সুন্দরবন বাঁচুক, বিদ্যুৎ কেন্দ্রও হোক

দিব্যেন্দু দ্বীপ

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আমার নিজস্ব মতামত হচ্ছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র আরো কয়েক কিলোমিটার সরিয়ে দেওয়া যায় কিনা। অন্তত দশ কিলোমিটার সরিয়ে নেওয়া উচিৎ।

কিন্তু দক্ষিণ অঞ্চলে কয়লা বিদ্যূৎ কেন্দ্র করতে গেলে সেটি সুন্দরবন সংলগ্নই হবে। এর বিকল্প খুব কি হাতে আছে? সুন্দরবন সংলগ্ন ‘পঞ্চাশ লক্ষ’ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনতে হবে না? শুধূ তাই না, মংলা পোর্টকে কেন্দ্র করে শিল্পায়ন হতে গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি মংলা অথবা রামপালে হবে— এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া আর কোথায় হতে পারে?

এখানে কয়েকটি বিষয় রয়েছেঃ
১. কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সমুদ্র বা নদী বন্দরের কাছাকছি হতে হবে;
২. লোকালয় থেকে যথাসম্ভব দূরে হতে হবে;
৩. আবার খুব দুর্গম এলাকায় হলেও চলবে না, যাতায়াতের ব্যবস্থা সুগম হতে হবে;
৪. বনাঞ্চল থেকে আইনানুগ এবং সম্ভাব্য দূরত্বে হতে হবে।
যদিও তাইওয়ান বনাঞ্চল থেকে দূরত্বের শর্ত মানেনি। তবে আমাদের অবশ্যই মানা উচিৎ। কেউ মানেনি বলে আমরা মানবো না, তা নয়।

সুন্দরবন ব্যতীত সমস্যাটা যদি একইসাথে চুক্তি নিয়েও হয়, তাহলে আলোচনাটা দুইভাগে হওয়া উচিৎ। সুন্দরবনের কথা না বলে প্রথমেই চুক্তির কারণে প্রকল্পটির বাতিল দাবি করা উচিৎ, যদি আমরা মনে করি যে, এক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে ভারত বেশি লাভবান হবে। কারণ, আমরা অবশ্যই চাই না আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারত বেশি লাভবান হোক। সেক্ষেত্রে সুন্দরবনের কথা বলারই প্রয়োজন নেই। কারণ, আমদের ভূখণ্ডে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে আমাদের চেয়ে ভারতের বেশি লাভ হবে— এরকম একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র দৌলদিয়ায় হলেও তার বিরোধিতা করা উচিৎ। হতে দেওয়া উচি না।

আধুনিক সভ্যতা তথা শিল্পায়ন এবং নগরায়নের সাথে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের বিরোধ খুবই সুস্পষ্ট। তাই একই সাথে ‘দুই ভালো’ চাওয়ার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে সামাঞ্জস্যবিধান ছাড়া আর কী করার থাকতে পারে? সুন্দরবন অবশ্যই বাঁচুক, বিদ্যুৎ কেন্দ্রও হোক। এর বাইরে কিছু চাইলে, সেটি হতে পারে সরাসরি নগরায়ন এবং শিল্পায়নের বিরোধিতা করা। সেই মিছিলে খুব সম্ভবত আমিও যোগ দিতে চাইব। কিন্তু সেই দাবীটি করার আগে যে বাসাটিতে আমি এই মুহূর্তে আছি সেটি ছাড়তে হবে। আধুনিক সভ্যতার সুযোগ-সুবিধাগুলো ছাড়তে হবে। তা কি আমি ছাড়তে রাজি আছি?