মানুষজনের ওষুধ সম্পর্কে ধারণা খুব কম, ভ্রান্ত ধারণা বেশি

নাজনিন মায়া মেহেরপুর

লেখাপড়া জানা মানুষদেরও রোগ ও ঔষুধ সম্পর্কিত ধারণা খুব কম, ভ্রান্ত ধারণা বেশি। এ সমস্যার প্রতিকারের জন্য স্কুল পাঠ্যবইয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞার এবং ওষুধপত্র সম্পর্কে সাধারণ ধারণাসূচক একটি পাঠ্যবইয়ে থাকা দরকার।

তাহলে বাংলাদেশের ডাক্তারদের সাস্থ্যসেবা দিতে সুবিধা হত। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা খুব অনুভব করি। আমি গ্রামের মানুষের সাথে রোগ আর ওষুধপাতি নিয়ে দিন শুরু করি। গ্রামের মানুষজন আমার কাছে থেকে ওষুধ পেলেই খুশি, তারা এসে আমকে রোগের কথা বলে না, বলে যত প্রকার ওষুধ আছে সব অল্প অল্প করে দেন। তাদের দাবি মেনে নিলাম!

আবার বলে ব্যথা হইছে এ্যন্টিবায়োটিক ক্যাপ্সুল দেন। ওনারা আসলে এ্যমক্সাসিলিন ক্যপসুল চান, বা অন্য কোনো গ্রুপের এ্যন্টিবায়োটিক দিতে হবে। বড় কাঠামোর একটি ইউনিয়ন সাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে আমিই যখন একমাত্র ডাক্তার, আমিই ফার্মাসিস্ট, আমিই আয়া তখন সামনে দাঁড়ান অনেক এ ধরনের রোগীদের কে বোঝাবে কোন ওষুধের কী ব্যবহার?

যদি বলি এটা ব্যথানাশক ওষুধ না, তাহলে আমি ডাহা মিথ্যেবাদী এবং সরকারের দেওয়া সব ভাল ওষুধ আমার ততদিনে বেঁচে খাওয়া হয়ে গেছে। আরও যে কত কথা শোনা লাগে!

আসলে তাদের যে ওষুধ সম্পর্কে একেবারে ধারণা নেই তা না। কেউ কেউ আমার জন্মের আগে থেকে এই সাস্থ্যসেবাকেন্দ্র থেকে ওষুধ ও সেবা পেয়ে আসছেন এবং ওষুধগুলো তাদের কাছে বেশ পরিচিত। সাধারন ঠাণ্ডা কাঁশির জন্য হিস্টাসিন ও জ্বর এর জন্য প্যারাসিটামল খেতে হয় এসব ওনারা জানেন।

সমস্যা হল এখানে ওনারা ওষুধের চেহারা দেখে চেনেন নাম দেখে না। আমি যদি এ্যমক্সাসিলিন কে ব্যথার ওষুধ না বলি তবে যেন রোগি ও ওষুধ দুটকেই অপমান করা হল! এটা সত্য যে ওষুধটায় ব্যথা ভাল হয়, কারণ, ক্ষত শুকালে তো ব্যথাও কমে।

আমার নতুন যোগদানের জায়গায় কিছুদিন আগে আমার কাছে একজন ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল চাইল, আমি বললাম শেষ হয়ে গেছে। এক সপ্তাহে ৫০০০ প্যারাসিটামল শেষ, ওনার পর্যন্ত আসেনি, সুতরাং রাগ গ্রহণযোগ্য। উনি অনেক কথা তো শোনালেনই সাথে বললেন যে তিনি ২০ বছর ধরে নিয়মিত ও প্রতিদিন প্যারাসিটামল খেয়ে যাচ্ছেন! ওনার বয়স এখন ৬০ এর কিছু বেশি হবে এবং বেশ সুস্থ।

পড়াশুনার সাথে মেলে না অনেক কিছু। কেননা প্যারাসিটামল আমাদের দেহের সবচাইতে বড় গ্রন্থি লিভার কে বেশ ঝামেলায় ফেলতে পারে গ্রহণের নির্দিষ্ট মাত্রা ছাড়ালে। আমার বাড়ির পাশে সেদিন ৬ বছরের একটা বাচ্চামেয়ে ২০ টার বেশি প্যারাসিটামল খেয়ে ফেলেছিল।

বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কোনো অসুবিধা হইনি? ও বলল, না, শুধু একটু মাথার মধ্যে কেমন যেন করছিল। হাসপাতালে নেওয়া তো দূরে থাক সে দিব্যি সুস্থ। আমাদের জানা অজানার মাঝে অনেক কিছুই ঘটছে সবসময়। আমার এই ক্ষুদ্রজ্ঞানের একলা মাথায় এসবের ব্যাখ্যা খোঁজা সম্ভব হয় না। তবে এতটুকু বুঝি যে সাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সবার সচেতনতা আরও অনেক বেশি প্রয়োজন, এ দিকটাতে কর্তব্যক্তিদের নজড় বাড়ানো দরকার।


নাজনিন মায়া

উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার,
ইউনিয়ন স্বাস্হ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র, গাংনী, মেহেরপুর।