বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংক যেমন নিরাপদ, এজেন্ট ব্যাংকিংও নিরাপদ, তবে এক্ষেত্রে প্রতিটি কার্যক্রমের দলির যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
ব্যাংকের শাখা নেই এমন এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ব্যাংকের শাখা করা সম্ভব নয়, বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে স্বল্প ব্যয়ে সীমিত আকারে আর্থিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ‘এজেন্ট ব্যাংকিং’ চালুর করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে সাফল্য লাভ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে নতুন এই আর্থিক সেবা চালুর উদ্যোগ নেয় মূলত বিভিন্ন দেশের সাফল্য বিবেচনায় নিয়ে। প্রস্তাবিত এ সেবার নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কে্ন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নীতিমালা রয়েছে।
২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর পল্লী একালাগুলোতে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিধিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি ২০১৪ এক সার্কুলার জারি করে গ্রামের পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়।
এজেন্ট ব্যাংকিং-এর সারসংক্ষেপ:
এজেন্ট ব্যাংকিং কী: কোনো ব্যাংক যদি পল্লী এলাকায় বা ব্যাংকের শাখা নেই এমন এলাকায় এজেন্ট নিয়োগ করে ভোক্তাদের বিশেষ কিছু সুবিধা দিতে উদ্যোগী হয় সেটিই এজেন্ট ব্যাংকিং।
যে সকল ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম আছে: অগ্রণী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, আল আরাফাহ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক সহ আরো কয়েকটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং পরিসেবা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত ১২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিয়েছে: অগ্রণী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, স্টান্ডার্ড ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংক। তবে সব ব্যাংক এখনো সফলভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে না।
গ্রাহকরা যে সকল সুবিধা পায়:
* একাউন্ট খোলার ফরম প্রক্রিয়াকরণ করা যায়, তবে চূড়ান্তভাবে একাউন্ট খোলা যায় না;
* অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেয়া ও উত্তোলন সুবিধা পাওয়া যায়;
* অর্থ স্থানান্তর করা যায়;
* বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্সের অর্থ তোলা যায়;
* অনেক ক্ষেত্রে ছোট আকারের ঋণ বিতরণ ও ঋণের কিস্তি আদায় করতে পারে;
* বিদ্যুৎ ও অন্যান্য ইউটিলিটি বিল পরিশোধের সেবা রয়েছে।
এজেন্টদের এখতিয়ার নেই:
* এজেন্টের মাধমে ব্যাংক হিসাব খোলা যায় না;
* একাউন্ট খোলার জন্য নির্দিষ্ট ব্যাংকের কাছের কোনো শাখায় যেতে হবে;
* এজেন্ট কোনো চেক বই বা কোনো ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না;
* এজেন্ট বিদেশি মুদ্রাসংক্রান্ত কোনো লেনদেন করতে পারে না;
* এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেক ভাঙানো যায় না।
কারা এজেন্ট হতে পারবে: কোম্পানি আইনের আওতায় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিনিধি, আইটিভিত্তিক আর্থিক সেবা দিতে সক্ষম প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি, ফার্মেসি মালিক, চেইন শপ, পেট্রোল পাম্প বা গ্যাস স্টেশনের মালিক, এমআরএর অধীনে অনুমোদন পাওয়া এনজিও, কো-অপারেটিভ সোসাইটির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কুরিয়ার, ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র এজেন্ট হতে পারে।
এজেন্ট ব্যাংকিং কি নিরাপদ: অবশ্যই নিরাপদ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংক যেমন নিরাপদ, এজেন্ট ব্যাংকিংও নিরাপদ, তবে এক্ষেত্রে প্রতিটি কার্যক্রমের দলির যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।