দরিদ্র ঘরের একমাত্র সন্তান পূজা রানী (৫)। খেলাধুলা আর হৈহুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখত সারা বাড়ি। ওই ছোট্ট শিশুটির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে প্রতিবেশী লম্পট সাইফুল ইসলামের। শিশুটিকে সে অপহরণ করে ১৮ ঘণ্টা আটকে রেখে চালায় পাশবিক নির্যাতন। সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয় শিশুটির শরীরে। নির্যাতন করা হয় মুখমণ্ডলসহ সারা শরীরে। মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ফেলে রাখা হয় বাড়ি সংলগ্ন হলুদ ক্ষেতে।
গত বুধবার শিশুটিকে উদ্ধার করে প্রথমে ল্যাম্ব মিশনারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনার হোতা পার্বতীপুর থানায় জমিরহাট তকেয়াপাড়া গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ও সিংগীমার বাদিয়াপাড়ার আফজাল কবিরাজ। তাদের বিরুদ্ধে পার্বতীপুর থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনার ৬ দিন পার হলেও মূল আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি থানা পুলিশ। শনিবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের ৯নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে অবুঝ শিশুটি। স্যালাইন চলছে তার শরীরে। মুখমণ্ডলে রয়েছে জখমের দাগ। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে দেওয়া হয়েছে সিগারেটের ছ্যাঁকা। গোপনাঙ্গের ক্ষত সারাতে চলছে চিকিৎসা। সন্তানের পাশে বসে মা রূপালী রানী শুধুই কাঁদছেন।
শিশুটির বাবা জমিরহাট তকেয়াপাড়া গ্রামের সুবাস চন্দ্র দাস ওরফে নিপাশু জানান, গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশের দোকানে চাটনি কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় তার মেয়ে পূজা। শিশুটির সন্ধানে এলাকায় মাইকিং ছাড়াও থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পর দিন বুধবার ভোররাতে বাড়ি সংলগ্ন একটি হলুদ ক্ষেত থেকে অচেতন অবস্থায় পূজাকে উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে পূজার জ্ঞান ফিরলে তার কথামতো এলাকার মৃত জহির উদ্দীনের ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে শনাক্ত করা হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক গোলাম আজম বলেন, শিশুটির ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তার গোপনাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের দাগ রয়েছে। তার গোপনাঙ্গে ম্যাগোট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন তার ড্রেসিং করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে চোখ খুলে তাকাচ্ছে শিশুটি। ঠিকমতো কথাও বলছে না। তার মধ্যে এখনও আতঙ্ক কাজ করছে। শিশুটি সুস্থ হতে সময় লাগবে।
সংবাদ: সমকাল