বছর পেরোলেও লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়ের খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রতি খেদ প্রকাশ করেছেন তার বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।
অজয় রায় প্রশ্ন রেখেছেন, গোয়েন্দা বিভাগ থেকে তাকে অভিজিতের খুনিদের শনাক্ত করার কথা বলা হলেও একজনও গ্রেপ্তার না হওয়ার কী রহস্য?
শনিবার বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ড. মো. আনোয়ার হোসেন রচিত ‘অনন্ত আমরা চুপ থাকবো না’ বইয়ের পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
অধ্যাপক অজয় বলেন, “গোয়েন্দা বিভাগ থেকে আমাকে বলা হয়েছে, ‘অভিজিতের তিন জন হত্যাকারী নজরদারিতে রয়েছে’।
“তখন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নজরদারি মানে কী? নজরদারি না করে গ্রেপ্তার করছেন না কেন? তারা উত্তর দিতে পারেননি।”ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারের একটি বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এখন বলা হচ্ছে, অভিজিতের হত্যাকারীরা দেশত্যাগ করেছেন। তাহলে আপনারা কীসের ঘোড়ার ডিমের নজরদারি করেছেন?”
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিৎ রায় ছিলেন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা। গত বছর বইমেলা চলাকালে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে দেশে ফিরে ২৬ ফেব্রুয়ারি খুন হন তিনি।
বইমেলা থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন অভিজিৎ। তার স্ত্রী বন্যাও সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান।
একের পর এক হত্যাকাণ্ড মুখ বন্ধ করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন অজয় রায়।
“আমি চুপ হয়ে গেছি। আমাকে চুপ করা হয়েছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর আমি চুপ হয়ে গেছি। এক সময় আমি কথা বলতাম। প্রতিবাদে মুখর থাকতাম। এখন আমি চুপ হয়ে গেছি।”
পুলিশের আইজিপির পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, “তারা টার্গেট করে হত্যা করে যাচ্ছে। জঙ্গিরা টার্গেট তালিকা দিয়েছে। আপনারা রক্ষা করতে পারছেন না। এই ব্যর্থতা নিয়ে পুলিশের আইজিপির পদত্যাগ করা উচিত। আজই তার পদত্যাগ করা উচিত।
“হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে নৈতিক জায়গা থেকে পুলিশের আইজিকে পদত্যাগ করা উচিত।”
গুপ্ত হত্যাকারীরা দানব অ্যাখ্যয়িত করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “গুপ্ত হত্যাকারীরা দানব। এই দানবদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে হবে। সবাই মিলেই প্রতিহত করতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে কাজ করছে।”স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘অনন্ত আমরা চুপ থাকব না’ বইটির প্রকাশক সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাবেক সচিব রনজিত কুমার বিশ্বাস, সাংবাদিক ইমতিয়াজ শামীম প্রমুখ।
সূত্র: বিডিনিউজ২৪.কম