যতকথাই বলি না কেন, যতভাবেই অলংকৃত করি না কেন প্রেমের আদীম অংশটুকুই শুধু শ্রেষ্ঠ এবং মৌলিক। সত্যের দিকে ধাবিত হওয়ার চেয়ে নিষ্পাপ কিছু আর নেই, মাঝে মাঝে তা কুৎসিত মনে হলেও। প্রেমের মৌলিক অংশ, সর্বাধিক প্রভাবশালী অংশটুকু শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে অন্ধকারে মানুষ বিকৃত হবে, জীবনের সহজিয়া অংশের মধ্যেও সে দুর্বোধ্যতার বেড়াজালে ঘুরপাক খাবে, জীবনের সিংহভাগ অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হবে। খনিতে ভালবেসেই মানুষ মাটি খোড়ে, তবে মাটি পেতে নয়, গহীন থেকে সে স্বর্ণ তুলে আনতে চায়। মাটি খুড়তে হয়, কিন্তু পেতে হয় স্বর্ণ। মানুষকে শুধু খোড়াখুড়ি মধ্যে রাখলে হবে না, কাঙ্খিত লক্ষ্যে মানুষ পৌঁছাক, তা যেমন প্রেমের ক্ষেত্রে তেমনি জীবনের সর্বক্ষেত্রেই। প্রেম তেমনই হয় ঠিক মানুষ যেমন, প্রেম থেকে প্রাণীজ সত্তা বাদ পড়তে পারে না, মানুষকে সত্তার বিপরীতে ধাবিত করার মধ্যে মনুষ্যত্ব খোঁজা সভ্যতার অগ্রসরতা নয় মোটেও। ভয় বা ভণিতা থেকে আমরা যতই বলি না কেন নিষ্কাম প্রেমই সর্বোৎকৃষ্ঠ প্রেম, কোনোভাবেই তা সত্য নয়। নিষ্কাম প্রেম প্রেমই নয় আসলে, বাদামের খোসা মাত্র। প্রেম অবশ্যই কামনার, হিংসার, প্রতারণার। প্রতারণা এবং বিদ্বেষপূর্ণ প্রেমের চেয়ে সত্য কোনো প্রেম নেই। ‘প্রিয়তমা, আমায় ভুলিয়ে রেখো না শুধু’ বইটিতে কবিতার ছদ্মবেশে প্রেমিক এবং প্রেমিকার মনস্তত্ত্বের ব্যবচ্ছেদ রয়েছে। প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরের কাছে সৎ হতে গেলে সত্যগুলো জানতে হয়, জানার এবং বলার সাহস থাকতে হয়। অনাচার আর অনিবার্য বিচ্যুতি এক নয়, এটা বোঝা খুব সহজও নয়। যে জ্ঞান এবং উপলব্ধির ওপর প্রেমের মাধুর্য প্রতিষ্ঠিত তা সবার থাকে না বলেই বিপদ হয়। মনটা বিশাল হলে, অন্তরের খবর জানলে, আপন সত্য সকলের সত্য মানলে পৃথিবী প্রেমময় হতে বাধা কিছু নেই। ‘প্রিয়তমা, আমায় ভুলিয়ে রেখো না শুধু’ বইটির কবিতাগুলো পাঠকের মন ভরাবে, হৃদয় জাগাবে, আবশ্যিক দ্বন্দ্বেও ফেলবে সত্যি।