প্রতিদ্বন্দ্বিতা
ব্যাঙ্কের বই ও বিলের দিকে তাকিয়ে আপনি দেখলেন যে, আপনার টাকা জলের মতো বেরিয়ে যাচ্ছে। অল্পদিন হল আপনার বিয়ে হয়েছে আর আপনি খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। এরজন্য কি আপনি আপনার বিবাহসাথিকে দোষ দেবেন? তাড়াহুড়ো করে এমনটা করবেন না। এর পরিবর্তে সমস্যাটা নিয়ে একসঙ্গে আলোচনা করুন এবং সেই কারণগুলো বিবেচনা করুন, যেগুলোর জন্য আপনারা এই সমস্যায় পড়েছেন।
যে-কারণে এটা হয়ে থাকে
পরিস্থিতির পরিবর্তন। যেহেতু বিয়ের আগে আপনি আপনার বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিলেন, তাই বিল এবং বিভিন্ন খরচা মেটানোর ব্যাপারে আপনার হয়তো কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এটাও হতে পারে যে, টাকাপয়সা সম্বন্ধে আপনাদের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, একজন হয়তো জমাতে ভালোবাসেন কিন্তু অন্য জন হয়তো খরচা করতে ভালোবাসেন। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এবং টাকাপয়সা খরচ করার ব্যাপারে একমত হওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন।
কাজ ফেলে রাখা। বর্তমানে একজন সফল ব্যবসায়ী জিম স্মরণ করে বলেন যে, তার যখন নতুন নতুন বিয়ে হয়েছিল তখন তিনি সব কাজ গুছিয়ে করতে পারতেন না আর তাই তার অনেক বাজে খরচ হতো। তিনি জানান, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিলের টাকা জমা না দেওয়ার কারণে আমাদেরকে জরিমানা বাবদ হাজার হাজার টাকা দিতে হয়েছিল আর এর ফলে আমাদের হাতে যে-টাকাপয়সা ছিল, তা ফুরিয়ে যাচ্ছিল।’
নগদ টাকা না দিয়ে বরং অন্যান্য উপায়ে বিল মেটানো। যখন পকেট থেকে নগদ টাকা বার করতে হয় না, তখন খুব সহজেই অতিরিক্ত খরচ হয়ে যায়। সেই সময় এটা হতে পারে, যখন আপনি ক্রেডিট কার্ড অথবা ডেবিট কার্ড, ইন্টারনেট কিংবা ইলেকট্রনিক ব্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে বেশিরভাগ লেনদেন করেন। সহজেই লোন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় নববিবাহিতরা অতিরিক্ত খরচ করে ফেলতে পারে।
যা-ই হোক না কেন, টাকাপয়সার কারণে আপনার বিয়েতে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। আপনার বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম (ইংরেজি) নামক একটা বই বলে, ‘অধিকাংশ দম্পতি জানিয়ে থাকেন যে, তাদের কাছে যত টাকাপয়সাই থাকুক না কেন, তবুও সেটাই হল তাদের সমস্যার প্রধান কারণ। টাকাপয়সা নিয়েই বেশিরভাগ তর্কবিতর্ক হয়ে থাকে।’
আপনি যা করতে পারেন
সহযোগিতা করুন। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর পরিবর্তে খরচ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একজোট হয়ে কাজ করুন। আলোচনার শুরুতে স্থির করুন যে, এই বিষয়টা যেন আপনাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে না দেয়।—বাইবেলের নীতি: ইফিষীয় ৪:৩২.
বাজেট তৈরি করুন। সারা মাস ধরে যা যা খরচ হয়েছে, সেগুলো যত ছোটই হোক না কেন, লিখে রাখুন। এটা করা আপনাকে দেখতে সাহায্য করবে যে, এত টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে এবং কোনো অপ্রয়োজনীয় খরচ হচ্ছে কি না।
যে-প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে, সেটার একটা লিস্ট তৈরি করুন। যেমন খাবারদাবার, জামাকাপড়, ঘরভাড়া অথবা কিস্তির টাকা, গাড়ির খরচ ইত্যাদি। প্রত্যেকটার পাশে লিখে রাখুন যে, সেই খাতে মাসে আনুমানিক কত খরচ হবে।—বাইবেলের নীতি: লূক ১৪:২৮.
“ঋণী মহাজনের দাস হয়।”—হিতোপদেশ ২২:৭.
প্রত্যেক মাসে ভিন্ন ভিন্ন খাতে (খাবারদাবার, ঘরভাড়া, জ্বালানি ইত্যাদি) যা যা খরচ হতে পারে, তা আলাদা করে রাখুন। কেউ কেউ প্রত্যেকটা খাতের জন্য খামে টাকা ভরে রাখেন। * যদি কোনো খামে টাকা শেষ হয়ে যায়, তবে তারা সেই খাতে খরচ করা বন্ধ করে দেন অথবা অন্য খাম থেকে টাকা নিয়ে সেই ঘটতি পূরণ করেন।
বস্তুগত বিষয়সম্পদ সম্বন্ধে আপনার মনোভাব কেমন, তা আবারও চিন্তা করুন। অত্যাধুনিক জিনিসপত্র থাকার ওপর সুখ নির্ভর করে না। কারণ যিশু বলেছিলেন: “উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না।” (লূক ১২:১৫) আপনি এই কথাগুলো বিশ্বাস করেন কি না, তা প্রায়ই আপনি যেভাবে খরচ করেন সেটার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।—বাইবেলের নীতি: ১ তীমথিয় ৬:৮.
রদবদল করুন। দু-বছরের বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করার পর অ্যারন বলেন, ‘কেব্ল টিভির জন্য বিল মেটানো আর বাইরে খেতে যাওয়া প্রথম প্রথম খুব একটা ব্যয়বহুল বলে মনে না হলেও পরবর্তী সময়ে সেগুলো আর্থিক সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। আয় বুঝে ব্যয় করার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের না বলতে শিখতে হয়েছিল।’ ▪ (g১৪-E ০৬)