জীবনযাপন-১: কেনাকাটা

মি. দ্বীপ আজ সকালে দোকানে গিয়েছে একটি শাড়ি কিনতে। সে দোকানের প্রথম কাস্টমার। দোকানদার খুব খাতির করছে। টুল পেতে তাকে বসতে দিয়েছে। চায়ের যত্ন করছে আকছার। বিভিন্ন শাড়ী দেখাচ্ছে, কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না। এটা দোকানদারদের একটা স্ট্রাটেজি। প্রথমে এমন সব শাড়ি দেখাবে, যেটা আপনার পছন্দ হবে না। এরপর বলবে, আরো ভালো দেখাবো? আরো ভাল বলতে— আরো দামী।

দ্বীপ এবার নিজেই একটা শাড়ি দেখিয়ে নামাতে বলল। দোকানদার বলে, “স্যার, আপনি আসলে শাড়ি চেনেন।” দিয়ে দিল কিন্তু। দাম লেখা আছে আঠারো শো পঞ্চাশ টাকা। ক্যালকুলেটর চেপে দশ পার্সেন্ট ছাড় দিল। দোকানদার এবার এই শাড়ির প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অন্য শাড়ি দেখাতে শুরু করল, কারণ, সে বুঝে গেছে এই শাড়িটা দ্বীপের পছন্দ হয়েছে।

ক্রেতার গরজ বোঝার এটা একটা পদ্ধতি। দ্বীপ আবার ঐ শাড়ির প্রসঙ্গে আসল এবং দাম বলতে চাইল। নয়শো টাকা দাম বললে দোকানদার এমন ভাব করল যেন শুধুমাত্র স্যার বলে খারাপ কিছু বলা থেকে সে বিরত থাকল।

দ্বীপ বেরিয়ে যেতে চাইল। এবার দোকানদারের সহকর্মী বলে, “স্যার, আর কিছু বাড়াতে পারলে আইসেন।” দ্বীপ ফিরল না, এবার দোকানদার ডেকে বলে, “আচ্ছা আর একশো টাকা দেন।”

দ্বীপ রাজি হল না, দোকানদার বলে, কি আর করা, দিনের প্রথম কাস্টমার লস হলেও ছাড়া যায় না। শাড়িটা দিয়ে দিল। বললেন, আবার আসিয়েন। আবার চা খেতেও বললেন। লসে শাড়ি বেঁচলেন, আবার চাও খাওয়ালেন! সত্য যুগ বৈকি। জীবন আসলেই সুন্দর, ক্রেতার দিক থেকেও সুন্দর, বিক্রেতার দিক থেকেও, যদি একে অপরের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিটা শুধু থাকে। এগুলো ছল না, প্রতারণাও না, বাঁচার তাগিদে এতটুকু মানুষ করতেই পারে। এগুলো জীবনের সৌন্দর্য বৈকি।