‘নিরাপদ খাদ্য’ বিষয়টি খাদ্য উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ, খাদ্য প্রস্তুতকরণ এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণের সাথে জড়িত। খাবার ও পানীয়তে সাধারণত ভেজাল মেশানো হয়। বিভিন্ন উপায়ে খাবার দূষিত হয়। খাবারে থাকতে পারে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক উপাদান। ফলে এ ধরনের খাদ্য মানবদেহের জন্য গ্রহণের অনুপযোগী হয়ে পড়ে, কারণ, তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। খাদ্যবাহিত অসুস্থতা অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরোত্তোর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের বিষয়টি প্রাধান্য পাওয়া দরকার। বেশিরভাগ দেশে খাদ্য বাজারজাতকরণের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো রয়েছে। বাংলাদেশের ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ’ কর্তৃপক্ষ এবং ‘বিএসটিআই’-এর মতো অনেক কর্তৃপক্ষ রয়েছে, যাদের ‘নিরাপদ খাদ্য’ নিশ্চিতকরণে মূখ্য ভূমিকা পালন করার কথা। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ভূমিকা রাখছে এমন প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোগের ঘাটতি থাকায় ‘নিরাপদ খাদ্য’ বিষয়ে ভোক্তারাও সচেতন নয়। বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে অন্যতম সমস্যা ‘নিরাপদ খাদ্য’। আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং জনসচেতনতার অভাব থাকায় কৃষক, কারখানা অথবা ভোক্তা পর্যায়ে ঘটছে খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের দূষণ। অনিরাপদ খাদ্যের কারণে বাংলাদেশের জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, গবেষণা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ বলতে খাদ্যবাহিত অসুস্থতা প্রতিরোধ করতে খাদ্য ব্যবহার, প্রস্তুতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং সম্পর্কিত জ্ঞান বোঝায়। খাদ্যজনিত অসুস্থতা বা খাদ্যবাহিত রোগকে বলা হয় খাদ্যে বিষক্রিয়া। খাদ্যবাহিত রোগে তাৎক্ষণিকভাবে কেউ আক্রান্ত হতে পারে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে আক্রান্ত না হয়ে ধীরে ধীরে খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলস্বরূপ শরীর রোগাক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত খাদ্যজনিত তাৎক্ষণিক অসুস্থতাগুলো ঘটে খাদ্যের সঠিকভাবে সরবরাহ, তৈরি ও সংরক্ষণ করা না হলে। যেকোনো খাবার যথাযথভাবে রান্নার পরও তা জীবাণুযুক্ত হতে পারে। সাধারণত ৪ ডিগ্রি থেকে ৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কোনো খাবার রাখা হলে সে খাদ্যে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা মারাত্মক আকারে বৃদ্ধি পেতে পারে। এজন্য খাদ্যের বিষয়ক্রিয়াজনিত তাৎক্ষণিক ঝুঁকি এড়াতে খাদ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরী। খাদ্যের অন্যান্য বিষক্রিয়াজনিত সমস্যাগুলো সাধারণত একটি জটিল প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত। যেমন, সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে আমরা যে দূধ এবং মাছ-মাংস খাচ্ছি, তা থেকে শরীরে ঢুকতে পারে এন্টিবায়োটিক, এর ফলে শরীরে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বা সুপারবাগ তৈরি হয়। এভাবে পৃথিবীতে নিরবে অনেক মৃত্যু হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, বিশ্বে যে পরিমাণ এন্টিবায়োটিক তৈরি হয় তার প্রায় অর্ধেকই ব্যবহৃত হয় খাদ্য হিসেবে মাছ এবং পশু-পাখি উৎপাদনে। ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে মোট ৯০০ রোগী ভর্তি হয়েছিলো, যাদের মধ্যে ৪০০ জন মারা যায়। এদের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, তাদের শরীরে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বা সুপারবাগের উপস্থিতি রয়েছে। ফলে আপনি যা খাচ্ছেন তা আপনার জন্য বয়ে আনতে পারে ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সরকারের জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধীনস্থ ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গাভির খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেটজাত