মানুষ স্বভাবতই নিজের সন্তান ব্যতীত আর কাউকে তার উপরে দেখতে চায় না। একান্ত বাধ্য না হলে সে কাউকে উপরে স্থান দিতে রাজি নয়। বাঁচার তাগিদে মানুষ বাধ্য হয় অন্যের বাড়তি ক্ষমতা মেনে নিতে। মন থেকে মেনে নেয় এমন নজির খুব কম। এটা হয়ত মেনে নেয় যে- তার নিজের সামার্থ কারো চেয়ে কম, তাই বলে সে নিজের অবস্থান নিচে মানতে নারাজ।
এজন্য কিছু উপায়ও সে বাতলে নিয়েছে- যেমন: ঈশ্বরের দোহাই এক্ষেত্রেও খুব কাজে আসে। “সবই ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়” বলার সাথে সাথে সফল মানুষের পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং মেধার গুরুত্ব খর্ব হয়। ঈশ্বরের দোহাই ব্যর্থদের জন্য বুমেরাংও হয়েছে, কারণ, সফল মানুষটাও তার অবৈধ সফলতার একটা মোক্ষম অজুহাত খুঁজে পায়, বলতে পারে- “ঈশ্বর আমাকে এ অবস্থানে এনেছেন”। মনে রাখতে হবে- সবার সফলতা বৈধ পথে নয়।
এটা হয়ত ঠিক যে মেধার সাথে বংশগতির সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু এটাও তো ঠিক- মানুষের বেড়ে ওঠার সাথে, এবং সুযোগ-সুবিধা পাওয়া না পাওয়ার সাথে সফলতা-বিফলতা সবচেয়ে বেশি সম্পর্কিত। সবাই-ই কোনো না কোনো জায়গায় স্পেশাল। নিজের স্পেশাল জায়গাটি আবিষ্কার করার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা, তবে শুধু শিক্ষাই কিন্তু পথ বাতলে দেয় না, প্রয়োজন সুশিক্ষা এবং সৃজনশীল ও ইতিবাচক একটা পরিবেশ।
একটি জাতি যত বেশি শিক্ষিত হয় সেখানে ব্যক্তিত্বের সংঘাত তত বাড়ে, যৌক্তিক সংঘাতে সমাজের লাভই হয়। শিক্ষিত হলে হিংসা যে কমে তা নয়, বরং হিংসা বাড়ে, একই সাথে হিংসা চেপে রাখার ক্ষমতাও বাড়ে, তবে এই হিংসা থেকে হানাহানি জন্ম নেয় না, জন্ম নেয় স্বতন্ত্রবাদ। স্বতন্ত্রবাদে সবাই নিজ জায়গাটি খুঁজে নিতে চায়, এতে সমাজ উন্নত হয়।
শিক্ষিত হওয়া মানে নিজেকে এবং অন্যকে বুঝতে পারা, নিজেকে বুঝতে পারলেই অন্যকে বুঝতে পারা যায় অনেকাংশে। মানুষ খুব কাছাকাছি, কমন বিষয়গুলোতেই সংঘাত হয় বেশি, তাই নিজেকে বুঝতে পারলে অন্যকে ডিফেন্ড করা অনেক সহজ হয়। এটা বুঝতে হবে যে, যে যাই বলুক, আসল কথা হচ্ছে, আপনাকে বোকা প্রমাণ করতে এবং ব্যর্থ দেখতেই সকলে, বিশেষ করে চারপাশের মানুষে বেশি আগ্রহী। মানুষের সে ইচ্ছের গুড়ে বালি ঢেলে দেওয়াটাই এই জীবনে আপনার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
তাই বলে মানুষকে ভুল বুঝবেন না, খারাপ জানবেন না, এই মানুষই বিপদে আপনার পাশে দাঁড়ায়। দেখুন, জীবনটাও একটা খেলার মাঠ, প্রতিযোগিতা, স্কুলের দৌঁড় প্রতিযোগিতায় বন্ধুর সাথে দৌঁড়ে আপানি কি জিততে চাননি? চাননি বন্ধু পিছিয়ে পড়ুক? জীবনটাও সেরকম। ভীষণ প্রতিযোগিতা আছে বলেই সমাজ এতো দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, নইলে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কিছুই আমরা আজকে পেতাম না। এই প্রতিযোগিতাটা মেনে নিতে হবে। মানুষকে ভালবাসতে হবে, এবং মানুষকে ভালবাসতে হবে মানুষের বৈশিষ্ট মেনে নিয়ে।