নিনা গোমেজ

সুখনিদ্রা নয়। এ যেন নিদ্রা-মহামারী। যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ছেন রাশিয়া এবং কাজাখস্তানের দুই প্রতিবেশী গ্রামের বাসিন্দারা। ঘুম ভাঙার পর আক্রান্তদের কারওরই স্মরণে থাকছে না ঠিক কী ঘটেছিল। অনেকটা ঠিক ‘রিপ ভ্যান উইঙ্কল’-এর গল্পের মতো। তবে ফারাক একটাই। গল্পের রিপ-এর ঘুম ভেঙেছিল বিশ বছর বাদে। আর ক্রাসনোগর্স্ক(রাশিয়ার গ্রাম) এবং কলাচির(কাজাখস্তানের গ্রাম) বাসিন্দাদের কারও ঘুম ভাঙছে দু’দিন বাদে, কারও চার দিন বাদে, কারও আবার ছ’দিন বাদে।

এই যেমন ধরুন মেরিনা ফেল্কের কথা। কলাচির এই বছর পঞ্চাশের বাসিন্দা জানিয়েছেন, এক দিন সকালে গরুর দুধ দোয়াচ্ছিলেন। হঠাৎই ভীষণ ক্লান্ত লাগতে শুরু করে, তার পর ঘুমিয়ে পড়েন। সম্বিৎ যখন ফেরে, দেখেন হাসপাতালের নার্স বলছেন, “তোমার ঘুম তা হলে ভাঙল ঘুম-রাজকুমারী।” মেরিনা পরে জানতে পারেন টানা দু’দিন ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। “যদিও আমার কিছু মনে নেই” বলেন মেরিনা। শুধু গ্রামের বাসিন্দারাই নন, বাইরে থেকে গ্রামে যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাঁদেরও কেউ কেউ এই নিদ্রারোগের শিকার। সে তালিকায় নাম লিখিয়েছেন অ্যালেক্সি গোম। তিরিশ বছরের অ্যালেক্সি কলাচিতে শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কিছু ক্ষণ গল্পসল্প করার পর ল্যাপটপ চালিয়ে কাজকর্ম করছিলেন অ্যালেক্সি। হঠাৎই অবসন্ন ভাব, ক্লান্তি এবং ঘুম। অ্যালেক্সিরও ঘুম ভাঙে হাসপাতালে, ৩০ ঘণ্টা পর।

রাশিয়ার গ্রাম ক্রাসনোগর্স্কের ছবিটাও একই রকম। সোভিয়েত আমলে সেখানে অন্তত সাড়ে ছ’হাজার মানুষ থাকতেন। এখন থাকেন ১৩০ জন। এঁদের বেশিরভাগই কখনও না কখনও এই নিদ্রা-মহামারীর কোপে পড়েছেন। তবে সারা বছর ধরে এই রোগের একই রকম দাপট থাকে না। যেমন গত বছরের মে-তে এই মহামারীর কোপে পড়েন দুই গ্রামের বাসিন্দারা। তার পর ২০১৪-র গোড়ার দিকে তার দাপট বেড়েছিল। সে পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু চলতি মাসে আবার তার প্রকোপ বেড়েছে।

রোগটা যে যথেষ্ট সমস্যার, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু মূল চিন্তার বিষয় হল রোগের কারণ চিহ্নিত করে উঠতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে শুরু করে রক্তে বিষক্রিয়া সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হয়েছে বলে স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি। কিন্তু লাভ হয়নি। অনেকে অবশ্য দাবি করছেন, ক্রাসনোগর্স্কে যে পরিত্যক্ত ইউরেনিয়াম খনিটি রয়েছে, সেখানকার বিষাক্ত গ্যাসই হয়তো এর জন্য দায়ী। কিন্তু এরও জোরদার প্রমাণ মেলেনি। উল্টে স্থানীয় ‘অ্যানাস্থেশিস্ট’ প্রশ্ন তুলেছেন, যদি বিষাক্ত গ্যাসের প্রতিক্রিয়াতেই এই পরিণতি হয়ে থাকে, তা হলে সবাই কেন একসঙ্গে রোগের কবলে পড়ছেন না? “অনেক সময়ই দেখা যাচ্ছে, এক জন ঘুমিয়ে পড়লেন, কিন্তু তার পাশের জনই দিব্যি জেগে রয়েছেন। এটা কেন হচ্ছে?” প্রশ্ন ওই চিকিৎসকের।

ধন্দ তাই থাকছেই। প্রতিকারের কোনও বন্দোবস্তও করা যাচ্ছে না।

আজব নিদ্রার এ হেন দাপটে গ্রামবাসীদের দু’চোখ থেকে শান্তির ঘুম আপাতত সত্যিই উধাও হয়ে গিয়েছে!

1