লেখা এবং পড়ার জন্য লিটারেসি লাগে, কিন্তু বলতে এবং শুনে বুঝতে কিন্তু লিটারেসি লাগে না।
কোনোদিন স্কুলে যায়নি এবং কোনোভাবে পড়ালেখা শেখেনি, সেও তো কথা বলছে এবং শুনছে, তাই না? তাহলে স্পোকেন শিখতে কেন কোচিং করতে যেতে হবে?
বিয়ে করে যা শেখা যায়, পশ্চিমা বিশ্বে সে শিক্ষা বোধহয় ওরা স্কুল লাইফেই শেষ করে। খারাপ বলব না, বরং ওরা সেক্ষেত্রে এগিয়ে যায়, জীবন সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যে ফ্যান্টাসি আমাদের বুড়ো বয়সেও কাটে না অনেকের তা ওরা হয়ত কাটিয়ে ওঠে বয়স আঠারো হওয়ার আগেই।
বর্তমান লেখার বিষয় অবশ্য সেটি নয়। বিষয় হচ্ছে ভাষা শিক্ষা। ঈশপের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি, আমি খুব সচেতনভাবে এক বছর যথাসম্ভব ঈশপের সাথে থাকার চেষ্টা করছি, বোঝার চেষ্টা করছি একটা মানব শিশু কীভাবে বেড়ে ওঠে, কীভাবে কপ করে, এডজাস্ট করে, কীভাবে হাঁটতে শেখে, কীভাবে সে চ্যালেঞ্জগুলো সামলায়, কোথায় তার মনোযোগ সবচে’ বেশি, কেন সে সবকিছু গালে দেয়, কীভাবে সে কথা বলা শেখে ইত্যাদি।
সবকিছু গালে দেওয়া টেন্ডেসি থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, সেটি হচ্ছে, গালে দেওয়া মানেই ওরা সেটি গিলে ফেলে না, তাই যদি ফেলত তাহলে আমাদের অজান্তে অনেক কিছুই ওদের পেটে চলে যেত, তা খুব বেশি যায় না, আবার খুব বেশি এক্সিডেন্টও হয় না।
ওরা যেটা করে- ঠিক অন্য প্রাণীদের ইনসটিংকট্ও তাই। গালে দেওয়াটা স্রেফ বিবর্তনবাদের সার্টিফিকেশন। প্রকৃতিতে প্রাণীদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খাদ্যন্বেষণ, সেক্ষেত্রে গালে দিয়ে খাদ্য কিনা যাচাই করা প্রাণীদের একটা বিশেষ ইনসটিংকট, যেটি মানব শিশুর মধ্যেও প্রাণী হিসেবে রয়ে গিয়েছে যতক্ষণ না সে সচেতন হচ্ছে।
আমার কম্পিউটার টেবিলে ছোট্ট একটি কৌটায় গোলমরিচ আছে, কীভাবে যেন কৌটাটা ওখানে চলে এসেছে। একদিন কৌটাটা নিচে পড়ে গোল মরিচ ছড়ায়ে যায়। ঈশপ সংগে সংগে একটা মুখে পোরে। যেহেতু গোলমরিচ অনেক ছোট, তাই খানিকক্ষণ নাড়াচাড়ে করে, এভাবে করতে করতে কোনো ফায়দা না হওয়ায়ে একসময় বের করে আনে।
কিছুক্ষণ পর আবার একটা মুখে দেয়, অনেকক্ষণ ধরে দাঁত দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করে সফল হয়। এরপর থেকে কৌটাটা টেবিলেই আছে, এবং ঈশপের রুটিন হচ্ছে, একটা করে গোলমরিচ মুখে পুরে দাঁত দিয়ে ভাঙা। ম্যাচের কাঠিও ও বিভিন্ন সময় গালে দিয়েছে, কিন্তু ম্যাচ দেখলেই খেতে চায় না, কারণ, ওটা খেয়ে কোনো স্বাদ পায়নি।
যাইহোক, আলোচনার বিষয় হচ্ছে, ভাষা শিক্ষা, সে বিষয়ে যাই। ঈশপের বয়স এখন ষোলো মাস প্রায়। আমার পর্যবেক্ষণ এবং আন্দাজ এখনই সে এক হাজার শব্দ বলতে পারে, এবং তা দিয়ে সে তার প্রয়োজনগুলো বলতেও পারছে, শুনে বুঝতেও পারছে অনেক কিছু।
যেমন, “দুধু খাবো”, কথাটা সে এইভাবে বলতে পারছে না, তবে বলছে, “খাবো খাবো, দুধু দুধু” অর্থাৎ শব্দগুলো সে এলোমেলোভাবে বলে যাচ্ছে, তাতে বোঝা কিন্তু যাচ্ছে। আবা শুনেও সে বুঝতে পারছে। ওকে বলা হল, নুডুলস খাবা, নাকি সুজি খাবা? ও বলল, নুডুলস্। বিষয়টা বোঝার জন্য অারো কয়েকবার জিজ্ঞেস করা হল এবং একই ফলাফল পাওয়া গেল।
টলতে টলতে কম্পিটার রুমে এসে বলে “গান গান, বাবা” মানে, বাবা, গান ছাড়ো। “ট্রেন দেখবা দেখবা ট্রেন” মানে “ট্রেন দেখব” অর্থাৎ সিনট্যাক্স না জেনেও ও শব্দ দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মাত্র বড়জোর ছয় মাসের অভ্যস্ততায়। তাহলে একটা ভাষা ওর সমান শেখার জন্য অামাদের তো এক মাসের বেশি লাগার কথা নয়, নাকি?
