ওয়ারেন বাফেট পৃথিবীর দ্বিতীয় ধনী লোক। কিন্তু তিনি আসলে কতটুকু ধনী? একটি তথ্য দিয়ে হয়তো আমরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারি। যদি বলি যে পৃথিবীর মাত্র ৬৭ টি দেশের জিডিপি ওয়ারেন বাফেট এর বার্ষিক আয়ের চেয়ে বেশি? কিংবা যদি বলি যে বাংলাদেশের জিডিপি ২০১৩ সালে ছিল ১৫০ বিলিয়ন ডলার যেখানে ওয়ারেন বাফেট একাই উপার্জন করেন বছরে ৭৩ বিলিয়ন ডলার? একা একজন মানুষ একটি ১৮ কোটির দেশের মানুষের অর্ধেক উপার্জন করেন কথাটা আসলে যতটা সহজ শুনতে ঠিক ততটা সহজে বোধগম্য নয়।
বিনিয়োগ ব্যবসায় অসাধারণ বিশ্লেষণী শক্তির অধিকারী ওয়ারেন বাফেট তাবৎ দুনিয়ার কাছে বিস্ময় মানব হিসেবেই স্বীকৃত। যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই যেন সোনা ফলিয়েছেন। ব্যক্তিজীবনে অনুকরণীয় আদর্শের অধিকারী এই ব্যবসায়ী একজন বিদ্বান, সৎ পরামর্শদাতা হিসেবে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে স্বীকৃত। বিল গেটস তার কাছে নিয়মিত বুদ্ধি পরামর্শের শরণাপন্ন হন। কোন বই পড়তে হবে, কোন ধরনের ব্যবসায়িক বুদ্ধি খাটাতে হবে —এইসব ব্যাপারে ওয়ারেন বাফেট বিল গেটস এর গুরুস্থানীয়।
শুনি তবে এই প্রাজ্ঞ ব্যক্তি নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য তার ঝুলি থেকে কী কী অমীয়বাণী আমাদের জন্য দিয়েছেন। খুবই সহজ কয়টি কথা হয়তো; কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন যাদের অন্তরে বাসা বেঁধেছে তাদের কাছে এই কথাগুলোই হয়তো কাজ করবে টনিকের মতো।
নিজের ওপর বিনিয়োগ করুন
কোনো ব্যবসা অথবা উদ্যোগে বিনিয়োগ করার আগে আপনি নিজের ওপর বিনিয়োগ করুন। সবাই আপনাকে বলবে অমুক ব্যবসা অথবা তমুক উদ্যোগে বিনিয়োগ করো। কিন্তু সেই বিনিয়োগ আসলে ক্ষণস্থায়ী। নিজের ওপরে যে বিনিয়োগ সেটি কখনো বৃথা যায় না। ইন্টারনেট প্রযুক্তির এই মহোৎসবে সব ধরনের প্রযুক্তি আপনার জানার ও বোঝার নাগালে। আপনি চাইলেই যেকোনো বিষয়ে আগ্রহ নিয়ে শুরু করতে পারেন। আর নিজেকে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ রাখুন। আধুনিক বিশ্বে কোথায় কীভাবে কী হচ্ছে তার ওপর আপনার পরবর্তী বিনিয়োগের সাফল্য অনেক খানিই নির্ভরশীল।
বাজে অভ্যাস ঝেড়ে ফেলুন এখনই
বাফেট যেকোনো বাজে খরচ কিংবা বদভ্যাস পরিহারের ওপর প্রচুর জোর দেন। খরচ করার আগে অবশ্যই উপার্জন করা উচিৎ। ক্রেডিট কার্ড ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানো উচিৎ আমাদের সবার। দিনশেষে আপনার ব্যবসার যেই টাকাটা আপনি বাঁচাতে পারেন তা আপনার বিনিয়োগেরই অংশ। আমেরিকার মতো পুঁজিবাদী দেশে ক্রেডিট কার্ড সংস্কৃতি বহুল চর্চিত। আর ক্রেডিট কার্ডের খপ্পরে পড়ে খরুচে হওয়া এখানে খুবই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তরুণদের প্রতি বাফেটের উপদেশ— তারা যাতে এই ক্রেডিট কার্ডের চক্কর থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন।
