তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক পেজ থেকে

images


Uni

12 hrs ·
আফগান মেয়েটির নাম রেজা গুল. সাত ঘন্টার বন্দুক যুদ্ধে সে ২৫ টা তালিবান মেরেছে , ৫ টাকে আহত করেছে. তার ছেলেকে মেরে ফেলার প্রতিশোধ নিল সে. তালিবান নির্মূল করতে বিশ্বের বড় বড় মিলিটারি শক্তি বছরের পর বছর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে. অস্ত্র আফগান মেয়েদের দিয়ে দাও, ওরাই পারবে আফগানিস্তানকে তালিবান মুক্ত করতে.

November 26 at 4:31am · Edited ·

আমি বুঝি না বাংলাদেশে কী কারণে মৌলবাদীদের আলাদা করে আন্দোলন দরকার.
মৌলবাদীরা যা করতে চায়, তা তো অন্যরাই করে দিচ্ছে, স্বতস্ফুর্ত ভাবে মৌলবাদীদের মতই আচরণ করছে সর্বস্তরের লোক. সরকার করছে, বিরোধী দল করছে, আইনজীবিরা করছে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা করছে,মিডিয়ার লোকেরা করছে, সাধারণ জনগণ করছে.
মৌলবাদীরা চেয়েছিল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করা হোক, তাকে জুতো মারা হোক, তাই করেছে সরকার এবং আইনজীবিরা. মৌলবাদীরা চেয়েছে জনগণ ঘৃণা করুক লতিফ সিদ্দিকীকে, জনগণ ঘৃণা করছে তাকে. মৌলবাদীদের এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও চলে. ওদের কাজ গুলো করার জন্য দেশের ষোলো কোটি লোক আছে.

November 25 at 1:14am · Edited ·

আমার মনে হয় না লতিফ সিদ্দিকীকে খুব বেশি হেনস্থা করা হবে। সরকার লোক দেখানো কোনো হেনস্থার আয়োজন হয়ত করবে, কিন্তু নতুন কোনো ঘটনা এসে লতিফ সিদ্দিকীর ঘটনাকে আড়াল করে দেবে। যতই হোক পুরুষ তো, তার ওপর এই কিছুদিন আগেও ক্ষমতায় ছিলেন।

হেনস্থা করবে আমাকে, যদি দেশে ফিরি। জামাতিরা জবাই করবে, হেফাজতিরা টুকরো টুকরো করে কাটবে, জনগণ ঢিল ছুঁড়বে, গণপিটুনি দেবে, সরকার গুন্ডা লেলিয়ে আমাকে খুন করবে।

লতিফ সিদ্দিকীকে দেশে ফিরতে দেওয়া হয়, আমাকে কিন্তু ফিরতে দেওয়া হয় না। বিশ বছর আগে মৌলবাদীরা মিছিল করতো আমার বিরুদ্ধে {মিছিলের বেশির ভাগই জানতো না কেন মিছিল করতো}। এখনও তারা রাগ পুষে রেখেছে! আর এই সেদিন আবদুল্লাহর পুত্রকে আবদুল্লাহর পুত্র বলে বা ডাকাতকে ডাকাত বলে জাতির ধর্মানুভূতিতে যে ভীষণ একখানা ঘা দিয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী, তার ক্ষত এত তাড়াতাড়ি শুকোলো কী করে!

November 24 at 4:31am ·

এক অপ্রেমিকের জন্য

এই শহরেই তুমি বাস করবে, কাজে অকাজে দৌড়োবে এদিক ওদিক
কোথাও আড্ডা দেবে অবসরে, মদ খাবে, তুমুল হৈ চৈ করবে,
রাত ঘুমিয়ে যাবে, তুমি ঘুমোবে না।
ফাঁক পেলে কোনও কোনও সন্ধেয় এ বাড়ি ও বাড়ি খেতে যাবে, খেলতে যাবে,
কে জানে হয়তো খুলতেই যাবে আলগোছে কারও শাড়ি
আমার আঙিনা পেরিয়েই কোনও বাড়িতেই হয়তো।
এ পাড়াতেই হয়তো দু’বেলা হাঁটাহাঁটি করবে, হাতের নাগালেই থাকবে,
হয়তো কখনও জানিয়েও দেবে আমাকে, যে, কাছেই আছো,
কুঁকড়ে যেতে থাকবো, কুচি কুচি করে নিজেকে কাটতে থাকবো
দেখা না হওয়ার যণ্ত্রণায়, তবু বলবো না, এসো। বলবো না,
তোমাকে সুযোগ দেব না বলার যে তোমার সময় নেই, বা ভীষণ ব্যস্ত তুমি ইদানিং
তোমার অপ্রেম থেকে নিজেকে বাঁচাবো আমি।
তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে না।

