুধ বা পানিতে সেদ্ধ করে পাতলা করে দিন | অল্প অল্প করে |
| আলু ভর্তা | সেদ্ধ আলু সামান্য গরম পানি বা মায়ের দুধে মিশিয়ে দিন | ২–৩ চামচ |
| ডিমের কুসুম | অল্প করে সেদ্ধ কুসুম (সাদা অংশ নয়) | সপ্তাহে ২–৩ দিন |
| কলা বা পাকা পেঁপে ভর্তা | চামচ দিয়ে চটকে দিন | ১–২ চা চামচ |
| ডাল স্যুপ বা সবজি স্যুপ | হালকা করে ছেঁকে দিন | ২–৩ চামচ |
৩. ধীরে ধীরে বাড়ানো
-
১–২ সপ্তাহ পর একবারে ২–৩ ধরনের খাবার দেওয়া শুরু করুন (যেমন সকালে খিচুড়ি, বিকেলে ফলভর্তা)।
-
৭–৮ মাসে গিয়ে দিনে ২–৩ বেলা শক্ত খাবার দিতে পারবেন।
৪. যা দেওয়া উচিত নয়
-
মধু ❌ (১ বছরের আগে দেওয়া নিষেধ)
-
লবণ বা চিনি ❌
-
গরু বা মহিষের দুধ ❌
-
মসলা, ভাজা, চর্বিযুক্ত খাবার ❌
-
প্যাকেটজাত বা সংরক্ষিত খাবার ❌
৫. মায়ের দুধ চালিয়ে যান
শিশুকে আগের মতোই বুকের দুধ দিন। খাবারের পাশাপাশি দুধই এখনো প্রধান পুষ্টির উৎস।
❤️ অতিরিক্ত টিপস
-
প্রতিবার নতুন খাবার দেওয়ার পর ২–৩ দিন পর্যবেক্ষণ করুন (পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, ফুসকুড়ি হলে বন্ধ রাখুন)।
-
পরিষ্কার হাতে ও পরিষ্কার পাত্রে খাবার দিন।
-
জোর করে খাবার খাওয়াবেন না, ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়তে দিন।