সততাই শক্তি
বাফেট আমাদেরকে যথাসম্ভব বিনয়ী হতে বলেন। আমাদের জীবনটাই অনৈতিকতা, অসততা ও অন্যায়ের পাকেচক্রে জড়ানো। পদে পদে এইসব বাধা অতিক্রম করে নিজের লক্ষ্যে সৎ থাকাটাই এখানে এক অসম্ভব ব্যাপার। বাফেট নিজেও ব্যক্তিজীবনে সততার প্রতিচ্ছবি। উদারতা তার অন্যতম গুণ। আর যেকোনো উদ্যোক্তাকে তিনি বারংবার উদ্যোক্তা হতে বলেছেন। একই উপদেশ তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী বিল গেটসকেও দেন।
হেলায় হারানো নয় কোনো সুযোগ
জীবনের কিছু কিছু মুহুর্তই আসলে আমাদের সামনের জীবন চাকার গতি ঠিক করে দেয়। এ ধরনের সুযোগ সবার জীবনেই কখনো না কখনো আসে। সেই সুযোগের নৌকায় যারা চড়ে বসতে পারেন তাদের গল্পই আমরা পড়ি সাফল্যের বইয়ে। এইজন্যে চাই নিজের ব্যবসাটাকে ভালোভাবে আত্মস্থ করা। যত বেশী সময় আপনি এর পিছনে দিবেন এর আশেপাশের সব সুযোগগুলো আপনার কাছে অনুধাবন করা সহজ হবে। আর সততা ও বুদ্ধিমত্তা আপনাকে সব সময়ই কখনো না কখনো স্বর্ণালী সুযোগের সামনে দাড় করিয়ে দিবে।
সময়ের অপচয়? আর নয়
স্কুলের বইয়ে কতবারই সময়ানুবর্তিতার গল্পগুলো পড়েছি; কিন্তু সেগুলোকে শুধু পরীক্ষা পাশের উপায় বলেই জেনেছি। ওয়ারেন বাফেট আমাদের জানান সত্যিকার অর্থেই জীবনের সময়ের কত উপযোগিতা। বাফেট এর কাছে সময় টাকার মতোই মূল্যবান। তার সাফল্যের মূলমন্ত্র হল সময়ের সঠিক ব্যবহার। সবার হাতেই তো ২৪ ঘন্টা সময়। এর সঠিক ব্যবহার যিনি করতে পারবেন তিনিই তো এগিয়ে যাবেন।
জীবনে চাই গুরু
ওয়ারেন বাফেটকে সারা দুনিয়ার বিনিয়োগকারীরা গুরু মানেন । অথচ সেই ওয়ারেন বাফেট নিজেই বলেন যে, এমন কোনো ব্যক্তিকে আদর্শ মানতে যার পথ ধরে নিজেকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেওয়া যাবে। হতে পারে কোনো বই আপনার আইডল; অথবা হতে পারে কোনো চলচ্চিত্র। আর এমন কাউকে/কিছুকে আপনার আইডল হিসেবে নির্বাচন করুন যার কথা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে। যার চিন্তা আপনার চিন্তাকে শাণিত করবে। উপদেষ্টা বলুন, গাইড বলুন কিংবা পথপ্রদর্শক বলুন সবার জীবনেই চাই এমনি একজন ধ্রুবতারা।
এই কথাগুলো আমাদের কাছে মনে হতে পারে খুবই সাধারণ কিংবা দৈনন্দিন। কিন্তু এই সহজ কথা কয়টিকেই যদি বাফেট এর মতো সফল একজন লোক নিজের জীবনে প্রয়োগ ঘটিয়ে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছুতে পারেন, তবে আমাদের ও স্বপ্ন দেখার অবকাশ আছে বৈকি।