বর্তমানে সহজলভ্য খাবারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্রয়লার মুরগী। ব্রয়লার মুরগী পালা সহজলভ্য, পেশার মধ্যেও গ্রাম গঞ্জে অন্যতম একটি পেশা। মাস ঘুরলেই টাকা। আগে বিনিয়োগ লাগতো, এখন তাও লাগে না, সবই পাওয়া যায় বাকীতে। কিন্তু এই বাকীর মধ্যেই আছে শুভঙ্করের ফাঁকি। যেহেত বাকীতে পাচ্ছে তাই যে মুরগী পেলে লাভবান হতে চাচ্ছে তার আর কিছু বোঝার আগ্রহ থাকছে না, কারণ, সে পরামর্শ নিচ্ছে বাকীর মালের সাথে ডিলারের কাছ থেকে ফ্রি। আসলে কি পরামর্শ নিচ্ছে? নিচ্ছে ভয়ঙ্কর কিছু পরামর্শ—একটাও মুরগী রোগে মারা না যাবার উপায়। ওখানেই ঘটছে বিপদ, এমন সব ওষুধ এবং কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচেছ যারা এই পালনের কাজটা করছে তাদেরও।
সবসময় যে লাভ হচ্ছে তাও কিন্তু নয়, গ্রামে গিয়ে কথা বলে জানলাম, পারিবারিক এ খামারগুলোতে পরিবারের দুজন থেকে তিনজন লোক কাজ করে, সে হিসেবে তাদের মাসিক বেতনই হয় বিশ হাজার টাকা থেকে পঁচিশ হাজার টাকা, সে টাকাটিও কিন্তু তাদের উপার্জন হচ্ছে না—তারা একই রকম দারিদ্রের মধ্যেই থাকছে, অথচ এদের শ্রমের ওপর ভর করে কোম্পানি এবং ডিলার উপার্জন করছে মাঝারি মাপের (৫০০ মুরগী) একটি খামার থেকেও কমপক্ষে ত্রিশ হাজার টাকা। যে খাবার তারা দিচ্ছে, যে বাচ্চা এবং যে ওষুধ—তা থেকে তাদের এই অায়টা হচ্ছে, খামারির লস হলেও তাদের কোনো লস নেই, দাদন ব্যবসার মতো তারা নিম্ন আয়ের মানুষদের বন্দী করে ফেলছে এভাবে।
এবার আসা যাক ব্রয়লার মুরগী খাওয়ার ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে। আসলে যেভাবে ব্রয়লার মুরগি বড় করা হয় এদেশে, তা একেবারেই সঠিক পদ্ধতি নয়। যথাযথ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর কী করছে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। যেভাবে ব্রিড করানো হচ্ছে, যেভাবে এবং যে হারে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীরের উপর।
যেভাবে ক্ষতি হচ্ছে:
১. কাঁচা মাংসে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে—দোকানে যেভাবে একাধিক মুরগিকে এক সঙ্গে রাখা হয় তাতে একটা থেকে অারেকটার শরীরে সেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলি প্রবেশ করাটা অস্বাভাবিক নয়। সেটি আসলে হয়ই। তাছাড়া এইসব মুরগীর বাতিল অংশ যেভাবে যেখানে সেখানে ফেলা হয় সেটিও ঝুঁকির অারেকটি দিক।
২. আগেই বলা হয়েছে যে ব্রয়লার মুরগিদের অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেওয়া হয়। ফলে এমন ধরনের মুরগি বেশি খেলে আমাদের শরীরেও অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স তৈরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩. মাত্রাতিরিক্ত ব্রয়লার মুরগি খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। এটা অনেক বিশেষজ্ঞের মতামত।
৪. ব্রয়লার মুরগিদের যেভাবে বড় করা হয় বা তাদের মোটা তাজা করার জন্য যে পদ্ধিত অনুসরণ করা হয় তা মোটেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। এ ক্ষেত্রে এমন কিছু কেমিক্যাল মুরগির শরীরে ঢোকানো হয়, যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে নানা রকমের জটিল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৫. ব্রয়লার চিকেন খেলে ফুড পয়জনিং হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। একাধিক গবেষণয়া দেখা গেছে প্রায় ৬৭ শতাংশ ব্রয়লার মুরগির শরীরে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো নয়।
বিদেশী পত্রিকা এবং গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা তথ্য অবলম্বনে