৪% সুদের কৃষি ঋণ কারা পেয়েছে তথ্য দিতে পারেনি কৃষি ব্যাংকের সোনাডাঙ্গা শাখা

Kristin Bank

কৃষি ব্যাংকের খুলনা শহরের সোনাডাঙা (কেডিএ বাস টার্মিনাল শাখা, খুলনা) শাখার মধ্যেই পড়েছে তরকারির পাইকাড়ি আড়ৎ, কিন্তু তারা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পায় না। অত্র শাখা থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ পেয়েছে আব্বাস মটরস্। কৃষি এবং কৃষি সম্পর্কিত বাণিজ্যে কেন ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে শাখার ব্যবস্থাপক আইরিন নাহার শিলা জানান— এই শাখার মধ্যে কৃষি সম্পর্কিত ব্যবসা বাণিজ্য কম। তাছাড়া কৃষি খাতেই ঋণ দিতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা কৃষি ব্যাংকে আর নেই।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে— এই শাখার নির্ধারিত এলাকা ১৬, ১৮, ১৯, ২০, ২৫, ২৬ ওয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত কৃষি সম্পর্কিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ চেয়েও পাচ্ছে না। একদিকে বলা হচ্ছে কৃষি ঋণের চাহিদা নেই, অন্যদিকে বলা হচ্ছে বরাদ্দ থাকা ৪% সুদের কৃষি ঋণ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন গরুর খামারে, যদিও ৪% সুদের ঋণ নিয়ম অনুযায়ী গরুর খামারে দেওয়ার সুযোগ নেই। ফলোআপ নিউজ এই শাখার মধ্যে পড়েছে এরকম কয়েকটি গরুর খামারে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে— তারা কৃষি ব্যাংক থেকে ৪% সুদের কোনো ঋণ পায়নি, এমনকি কৃষি ব্যাংক থেকে তারা কোনো ঋণই নেয়নি। তাহলে বরাদ্দাকৃত ৪% সুদের ঋণের টাকা বিতরণ করা হয়েছে কাদের মধ্যে? এ বিষয়ে কৃষি ব্যাংকের জনসংযোগ দপ্তরের মুখপাত্র জনাব জামিল হোসেন জানালেন, ৪% সুদের ঋণ আমদানি বিকল্প শস্যের ওপর দেওয়া হয়। নিশ্চয় ঐ শাখার কার্যপরিধির মধ্যে এ ধরনের ঋণ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, অন্যথায় তাদের বরাদ্দ পাওয়ার কথা নয়।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জুন ক্লোজিং-এ শাখার লোন আউটস্টান্ডিং ১২ কোটি ৫০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিতরণ দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ৯৪ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা। তবে কতজন নতুন লোন গ্রহীতা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে তৈরি হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি ব্যাংক। শাখার সর্বোচ্চ ঋণ গ্রহীতা আব্বাস অটো পার্টস্, যাদের কৃষি ব্যাংকের এই শাখায় ঋণ ছিলো ৫০ লক্ষ টাকা, এবং নতুন করে তারা মঞ্জুরি পেয়েছে ৯০ লক্ষ টাকা। অথচ এই শাখারই অন্তর্ভুক্ত এলাকা ট্রাকস্টান্ডের পাইকারি কাঁচা মালের আড়ৎগুলোর কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। কেন তারা কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে না জানতে চাওয়া হলে বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ নাসির উদ্দিন জানান— আমাদের সরকারি ব্যাংকের পিছনে দৌঁড়ানোর সময় নেই, প্রাইভেট ব্যাংক আমাদের পিছনে ঘুরে লোন দিয়ে যায়। কৃষি ব্যাংক সম্পর্কে এই বাজারের ব্যবসায়ীদের ধারণা আরো বেশি নেতিবাচক। তিনি যোগ করলেন, সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা কাজ করতে এবং ভালো গ্রাহক তৈরি করতে আগ্রহী নয়, তাদের আগ্রহ অন্যদিকে।

এই শাখাতে জুন ক্লোজিং হিসেবে ডিপোজিটের পরিমাণ ৫২ কোটি টাকা। সে হিসেবে ঋণের বিতরণ অনেক কম। কেন ঋণ বিতরণ কম এ বিষয়ে কৃষি ব্যাংকের জনসংযোগ দপ্তরের উপ মহাব্যবস্থাপক  জামিল হোসেন বললেন, কৃষি ব্যাংক ডিপোজিটের ৯২% পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। ৫২ কোটি টাকার বিপরীতে ১২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ অনেক কম জানিয়ে তিনি বললেন এতে শাখা লসে থাকার কথা। যদিও ‍খুলনার কেডিএ বাস টার্মিনাল ব্রাঞ্চের ব্যবস্থাপক আইরিন নাহার শিলা বলছেন, তার শাখা লাভে রয়েছে।

কৃষি ব্যাংকের একজন সাবেক কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান— দুর্নীতির বিষয়টি বাদ দিয়েও যদি বলা হয় তাহলে এক্ষেত্রে বড় সমস্যা অদক্ষতা এবং অনিচ্ছা। কৃষি ব্যাংকের এ ধরনের শাখাগুলো হচ্ছে এক ধরনের ডাম্পিং স্টেশন। শহরে থাকতে চায় এবং কোনোমতে চাকরিটা চালিয়ে যেতে চায় —এমন কর্মচারী এবং কর্মকর্তারাই মূলত এ ধরনের শাখায় পোস্টিং নিয়ে থাকে। মূলত ব্যাংকের একটি শাখা পরিচালনার জন্য যে ধরনের দক্ষতা এবং সদিচ্ছা থাকা দরকার, সেটি এ সকল কর্মকর্তাদের থাকে না। অত্র শাখায় কর্মরতদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তার কথার সত্যতাও পাওয়া গিয়েছে।


 Kristin Bank
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সোনাডাঙা শাখা, খুলনা।