বছর পেরোবে, তোমার সঙ্গে দেখা হবে না আমার,
দেখা না হতে না হতে ভুলতে থাকবো তোমার সঙ্গে দেখা হওয়াটা ঠিক কেমন ছিল
কী রঙের সার্ট পরতে তুমি, হাসলে তোমাকে ঠিক কেমন দেখাতো,
কথা বলার সময় নখ খুঁটতে, চোখের দিকে নাকি অন্য কোথাও তাকাতে,
পা নাড়তে, ঘন ঘন চেয়ার ছেড়ে উঠতে, জল খেতে কিনা, ভুলতে থাকবো।
দেখা না হতে না হতে ভুলতে থাকবো তুমি ঠিক দেখতে কেমন ছিলে,
তিলগুলো মুখের ঠিক কোথায় কোথায় ছিল, অথবা আদৌ ছিল কিনা।
তোমার চুমু খাওয়াগুলো ঠিক কেমন, জড়িয়ে পেঁচিয়ে চুলে বা বুকে মুখ গোঁজাগুলো
ঠিক কেমন, ভুলতে থাকবো।

অনেকগুলো বছর পেরিয়ে যাবে, তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না।
এক শহরেই, অথচ দেখা হবে না।
পথ ভুলেও কেউ কারও পথের দিকে হাঁটবো না,
আমাদের অসুখ বিসুখ হবে, দেখা হবে না।
কোনও রাস্তার মোড়ে কিংবা পেট্রোল পাম্পে কিংবা মাছের দোকানে, বইমেলায়, রেস্তোরাঁয়, কোথাও দেখা হবে না।

আরও অনেকগুলো বছর পর, ভেবে রেখেছি, যেদিন হুড়মুড় করে
এক ঝাঁক আলো নিয়ে সন্ধে ঢুকতে থাকবে আমার নির্জন ঘরে,
যেদিন বারান্দায় দাঁড়ালে আমার আঁচল উড়িয়ে নিতে থাকবে বুনো বৈশাখি
এক আকাশ চাঁদের সঙ্গে কথা বলবো যে রাতে সারারাত–
তোমাকে মনে মনে বলবোই সেদিন, কী এমন হয় দেখা না হলে,
দেখা না হলে মনে হতো বুঝি বেঁচে থাকা যায় না,
কে বলেছে যায় না, দেখ, দিব্যি যায়!
তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি কয়েক হাজার বছর, তাই বলে কি আর বেঁচে ছিলাম না?
দিব্যি ছিলাম!
ভেবেছি বলবো,
তুমি তো আসলে একটা কিছুই-না ধরনের কিছু,
আমার আকাংখা দিয়ে এঁকেছিলাম তোমাকে,
আমার আকাংখা দিয়ে তোমাকে প্রেমিক করেছিলাম,
আমার আকাংখা দিয়ে তোমাকে অপ্রেমিকও করেছি
তোমাকে না দেখে লক্ষ বছরও বেঁচে থাকতে পারি!
অপ্রেমিককে না ছুঁয়ে, অনন্তকাল।
এক ফোঁটা চোখের জল বর্ষার জলের মতো ঝরে ধুয়ে দিতে পারে
এতকালের আঁকা সবগুলো ছবি, তোমার নাম ধাম দ্রুত মুছে দিতে পারে চোখের জল।
তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।

আমাকে একা বলে ভেবো না কখনো, তোমার অপ্রেম আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে।