ধর্মাবমাননার মনগড়া খবরকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় হিন্দুদের শত শত ঘরবাড়ি ভাঙচুর লুটপাট

ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির ভাঙা হয়েছে; ভাংচুর-লুটপাট হয়েছে হিন্দুদের তিন শতাধিক ঘর।

সূত্র: বিবিসি বাংলা এবং  বিডি নিউজ

%e0%a6%98%e0%a6%b0%e0%a7%87-%e0%a6%b2%e0%a7%81%e0%a6%9f%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%9f

রোববার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত নাসিরনগরে এই তাণ্ডবের পর পাশের জেলা হবিগঞ্জের মাধবপুরেও দুটি মন্দিরে হামলা হয়েছে বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়।

এই ঘটনার পর পাশাপাশি দুটি উপজেলা সদরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিজিবি মোতায়েন করা হলেও আতঙ্ক কাটছে না বলে হিন্দু নেতারা জানিয়েছেন।

ইসলামী ঐক‌্যজোটের নেতা প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইসলামী দলগুলো বেশ সক্রিয়। এই বছরের শুরুতে এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত‌্যুকে কেন্দ্র করে তাণ্ডবে সুর সম্রাট আলাউদ্দিত খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে য্ভোবে বৌদ্ধ বসতিতে হামলা হয়েছিল, একই রকম হামলা রোববার হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে।

 

Brahmanbaria.jpg

শুক্রবার নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাসের ফেইসবুক পাতায় একটি পোস্ট নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।

ফেইসবুকে রসরাজ ‘ইসলাম অবমাননা করে’ পোস্ট দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর পুলিশ তাকে শনিবার আটক করে। আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

ওই ঘটনা নিয়ে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ ব‌্যানারে রোববার বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয় নাসিরনগর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে। হবিগঞ্জের মাধবপুরেও ডাকা হয় এক কর্মসূচি।

রসরাজের শাস্তির দাবিতে একদল মাদ্রাসা শিক্ষার্থী দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ দেখায়। আর কয়েকশ লোক সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর বলেন, অবরোধ থেকে একদল লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে নাসিরনগর সদরের দত্তবাড়ির মন্দির, নমশুদ্রপাড়া মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, ঘোষপাড়া মন্দির, গৌরমন্দির গুঁড়িয়ে দেয়।

উপজেলা সদরের দত্তপাড়া, ঘোষপাড়া, গাংকুলপাড়া পাড়া, মহাকাল পাড়া, কাশিপাড়া, নমসুদপাড়া, মালিপাড়া, শীলপাড়ায় হামলা হয়েছে।

পূজা উদযাপন পরিষদের নাসিরনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হরিপদ পোদ্দার বলেন, “১০-১৫টি মন্দিরের পাশাপাশি দেড়শ’র বেশি বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।”

এ সময় কয়েকজন পূজারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন বলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপজেলা সভাপতি আদেশ দেব জানান।

Brahmanbaria-(6).jpg

তিনি বলেন, ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি মন্দির ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত বলেন, “শত শত লোক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ফেরাতে গিয়ে এলাকার কিছু মুসলিম যুবকও আহত হয়।”

সুব্রত সরকার নামে একজন বলেন, “আমার বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই মারধর শুরু করে। মন্দিরে ভাঙচুরের পাশাপাশি তারা মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।”

প্রদীপ দাস নামে একজন বলেন, তার ভাই মানিক দাসের একমাত্র সম্বল মাছ ধরার জালটিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান জানান।

স্থানীয়রা জানায়, হামলাকারীদের বেশিরভাগই যুবক বয়সের এবং তাদের পরনে ছিল প্যান্ট-শার্ট।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। পরে অন্যান্য বাহিনীও যোগ দেয়।

সংবাদ: বিডিনিউজ।