লাগার কথা নয়, কিন্তু লাগে। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, স্পোকেন কোর্স করে এসেও অনেকে ঈশপের সমান (বা অন্য যেকোনো শিশু) কথা বলতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে পদ্ধতিগত সমস্যা।
একটা শিশু ভাষা শিখছে প্রয়োজনের কারণে শুনে শুনে আশে পাশের বস্তু এবং বিষয়ের সাথে মিল করে। প্রয়োজনটা অবশ্য ওর বেসিক ইনসটিংকট।
আর একটা বিষয় লক্ষণীয়, একটা শিশু শিখছে প্রথমে বস্তুগত বিষয়গুলো। মা বাবা ডিম দুধ ডাল এরকম বিষয়গুলো, সাথে যাব খাব এরকম কিছু শব্দ। আমাদেও তাই করা উচিৎ।
আমি গত সপ্তাহ থেকে ঈশপের সাথে পাল্লা দিয়ে একটি নতুন ভাষা শেখা শুরু করেছি। ভাষাটি হচ্ছে স্পেনিশ। স্পেনিশ শেখা শুরু করার দুটি কারণ আছে-
১। স্পেনিশ ভাষা ইংরেজি বর্ণ ব্যবহার করে, ফলে বলা এবং শোনা শেখার পাশাপাশি পড়া এবং লেখা শেখাও হয়ে যাচ্ছে, যেটি হিন্দি ভাষার ক্ষেত্রেও সম্ভব নয়,
২। … আরেকটি কারণ বলা যাবে না।
ভাষাটি শিখছি ঠিক ঈশপ যেভাবে মাতৃভাষা শিখছে সেভাবে, যেমন, ঈশপ তাকে তাকে থাকে যে কেউ কিছু নতুন বলল কিনা। যেমন, ওরা মা আজকে জামা বানাতে গিয়েছে, দর্জি জিজ্ঞেস করেছে, আপা, লম্বা কতটুকু দেব। আরো অনেক কথা দর্জি বলেছে। কিন্তু ঈশপ শিখে নিয়েছে শুধু ‘লম্বা’ শব্দটি। এবং পথ থেকে শুরু বাসা পর্যন্ত সে শব্দটি আওড়িয়েছে।
খেয়াল করার বিষয়, দর্জি অনেক কথাই বলেছে, তবে লম্বা শব্দটিতে স্ট্রেস বেশি ছিল এবং তখন সে পায়ের কাছে ফিতে নাড়িয়েছে, ফলে ওটি ঈশপের মনে ধরেছে। অর্থাৎ, শুধু প্রয়োজন বিবেচনা নয়, শব্দের কনোটশেন এক্ষেত্রে একটি বিষয়, এবং উপকরণ; ফিতে এবং কনোটেশনের কারণেই ‘লম্বা’ শব্দটি ওর মনে ধরেছে ।
এখান থেকে শিক্ষণীয় হচ্ছে, একটি লার্নিং ইপিসোডে অনেক কিছু থাকে, তবে সেখান থেকে সবকিছু মনে রাখা যাবে না। মনে রাখতে হবে স্ট্রেসিং বিষয়গুলো, তাহলে একইসাথে অন্য অনেকগুলো বিষয় চলে আসবে।
স্পেনিশে সাবজেক্ট এবং ভার্ব শেখা বেশ কঠিন। ঈশপকে ফলো করার কারণে আমি সাবজেক্ট এবং ভার্ব শেখার দিকে যাইনি, কোনো নিয়ম কানুনের দিকেই যাইনি, তবে শিখছি ঈশপের চেয়ে দ্রুত, কারণ, ঈশপ শিখছে শুধুই অবচেতনভাবে, আর আমি শিখছি অবচেতন প্রক্রিয়াটার উপর কন্ট্রোল নিয়ে, তবে পদ্ধতিটা বদলাইনি।
# লেখাটি দিব্যেন্দু দ্বীপ -এর ওয়াল থেকে নেওয়া হয়েছে।