ব্যাংকের উচিৎ বিনা জামানতে শুধু ভোটার আইডি কার্ড রেখে, ঠিকানা যাচাই করে এক হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যক্তিকে লোন দেওয়া। এটার নাম হতে পারে ‘আপৎকালীন সেবা’।
মানুষ শুধু উন্নতি করার জন্য লোন নেবে তা হয় না, অনেক সময় টিকে থাকার জন্য বা চরম বিপদ থেকে উত্তরণের জন্যও লোন প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে ব্যাংক পাশে দাঁড়াবে না?
মানুষ সমিতি থেকে বা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে (বছরে ৫০ থেকে ১২০%) ঋণ নেয় কিন্তু সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য, উন্নতির জন্য নয়।
এছাড়া এর একটা সামাজিক দিকও আছে। অনেক শক্তিশালী-মানবিক মানুষ সমাজে রয়েছে, যাদের ঠাট বজায় রেখে চলাটা খুব জরুরী। কিন্তু এই মানুষগুলো অনেক সময় মারাত্মক টাকার সমস্যায় পড়ে যায়।
শুধু এই মানুষগুলো নয়, সব মানুষের জন্যই এটা সত্য-
কেউ যদি এক হাজার টাকা তার বন্ধু, আত্মীয় বা পরিচিত জনের কাছ থেকে ধার করতে বাধ্য হয়, তাহলে তারা জেনে গেল যে এই মানুষটার মাত্র এক হাজার টাকা হাতে নেই। সেক্ষেত্রে বর্তমানে বাজারমুখী দৃষ্টিভঙ্গীতে মানুষটাকে একেবারেই হালকাচালে রাখবে ধারদাতা মানুষটি। সম্ভাবনা আছে, বিষয়টি সে অনেককে বলে বেড়াবে।
এটা তো অনেক গভীর বিষয়। শুধু সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্যই ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিৎ।
ধরুণ, একজন রিক্সালার ব্যাংক একাউন্ট আছে। দেখা গেল, সে কিছুদিন একাউন্টটিতে সামান্য কিছু টাকা রাখলেও কনটিনিউ করতে পারল না। কারেন্ট একাউন্ট হলে শেষ সামান্য টাকাটি সে আর পাবে না (প্রাইভেট ব্যাংকের ক্ষেত্রে অন্তত এক থেকে দুই হাজার টাকা), সেভিংস একাউন্টের ক্ষেত্রেও পায় না, এটা অবশ্যই ব্যাংক অন্যায় করে। ব্যাংকের একটি বড় আয় কিন্তু এরকম একাউন্টগুলো।
তাহলে এরকম একটা ব্যবস্থা কেন থাকবে যে একাউন্ট মাইনাসও হতে পারে। অন্তত কারেন্ট একাউন্টে এই সুবিধাটা থাকা উচিৎ। অর্থাৎ, কারেন্ট একাউন্টে কেউ চাইলে ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে পারবে।
তাছাড়া বিষয়টির একটা নীতিগত দিকও আছে। যেহেতু কারেন্ট একাউন্ট কোনো ইন্টারেস্ট দেয় না, কিন্তু ব্যাংক সঞ্চয়কারীর টাকা ব্যবহার করে এবং সেখান থেকে লাভ করে (অনেক, এখনই তো স্প্রেড বোধহয় ৫%-এর উপরে), তাহলে সঞ্চয়কারীর বিপদে কেন ব্যাংক নির্দিষ্ট মেয়াদে (হতে পারে এক থেনে তিন মাসের জন্য) টাকা ধার দিবে না?
গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ব্যাংক থেকে টাকা ধার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারলে সবাইকে ব্যাংকের আওতায় আনা সম্ভব হবে, তাতে অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে। মানুষ সামাজিকভাবে হেনস্থার শিকারও কম হবে। কারণ, ব্যাংক তো আর বলে বেড়াবে না যে অমুক টাকা ধার নিয়েছে।