আমি সেদিন ঢাকা থেকে ভোলা যাচ্ছিলাম। ডেকেও জায়গা পাচ্ছিলাম না। ঢাকা থেকে ভোলা যাওয়ার একমাত্র উপায় লঞ্চ, তাই শনিবার লঞ্চে খুব ভিড় হয়। অনেকক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে অবশেষে লঞ্চের একপাশে গিয়ে কোনমতে বসলাম। পাশেই ছিলেন এক বৃদ্ধ চাচা। সাথে চাচিও ছিলেন। ওনারা খুব কম জায়গা নিয়েই বসে ছিলেন, তারপরও আমাকে জায়গা করে দিলেন। খুব আন্তরিকতার সাথে আমার সম্পর্কে জানতে চাইলেন। এরপর শান্ত হয়ে ঐ একটুখানি জায়গার মধ্যে নামায পড়লেন। আমি খেয়াল করে দেখলাম, যখন উনি নামায পড়ছেন- তখন পুরো লঞ্চটাই যেন ওনার কাছে অদৃশ্য হয়ে গেছে! নামায পড়া শেষ হওয়ার পরও কিছু্ক্ষণ চুপচাপ বসে রইলেন। তা প্রায় দশ মিনিট, উনি কোন কথা বললেন না। নদীর কোল ঘেষে আপন মনে বসে রইলেন। আবার কথা বলা শুরু করলেন। কিছুক্ষণ খোসগল্প করার পর উনি পাউরুটি কলা আমাকে খেতে দিলেন, নিজেও খেলেন। ‘আমি খাব না’ বলার কথা চিন্তাও করতে পারলাম না। খেলাম, সত্যি কথা বলতে- এতটা তৃপ্তির সাথে আমি কোনদিন কলা পাউরুটি খাইনি। ওনার মধ্যে এতটাই দরদ ছিল যে, তা ভোলার না। চাচার কথা এখনো মাঝে মাঝে মনে পড়ে।