‘সুইসাইড নোট’ লিখে চলচ্চিত্র নির্মাতার আত্মহত্যা!
প্রথম আলো পত্রিকার খবরের শিরোনাম এগুলো । ধরুণ, আপনি ফেসবুকের নিউজফিডে এটি দেখতে পেলেন, কিন্তু পড়লেন না, তাহলে অপনার কী ধারণা হবে? একজন সাধারণ মানুষ যদি খবরের ভেতরে না যায়, তাহলে কী ধারণা করবে? এমনটি ভাবাই যৌক্তিক যে বেশিরভাগ মানুষ খবরটি ভেতরে না পড়লে ধরে নেবে ঘটনাগুলো বাংলাদেশে ঘটেছে। কিন্তু খবরগুলো ভারতের।
ভয়ঙ্কর হচ্ছে ফরহাদ মজহারকে নিয়ে করা প্রথম আলোর ১২ জুলাই ২০১৭ তারিখের খবরের ফেসবুক শেয়ার। সেখানে শিরোনাম দেখা যাচ্ছে–
প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেজে ফরহাদ মজহারকে নিয়ে এভাবে একটি খবর শেয়ার করেছে। অপহরণের ঘটনা আড়াল করতে নারীকে দিয়ে স্বীকারোক্তি। সত্য হচ্ছে, এটি ফরহাদ মজহারের পরিবারের অভিযোগ। এই খবরটির শিরোনাম দেখে কি বোঝার উপায় আছে যে এটি মজহারের পরিবারের অভিযোগ? মনে হবে, এটিই উদঘাটিত সত্য, তাই নয় কি?
যেহেতু ফরহাদ মজহারের ঘটনাটি নিয়ে তদন্তের বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে তাই তাকে নিয়ে প্রথম আলো এ ধরনের চাতুর্যপুর্ণ খবর পরিবেশেন করে অাসলে মিস্টার মজহারের পক্ষাবলম্বন করতে চেয়েছে। যেহেতু তার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় অভিযোগ না, একজন নারীর পক্ষ থেকে স্বাকারোক্তিমূলক জবানবন্দী পাওয়া গেছে সেক্ষেত্রে প্রথম আলোর এ ধরনের খবর পরিবেশন তাদেরকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে প্রতিপন্ন করে।
তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? দাঁড়াচ্ছে, খবরের অনেক শিরোনাম জনসাধরণের সাথে প্রতারণা করেছে। খবর তো আর প্রতারণা করে না, প্রতারণা করেছে খবরের নির্মাতারা। এমন শিরোনাম প্রথম আলো পত্রিকায় খুব বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে এই ফেসবুক জমানায় তাদের পেজে। কোনো কোনো সময় তারা শুধুমাত্র হিট বাড়ানোর জন্য এটি করে বলে মনে হয়, আবার কখনো কখনো হয়ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকে, যেটি ফরহাদ মজহারের খবর পরিবেশনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।
অনেক অখ্যাত নিউজপোর্টাল তো এসব করছেই, কিন্তু ‘খ্যাত এবং পরিচিত’ রাও এ ধরনের চটকাদার-বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দিয়ে ফেসবুকে নিউজ শেয়ার করছে।
যেমন, নিচের এই শিরোনামটি–
ঢামেক হাসপাতালে দর্শনার্থী প্রবেশে লাগবে ২০০ টাকার পাস -বাংলা ট্রিবিউন পত্রিকার একটি খবরের শিরোনাম এটি। অথচ প্রকৃত খবরটি হল–
এটা খুবই স্বাভাবিক ফেসবুকের নিউজফিডে শিরোনামটি অনেকের চোখে পড়বে, কিন্তু সবাই পড়বে না। যারা পড়বে না তারা কী ধারণা করবে? অনেকেই শিরোনামটি আক্ষরিক অর্থে নেবে। হয়ত এই শিরোনামটি ধরে অনেকে আলোচনা-সমালোচনায় মেতে উঠবে।
এ খবরটির শিরোনাম হওয়া উচিৎ ছিল- “ঢামেক হাসপাতালে দর্শনার্থী প্রবেশে লাগবে ফেরৎযোগ্য ২০০ টাকার পাস” বা কোনো ভুল বার্তা না দেয় সেরকম অন্য কোনো শিরোনাম।
বাংলা ট্রিবিউনের খবরের আরেকটি শিরোনাম দেখুন, “মৃত মায়ের গর্ভে ১২৩ দিন থাকার পর জমজ শিশুর জন্ম”
“বিষয়টি হচ্ছে, সেরিব্রাল হেমোরেজের কারলে ব্রাজিলের অধিবাসী ফ্রাঙ্কলিন ডি সিলভার মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটে। তাঁর গর্ভে তুখন দুই সন্তান ছিল। মতিষ্কের মৃত্যু সত্ত্বেও তার গর্ভেই দুই সন্তার বাঁচিয়ে রাখা হয় দুই অনাগত শিশুকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে, ওই দুই শিশু পৃথিবীর আলো দেখেছে অবশেষে।”
এই খবরটির শিরোনাম কি অমন হতে পারে? ‘মস্তিষ্কের মৃত্য’ কথাটি শিরোনামে উল্লেখ করা উচিৎ ছিল না?
প্রথম আলো পত্রিকার আরেকটি শিরোনাম দেখুন, নীল চোখের চা-ওয়ালা ভুয়া? অনেকদিন আগের আলোচিত তবে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা নয়, এমন এই সংবাদটি নিয়ে তারা আবার নিউজ করেছে, কিন্তু কীভাবে নিউজটি করেছে?
শিরোনাম পড়ে মনে হবে আরশাদ নামের ঐ যুবকের ঘটনাটি ছিল ভুয়া, কিন্তু তা আসলে নয়, ভেতর পড়ে জানা যাচ্ছে, আরশাদ পাকিস্তানের নাগরিক নাকি আফগানিস্তানের নাগরিক সে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই খবরটির শিরোনাম কি ওটি হতে পারে?