এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ

কিরণ শেখর কুণ্ডু

কিসের চিনিকলের জায়গা? হাজার একর সরকারি জায়গা দখল করে আছে প্রভাবশালীরা, আর নিজেদের আদি বসতিতে থাকতে পারছে না এরা! যদি অন্যায়ভাবেও কেউ বা কোনো গোষ্ঠী কোনো জায়গায় বসাবাস করে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য আগুন লাগানো বা খুন করা যাবে এই অধিকার বাংলাদেশের সংবিধান কাউকে দেয়নি।

শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। রাতে শোবার সময় কম স্পিডে ফ্যানটা ছেড়ে দিলে এসির অনুভতি। খুব বেশি মোটা নয় আবার খুব বেশি চিকন নয় এমন কাঁথা ব্যবহার করতে পারলে ঘুমটা আপনার জমবে বেশ। কিন্তু না, জমছে না। উত্তরের জেলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ শত শত সাঁওতাল পরিবারের সদস্যরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ পতিত হয়নি। তারা অবৈধভাবে জায়গা দখল করে আছে সেই অভিযোগে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তাদের ঘর-বাড়ি। ট্র্যাকটর চালিয়ে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে তাদের বাসস্থান।

কারা এই সাঁওতাল সম্প্রদায়! কারা ওরা! কারা এই মানুষ! তারা কি এই রাষ্ট্রের নাগরিক! এত প্রশ্নের দরকার নাই। শুধু এটুকু জানা দরকার তারা এই অঞ্চলের আদি অধিবাসী। ইতিহাস বলে এই তামাটে কালো মানুষেরাই শুধু ছিল একসময়। তারা তাদের জীবনাচারে সেই ধারাকে কিছুটা হলেও বজায় রেখে চলেছে। পশু পালন, শ্রম বিক্রি আর সুযোগ পেলে শিকার করে জীবন পালন করে এরা। এরা এখন আমাদের মত তথাকথিত ভদ্র হয়ে উঠতে পারেনি, যার কারনেই তাদের এত সমস্যা। লুট হয়েছে তাদের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি এবং অনান্য সম্পদ। এ যেন আমি ইন্ডিয়ানদের উপর নির্মিত আপোক্লাপটো মুভির কোন অংশ দেখছি। খুন-লুটের পর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে সব কিছু। এ যেন আমরা সেই প্রস্তর যুগেই আছি। সেই একই রকম বর্বরতা,  অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।

কিসের চিনিকলের জায়গা? হাজার একর সরকারি জায়গা দখল করে আছে প্রভাবশালীরা, আর নিজেদের আদি বসতিতে থাকতে পারছে না এরা! যদি অন্যায়ভাবেও কেউ বা কোনো গোষ্ঠী কোনো জায়গায় বসাবাস করে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য আগুন লাগানো বা খুন করা যাবে এই অধিকার বাংলাদেশের সংবিধান কাউকে দেয়নি।

এটা দূর্বৃত্তায়ন, এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমি এই অপরাধের কঠোর বিচার দাবী করছি।

লিখেছেন

কিরণ শেখর কুণ্ডু