সাম্প্রদায়িকতা ব্যাপারটাকে সবসময় ধর্ম এবং জাতিগত সম্প্রদায়ের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়। সাম্প্রদায়িকতা আসলে কি শুধু জাতিতে জাতিতে বা ধর্মে ধর্মে? একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথাই ধরা যাক— সেখানে শিক্ষকরা একটি সম্প্রদায় এবং শিক্ষার্থীরা আরেকটি সম্প্রদায়। এক্ষেত্রে স্বার্থদ্বন্দ্ব বা অহমিকার প্রতিযোগিতা সুস্পষ্ট নয় বলে সাম্প্রদায়িক সংঘাত অনেক কম। তারপরও একেবারে যে নেই সেকথা বলা যাবে না।
কিন্তু কারখানার ক্ষেত্রে কী হয়? সেখানে মালিকেরা একটি সম্প্রদায়, শ্রমিকেরা আরেকটি সম্প্রদায়। স্বার্থদ্বন্দ্ব সুস্পষ্ট বলে প্রায়ই সেখানে সংঘাত হয়। শক্তিশালী কারা? মালিকরাই কিন্তু। তাহলে কি সংখ্যা জিতলো? সাংবাদিকেরা একটি সম্প্রদায়, ব্যবসায়ীরা একটি সম্প্রদায়— এরকম অনেক সম্প্রদায় রয়েছে। তবে সব সম্প্রদায়ের সরাসরি এবং স্থায়ী কোনো প্রতিপক্ষ নেই।
জাতিগত সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে স্থায়ী প্রতিপক্ষ থাকায় (মানসিকভাবে) এটি বেশি আলোচিত হয়। সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে সংখ্যার লঘুত্ব এবং গুরুত্ব বিবেচনার বিষয়। ধরে নেওয়া হয় যে, সংখ্যায় বেশি হলে তারা শক্তিশালী। এটি আসলে শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া একটি তত্ত্ব। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এ হিসেবটি খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু আসলে কি সংখ্যায় বেশি হলে তারা শক্তিশালী হয়?
একটি অফিসে, ধরা যাক— ব্যাংকের একটি শাখায়, সেখানে ম্যানেজার সবচেয়ে শক্তিশালী কীভাবে? ১. বিধিবদ্ধভাবে; এবং ২. মনস্তাত্বিকভাবে। দেখা যায়— আইন বা বিধির প্রয়োগ খুব একটা প্রয়োজন হয় না, অনেক ক্ষেত্রে সেটি সম্ভবও নয়; মনস্তাত্বিকভাবেই কারো অবস্থানের কারণে তার কাছে আমরা নতি স্বীকার করি। যদি না করি সেক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের সুযোগ তার রয়েছে যেহেতু। আইনটা অনেক সময় আমরা ভুলে যাই, একটা ইনবিল্ট মনস্তত্ব তৈরি হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানে এবং সমাজে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরা যাক— এখানে সংখ্যাগুরু কারা? সংখ্যার বিচারে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সংখ্যা দিয়ে বিচার করা এক্ষেত্রে কি ঠিক হবে? বিচার করতে হবে শক্তির বিচারে— পদ-পদবীর বিচারে। একশোজন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে থানায় গেলে পুলিশ আসবে না, আসবে? প্রভোস্টের অুনমতি না নিয়ে পুলিশ হল-এ ঢুকবে? কিন্তু প্রভোস্ট ফোন করার সাথে সাথে পুলিশ চলে আসবে। তাই না? কোনো ছাত্র বা ছাত্রীকে ধরিয়ে দিলে কোনো অনুসন্ধান ছাড়াই প্রাথমিকভাবে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাবে। যাবে কিনা?
ডাক্তার এবং রোগী দিয়ে উদাহরণটি দিলে আরো সুস্পষ্ট হবে। নিঃসন্দেহে সংখ্যার বিচারে রোগীরা সংখ্যাগরিষ্ট। আসলে কি তারা শক্তিশালী? ডাক্তারদের অবস্থান এবং শক্তি বিচারে ডাক্তাররাই তাহলে গরিষ্ট, নাকি? অর্থাৎ বর্তমান সময়ে ব্যাক্তির অবস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। চেয়ারগুলোই এখন শক্তি। একটি চেয়ারের কাছে লক্ষ জনতাও কিছু না। (আবার বঙ্গবন্ধুর মতো একজন জনতার কাছে লক্ষ চেয়ারও কিছু না।) সমস্যা হচ্ছে— সেই চেয়ারগুলো যদি কিছু বিবেকহীন মানুষের দখলে থাকে তাহলে সেই জাতির কষ্টের আর সীমা থাকে না। থাকছেও না।