বাজার নকল খেজুরের গুড়ে সয়লাভ। নকলেরও রকমফের আছে। খারাপ, খুব খারাপ, ভয়ঙ্কর —এভাবে ভাগ করা যায়। বাজারে ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত দামে খেজুর গুড় রয়েছে। নকলের ভিড়ে বাড়ছে আসলের কদর ও দাম। তবে আসল গুড় খুঁজে কেনাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ এখন। সব অভিজ্ঞতাই যেন এখন এখানে হার মানে।
ফলে একথা বলাই যায় যে নকল ব্যবসায়ীরা আসলদের জন্যও একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, তাদের বিরল করেছে, বিশেষ করেছে। না হলে খেজুর গুড়ের কেজি দেশীয় বাজারে কেন হাজার টাকা হবে? এক কেজি খেজুর গুড়ের দাম এক হাজার টাকা যে আছে, একথা হয়ত অনেকেই জানেন না। না জানলে কেউ সহজে অবশ্য মানতে পারবেন না।
প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে চিনবেন যে কোন গুড়টা আসল আর কোন গুড়টা নকল, যেখানে রসেরই রয়েছে অনেক প্রকার, তাছাড়া গুড় বানাবার প্রক্রিয়ার ওপরও গুড়ের মান ও রূপ পরিবর্তন হয়। রসের হেরফের হলে গুড়ের রং ও স্বাদের পরিবর্তন আসে। তবে মোটা দাগে কয়েকটি বিষয় আছে যেগুলো দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে যে কোন গুড়টা আসল আর কোন গুড়টা নকল।
১. আসল গুড় টনটনে শক্ত হবার কথা নয়। কোনো কিছু না মিশিয়ে শুধু ফুট দিয়ে গুড়ের পাটালি বানালে সেটি নরম নরম হওয়ার কথা। অর্থাত গুড় চেনার এক নম্বর উপায় হচ্ছে, দেখতে হবে পাটালিটি যথেষ্ট নরম এবং রসালো কিনা।
২. নতুন গুড় নোনতা লাগার কথা নয়। খুব নোনতা লাগলে বুঝতে হবে, এতে কিছু মেশানো হয়েছে। সাদা করার জন্য রসে ফিটকিরি দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়ার একটা চল আছে। তবে পুরনো গুড় এমনিই একটু নোনতা লাগতে পারে। রসে পঁচন ধরলে গুড় টক টক স্বাদের হয়, নোনতা হয় না।
৩. তবে গুড়ে চিনি এবং রং মেশালে সেটি সাদা চোখে ধরা খুব কঠিন। যেহেতু চিনিও মিষ্টি, তাই মিষ্টত্ব দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। একটা উপায় কিছুটা কাজে লাগতে পারে- ঘুটে গুড়ের পাটালি বানালে, বিশেষ করে সরাসরি রস দিয়ে, তাতে খুব দানা থাকার কথা নয়। যদি নতুন পাটালি গুড় ভাঙার পর খুব দানাদার মনে হয়, তাহলে বুঝতে হবে এতে চিনি মেশানো রয়েছে।
৪. অনেকে গুড়ের ঘ্রাণ দিয়ে আসল বুঝতে চায়, যেহেতু খেজেুরের গুড়ে বিশেষ ঘ্রাণ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, প্রথম কাটার রসে যেমন ঘ্রাণ থাকে, দ্বিতীয় কাটার রসে সেরকম ঘ্রাণ থাকে না, তাই ঘ্রাণ দিয়ে খুব যে আসল নকল সবসময় চেনা যাবে সেটি একদম সঠিক নয়, তবে এটিও আসল গুড় চেনার একটি উপায়।
৫. স্বাভাবিকভাবে গুড় বানালে সেটি স্ফটিকের মতো চকচক করবে না। খুব চকচকে হলে বুঝতে হবে, এতে কিছু মেশানো হয়েছে। গুড়ে একটু তেতো হলে বুঝতে হবে বানানোর সময় গুড়টা একটু বেশি জ্বাল দিয়ে ফেলেছে, ফলে এটা একটু পোড়া পোড়া বা তেতো স্বাদের হবে।
শেষ কথা হচ্ছে, যতই বুঝদার হই না কেন আসল খেজুর গুড় চেনা যাবে না, ভুল হবেই। বিশ্বস্ত লোকের কাছ থেকে কিনতে হবে, এবং যে বানাচ্ছে তার কাছ থেকে কিনতে হবে, সেক্ষেত্রে একজন ভালো হলেই আপনি গুড়টা ভালো পাবেন। কিন্তু যে বিক্রি করছে তাকে বিশ্বাস করলেও কাজ হচ্ছে না, কারণ, সে ভালো হলেই গুড়টা ভালো হবে, এই নিশ্চয়তা নেই, যেহেতু সেও গুড়টা কিনে এনেছে।
সবচে ভালো হয় যদি সরাসরি গাছিদের সাথে আলাপ আলোচনা করে গুড় কেনা যায়। কারণ, সবচে বেশি ভেজাল গুড় তৈরি করে ভুঁইফোড় ব্যবসায়ীরা। তারা বাজার থেকে নিম্নমানের গুড় কিনে, তাতে নানান উপাদান মিশিয়ে ভালো মানের গুড় তৈরি করে, যেটি অনেক সময় তিনশো চারশো টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়, তাই বেশি দাম দিয়ে কিনছেন বলে এটা ভাবার কোনো উপায় নেই যে এটা আসল গুড়।
ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে, যশোরে গাছিদের বাড়িতে গিয়েও আমরা খুব বেশি আশ্বস্ত হতে পারিনি, তারাও জেনে গেছে, শিখে গেছে যে কীভাবে স্বচ্ছল হতে হয়, কীভাবে ধনী হতে হয়, কীভাবে একটু বেশি উপার্জন করতে হয়।