শরীরে অক্সিজেনের সাধারণ স্তর সাধারণত ৯৫% বা তার বেশি হয়। দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ বা স্লিপ এপনিয়াতে আক্রান্ত কিছু লোকের ৯0%-এর স্বাভাবিক স্তর থাকতে পারে। একটি স্পন্দন অক্সিমিটারে “SPO2” রক্তে অক্সিজেনের শতাংশ দেখায়। যদি আপনার SPO2 রিডিং ৯৫% এর চেয়ে কম হয় তবে আপনার স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ।
একটি নাড়ির অক্সিমিটার (পালস্ অক্সিমিটারে) পরিমাপ করে যে কারও রক্তে অক্সিজেন কত। এটি একটি ছোট ডিভাইস যা কোনও আঙুল, বা শরীরের অন্য কোনও অংশে ক্লিপ করে লাগাতে হয়। এগুলি প্রায়শই হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলিতে ব্যবহৃত হয় এবং বাড়িতে ব্যবহারের জন্য কেনা যায়।
কভিড-১৯ আক্রান্তদের অনেকের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ভালো থাকলেও অনেকের কমে যায়। যাদের রক্তে অক্সিজেনের স্তর নেমে যায় তাদের দ্রুত চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। অক্সিজেনের কম মাত্রা একটি প্রাথমিক সতর্কতা চিহ্ন হতে পারে যে, চিকিৎসা প্রয়োজন।
গায়ের ত্বকের ভিন্নতার জন্য নাড়ির অক্সিমেট্রি ফলাফলগুলি যথাযথ হতে নাও পারে। নেইল পলিশ দেওয়া থাকলে অক্সিজেন স্তর কম দেখায়। অক্সিমিটারে অক্সিজেন স্তর ২% কম বা বেশি দেখাতে পারে। যে সমস্ত লোকেরা তাদের নিজস্ব অক্সিজেনের স্তরগুলি পরীক্ষা করে, বা যারা তাদের জন্য এটি পরীক্ষা করে তাদের ফলাফলগুলি দেখার সময় এটি মনে রাখা উচিৎ।
অক্সিজেনের মাত্রা কম হতে পারে যদি কেউ শ্বাসকষ্ট অনুভব করে, স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত শ্বাস গ্রহণ করে, বা তাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম করতে খুব অসুস্থ বোধ করে। এমনকি যদি কোনও অক্সিমিটার বলে যে তাদের অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে, তারপরও ভিন্নভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ বা চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। আপনার যদি এই লক্ষণগুলি থাকে তবে তাড়াতাড়ি একজন ডাক্তার বা অন্য কোনও স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীকে কল করুন।
শরীরে যেভাবে অক্সিজেনের স্তর বাড়াবেন
শরীরের অক্সিজেন স্তর একটু কম মনে হলেই ঘাবড়ানোর কিছু নেই। শরীরে অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বর করে দেখুন অক্সিজেন স্তর বাড়ে কিনা। মাথায় রাখতে হবে— শরীরের নব্বইভাগ শক্তির উৎস কিন্তু এই অক্সিজেন। শর্করা এবং প্রোটিন ভেঙে শক্তি উৎপাদনের জন্য কোষে যথাযথ পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছুনো দরকার। বস্তুত শরীরে সকল ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। অতএব, শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই। বদ্ধ জায়গায় থাকা যাবে না, দিনে কিছু সময়ের জন্য অন্তত প্রকৃতির কাছে যাওয়া দরকার, যেখানে মলয় বাতাস আছে।
মলয় বাতাস
অক্সিজেন লেবেল বাড়ানোর প্রথম উপায় হচ্ছে— আপনাকে পরিচ্ছন্ন বাতাস পেতে হবে। বদ্ধ ঘরে থাকা উচিৎ নয়, সম্ভব হলে এমন কোথাও দিনের কিছু সময়ের জন্য যান, যেখানে সুন্দর সমীরণ আছে।
পানি খেতে হবে
শ্বাঃস প্রশ্বাঃসের কারণেও শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। তাই শরীরে সবসময় পানির যোগান দিতে হবে। একসাথে অনেক পানি খাওয়ার চেয়ে সবসময় অল্প অল্প পানি খাওয়া ভালো। ফুসফুস থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়, এজন্য শরীরের সব অঙ্গ প্রতঙ্গের পাশাপাশি ফুসফুসেও পানির যোগান থাকতে হয়।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
আয়রন একটি খনিজ, যা লোহিত রক্ত কণিকায় থাকে। লোহিত কণিকাই কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। ফলে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখার সাথে শরীরে আয়রনের মাত্রা ঠিক থাকার একটা সম্পর্ক আছে। এজন্য শাক-সবজি, ফলমূল এবং ডিম খেয়ে শরীরে আয়রনের মাত্রা ঠিক রাখতে হবে।
ব্যয়াম করতে হবে
শরীরে যত বেশি অক্সিজেন ব্যবহৃত হবে, শরীর তত বেশী অক্সিজেন নেবে। এটা অব্যাহত রাখতে পারলে শরীর সুস্থ থাকবে। পুরনো কোষ মরে গিয়ে শরীরে নতুন নতুন কোষ তৈরি হবে। রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, শরীর প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গ সুস্থ থাকবে।
শ্বাঃস প্রঃশ্বাসের ব্যয়াম করতে হবে
ফুসফুস ফুলিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার কিছু সময়ের জন্য নিঃশ্বাস নেওয়া খুব জরুরী। এজন্য অনেকে ট্রেনিং সেন্টারেও গিয়ে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে, গভীরভাবে নিঃশ্বাস নিলে শরীর ও মন চাঙ্গা হয়, হতাশা দূর হয়।