গত দশ বছরে স্বর্ণ ব্যবসায় শতাধিক খুন, জুয়েলারি সমিতি নির্বিকার

জুয়েলারি সমিতি

বংশপরম্পরায় কারিগর নির্ভর ব্যবসা বলে স্বর্ণের ব্যবসায় এখনো হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশি যুক্ত। তবে ব্যবসার অংকে ব্যবসাটি আর হিন্দু ব্যবসায়ীদের হাতে নেই। কিন্তু কারিগর এবং মালিক সমিতির পরিসংখ্যান হিসেবে এখনো সংখ্যাধিক্যে এ ব্যবসায় হিন্দুরাই বেশি। তাই ধকলের বেশিরভাগ এখনো সামলাতে হয় তাদের। যদিও মূল বিষয় হচ্ছে পাচার হোক আর পরিশুদ্ধ ব্যবসা হোক স্বর্ণের ব্যবসা আর স্বর্ণকারদের হাতে নেই। কিন্তু গত দশ বছরে যে শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এ ব্যবসায় ঘটেছে, তার শিকার বেশিরভাগক্ষেত্রে হিন্দু ব্যবসায়ীরাই, এবং কার্যত ছোট ব্যবসায়ীরা। ফলোআপ নিউজের অনুসন্ধান বলছে— ছোট ব্যবসায়ীদের হত্যার পিছনে প্রধানত যে বিষয়টি দায়ী, সেটি হচ্ছে দেনদরবার, আবার সিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেও অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকে। ফলোআপ নিউজ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, অনেক হত্যাকাণ্ডকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘সিনতাইয়ের কারণে হত্য ‘ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। আবার ব্যবসার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে মনে করলে এ ব্যবসার নিরাপত্তার প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি ফেরাতে ইচ্ছাকৃতভাবেই দু’একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলা হয় বলে বলছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসা সংশ্লিষ্ট একজন, যদিও বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে উড়িয়ে দিলেন আরেক ব্যবসায়ী। হত্যাকাণ্ডের শিকার অনেক ভুক্তভোগীর স্বজনের অভিযোগও এমনই, অর্থাৎ তারা বলছে সিনাতাইয়ের চেয়ে হত্যাকাণ্ডগুলো অভ্যান্তরীণ বিরোধে ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। হত্যা যেভাবেই ঘটুক বিচার পাওয়া যেন এক্ষেত্রে বলতে গেলে অসম্ভব। বিগত দশ থেকে পনেরো বছরে সংগঠিত হওয়া কিছু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিশ্লেষণ করেলে বোঝা যাবে এ ব্যবসায় অপরাধকর্মের বিস্তৃতি কতটা ভয়ংকর।

লক্ষ্মীপুরে বাড়ির মুখে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ছুরি মেরে হত্যা (৮ নভেম্বর ২০২৪)

লক্ষ্মীপুরে বাইসাইকেলের গতিরোধ করে হীরালাল দেবনাথ (৫০) নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে হত্যা: যা জানালো অভিযুক্ত (৩০ নভেম্বর ২০২৪)

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জুয়েলারি ব্যবসায়ী সোহেল হত্যার ঘটনায় জড়িত কাশেম মিয়া নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রামে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হত্যা, গ্রেপ্তার ৩ (২৮ নভেম্বর ২০২৩)

চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজ উদ্দীন বাজার এলাকার চোরাই স্বর্ণ চক্রের সদস্য সুমন সাহা নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তার সহযোগীরা।

চোরাচালানের স্বর্ণের জন্যই সুমন হত্যাকাণ্ড (১৮ নভেম্বর ২০২৩)

স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে যশোরের বেনাপোল থেকে ওমর ফারুক ওরফে সুমনকে (২৬) অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে।

স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা, দোকান কর্মচারী আটক (২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২)

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুরে অমর সরকার (৩৭) নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

রাজশাহীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হত্যার মামলার আসামির হাইকোর্টে জামিন (১৮ এপ্রিল ২০২১)

রাজশাহীর বাঘাতিতে সাধন চন্দ্র নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি মিজানুর রহমানকে এক বছরের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ফুলতলায় নিখোঁজের ৪ দিন পর স্বর্ণ ব্যবসায়ী সৌরভের লাশ উদ্ধার (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪)

ফুলতলা থানা পুলিশ নিখোঁজের ৪দিন পর ঘেরের পাড় থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার বেনেপুকুর মধুরকুল এলাকায় তবিবুর রহমান শেখের ঘেরের পাড় থেকে সৌরভ সরকার (৩০) নামে ওই যুবকের লাশটি উদ্ধার করা হয়। তিনি উপজেলার রাড়ীপাড়া গ্রামের স্বর্ণব্যবসায়ী ধীমান সরকারের পুত্র ও বেজেরডাঙ্গা বাজারের সৌরভ জুয়েলার্সের মালিক।

