স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট কী? কোনটা খাবেন?

স্যাচুরেটেড ফ্যাট

বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় খাদ্যস্থিত ফ্যাট হল ‘ট্রাইগ্লিসারল’, যা তৈরি হয় মূলত তিনটি ফ্যাট অ্যাসিড ও একটি গ্লিসারল মলিকিউলের সমন্বয়ে৷ এই দু’টি মলিকিউল (ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল) ‘এস্টার’ নামক একটি বিশেষ রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত৷ বন্ধনের প্রকৃতি অনুসারে (‘ডাবল বন্ড’ বা ‘সিঙ্গল বন্ড’) ফ্যাটকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়৷ এই তিনটি ভাগের নাম— স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট৷ ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’ রক্তে ‘ব্যাড কোলেস্টরলে’র পরিমাণ বাড়িয়ে জমা হয় হৃতপিণ্ডের রক্তবাহী ধমনীতে এবং ধমনীর পথ সংকীর্ণ করে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে৷ এর ফলে তৈরি হয় বিভিন্ন প্রাণঘাতী হৃদরোগ— মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন ও এমনকি হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হয়৷

‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’ রক্তে LDL কোলেস্টেরল বা ‘ব্যাড কোলেস্টেরল’-র পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়৷ ফলে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা খাবারে কম পরিমাণ ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’ (যেমন চিজ, বাটার, অ্যানিম্যাল ফ্যাট— লাল মাংস, ভাজা-পোড়া খাবার ও বেশি পরিমাণে ‘আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট’ যেমন বাদাম, মাছ ও ভেজিটেবিল অয়েল) রাখার পক্ষে বলে আসছেন৷ ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাট অ্যাসিড সমৃদ্ধ এই আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে কোলেস্টরলের পরিমাণ কমিয়ে হার্ট ডিজিজের সম্ভাবনা কমায়৷

স্যাচুরেটেড ফ্যাট


বর্তমান ধারণা অনুসারে, খাদ্যে প্রধানত বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং কম পরিমাণে ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’, ‘গুড কোলেস্টরল’ বনাম ‘ব্যাড কোলেস্টরল’-র ভারসাম্য বজায় রেখে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়৷ কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানিরা খাদ্য তালিকা থেকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট একেবারে বাদ দিতে ‘না’ করেছেন।

অনেকে মনে করেন, খাবার থেকে ফ্যাট ছেঁটে ফেললেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷ আসলে তা নয়। সুষম খাদ্য তালিকায় খাবারের সব ক’টি উপাদান সমানভাবে থাকা উচিৎ৷ অর্থাত্‍ থাকা উচিৎ পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ, ফল, সবজি, দই ও ভেজিটেবিল অয়েল৷ বিশ্বের সব থেকে স্বাস্থ্যবান খাদ্য বলে পরিচিত তথাকথিত মেডিটেরিয়ান ডায়েটের মধ্যেও ৮ শতাংশ শক্তি আসে ফ্যাট থেকে৷ খাদ্য তালিকায় সর্বদা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের সুষম সমাহার থাকা প্রয়োজন৷ মনে রাখতে হবে যে, কোনও কিছুই প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে খাওয়া ক্ষতিকর৷ পরিমিত খাওয়ার অভ্যেস করলে এতকিছু আর ভাবতে হবে না।

সবই খাওয়া যাবে, তবে কম কম। ফলফলাদি এবং শাকসবজি খেতে হবে বেশি, অপরদিকে কার্বহাইড্রেট এবং চর্বি জাতীয় খাবার খেতে হবে কম। এটাই সহজ সমাধান। খাদ্যতালিকায় কিছু সামুদ্রিক মাছ রাখার চেষ্টা করতে হবে, তাতে ফিস অয়েল এবং ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের চাহিদাটাও মিটবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার যত কম খেয়ে পারা যায় ততই ভালো। সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এবং কৃত্রিমভাবে লবণযুক্ত খাবার কম খেতে হবে, পটাশিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।