সাতক্ষীরার তালায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা (২২ অক্টোবর ২০২৪)

টাকার জন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে হত্যা করে কলেজছাত্র (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২)

চট্টগ্রামের পটিয়ায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে কলেজছাত্র আইয়ুব আলী (১৯)। শুক্রবার ভোরে ফটিকছড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আইয়ুব এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। 

ফেনীর স্বর্ণ ব্যবসায়ী হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার (৯ অক্টোবর ২০২৩)

ফেনীর সোনাগাজীর জমাদার বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন ভাদুড়ী হত্যা মামলা প্রধান আসামি দুলাল চৌধুরীকে (৪২) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

পাঁচ মাস পর বালু খুঁড়ে সোনা ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার (২ জুন ২০২২)

সোনা ব্যবসায়ী অনুপ বাউল মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে মাদারীপুরে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে পাঁচ মাস আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাঁর হদিস মিলছিল না। পরে গতকাল বুধবার মুন্সিগঞ্জের বোয়ালখালী বিসিক এলাকায় বালুর গভীর থেকে অনুপের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে।

ভোলায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, টাকা ও স্বর্ণ ছিনতাই (২১ জুন ২০২০)

ভোলার বাংলাবাজারের বটতলা এলাকায় প্রবীর চন্দ্র মাঝি নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ছিনতাইকারীরা। এ সময় তার ভাই সজিবকেও কুপিয়ে জখম করা হয়।

যাত্রাবাড়ীতে দোকানে ঢুকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে হত্যা (১৯ জুন ২০১৯)

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দোকানে ঢুকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তার নাম ইউনুস সরকার।

স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা (১৬ জুলাই ২০২০)

দোহার উপজেলার পূর্ব লটাখোলা এলাকায় তপন কর্মকার (৪৫) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা

খুলনার খানজাহান আলী থানা‌ এলাকা থেকে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম কমল পাল (৪০)।

পটুয়াখালীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুন (১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)

পটুয়াখালী শহরের পুরাতন আদালত ভবনের পাশ থেকে নারায়ণ কর্মকার নাড়ু (৫০) নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি শহরের সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্বর্ণকার খুন (১৫ অক্টোবর ২০১৫)

চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোপাল সাহা (১৫) নামে এক স্বর্ণ কারিগরকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

খুলনায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুন

খুলনায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে নগরীর খালিশপুর এলাকা থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করেছে। নিহত কামাল হোসেন শহরের বিআইডিসি রোডে স্বর্ণের ব্যবসা করতেন।

বাগেরহাটে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী অপু কর্মকারকে মোড়েলগঞ্জ থেকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

জয়পুরহাটে অপহরণের পর স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে খুন (৫ মার্চ ২০০৯)

জয়পুরহাট শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলামকে (৩৩) অপহরণের একদিন পর হত্যা করা হয়েছে।

বগুড়ায় প্রকাশ্যে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা (২ অক্টোবর ২০১৪)

বগুড়া শহরে দিনেদুপুরে রাস্তায় ফেলে জিয়াউদ্দিন জিয়া (৪২) নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

নারায়ণগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর হত্যায় বন্ধুর ফাঁসির রায় (২৯ মে ২০১৯)

এরকম কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিরাপত্তা এবং বিচার চেয়ে দাবী জানানো হয়। প্রশ্ন উঠেছে— জুয়েলারি সমিতি এরকম কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটলে সেটিকে কি শুধু নিরাপত্তা চাওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখে, নাকি প্রকৃতপক্ষেই তারা বিচার চায়? কেন বিচার হয় না তাহলে?

জবাবে বাংলাদেশ জুয়েলারি এসোসিয়েশন-এর সহ-সভাপতি এবং জুয়েলারি হাউজের স্বত্বাধিকারী রিপুনুল হাসান বলেন, আমরা কেন্দ্র থেকে বিচারের জন্য প্রশাসনের সাথে কাজ করি। কিন্তু বাংলাদেশে তো বোঝেন, শেষ পর্যন্ত বিচার ঝুলে যায়। হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে বলেন, কোনো পরিসংখ্যান তো আমরা রাখি না। জুয়েলারি সমিতি হিসেবে আপনাদের কাছে আপনাদের ব্যবসায়ী এবং ব্যবসা সংশ্লিষ্ট মানুষের হত্যাকাণ্ডের সকল তথ্য থাকা উচিৎ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্র থেকে রাখি না, তবে জেলা সমিতির কাছে এই তথ্যগুলো আছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলোকে আইনি সহযোগিতা দিতে আপনারা কোনো উদ্যোগ নেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই কাজগুলো জেলা সমিতি করে। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলা সমিতি এটা নিয়ে কাজ করেছে। কেন্দ্রীয় এসোসিয়েশনের কাজ জেলা উপজেলা এসোসিয়েশনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা বলে তিনি জানান।