দুধ নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী জরিপ পরিচালনা করে। এ জরিপে কিছু উদ্বেগজনক বিষয় উঠে এসেছে। খোলাবাজারে এবং নামী-দামী কোম্পানির নামে গাভির যে তরল দুধ বিক্রি হয়, তাতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক, সিসা ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আরও পাওয়া গেছে আলফাটক্সিন এবং বিভিন্ন ধরনের অণুজীব। তরল দুধ ছাড়া দইয়েও পাওয়া গেছে অতিরিক্ত সিসা ও অণুজীব। দুধ ও দইয়ের এসব উপাদান জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরদের মতে মানবদেহে এসব উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার বিকল হওয়া এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে পড়ার মতো মারাত্মক সব রোগের কারণ হতে পারে।
স্বাস্থ্যের জন্য খাদ্যবাহিত সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা আবশ্যক। খাদ্য প্রতিরক্ষা এবং আইন প্রয়োগ আরেকটি সংশ্লিষ্ট ধারণা, যেখানে খাদ্যে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটানো’ কিংবা ভেজাল মেশানো প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। খাদ্য সুরক্ষা (নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ) ও খাদ্য প্রতিরক্ষা একত্রে ভোক্তাদের স্বাস্থ্যজনিত ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে। খাদ্য সুরক্ষাকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো শিল্পকারখানা থেকে বাজার পর্যন্ত সুরক্ষা। অপরটি হলো বাজার থেকে ক্রেতা বা ভোক্তা পর্যন্ত সুরক্ষা। শিল্পকারখানা থেকে বাজার পর্যন্ত খাদ্য সুরক্ষার মধ্যে খাদ্যের উৎস, খাদ্যের মোড়কের উপর তথ্য ছাপানো, খাদ্যের স্বাস্থ্যবিধি, খাদ্যে রুচিস্বাদবর্ধকের ব্যবহার, খাদ্যে কীটনাশকের অবশিষ্ট, জৈবপ্রযুক্তি দ্বারা উৎপন্ন খাদ্য সংক্রান্ত নীতি, আমদানিকৃত ও রপ্তানিকৃত খাদ্য সরকারের পর্যবেক্ষণ এবং খাদ্য প্রতয়ন ব্যবস্থা, ইত্যাদি বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ। বাজার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত খাদ্য সুরক্ষার রীতিনীতি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা হলো যে, খাদ্যকে বাজারে অবশ্যই সুরক্ষিত থাকতে হবে এবং ভোক্তার কাছে নিরাপদে খাদ্য সরবরাহ করা বা ভোক্তার জন্য নিরাপদে খাদ্য প্রস্তুত করা সরবরাহকারীদের অবশ্য পালনীয় একটি বিষয়।
খাদ্যের মাধ্যমে রোগজীবাণু পরিবাহিত হয়ে কোনো ব্যক্তি বা পশুর অসুস্থতা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। প্রধান প্রধান রোগজীবাণুগুলি হলো ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছাতা ও ছত্রাক। এছাড়া খাদ্য রোগজীবাণুগুলির জন্য বৃদ্ধি ও প্রজননের উর্বর মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। উন্নত দেশগুলিতে খাদ্য প্রস্তুতকরণের ওপরে স্টান্ডার্ড মান নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এবং এর বিপরীতে অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলিতে মানের নিয়ন্ত্রণ কম এবং সংশ্লিষ্ট আইন এবং নীতি বলপূর্বক প্রয়োগও করা হয় কম। আরেকটি সমস্যা হলো পর্যাপ্ত সুপেয় পানি বা পানীয় জলের অভাব, যা রোগ ছড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাত্ত্বিকভাবে খাদ্যের বিষক্রিয়া শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যক্তির সংখ্যাধিক্যের কারণে এবং সমস্ত সাবধানতা অবলম্বনের পরেও রোগজীবাণু খাদ্যে প্রবেশের ঝুঁকি থাকে বলে এইরূপ প্রতিরোধ অর্জন করা দুরূহ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী খাদ্য সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধির পাঁচটি মূলনীতি নিম্নরূপ:
১. মানুষ, গৃহপালিত প্রাণী ও কীটপতঙ্গ থেকে রোগজীবাণু খাদ্যে সংক্রমণ হওয়া প্রতিরোধ করা;
২. কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা করে রাখা যাতে রান্না করা খাবারে জীবাণুর সংক্রমণ না হতে পারে;
৩. পর্যাপ্ত সময় ধরে ও যথাযথ তাপমাত্রায় খাদ্য রান্না করা যাতে খাদ্যের রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়;
৪. সঠিক তাপমাত্রায় খাদ্য সংরক্ষণ করা;
৫. নিরাপদ পানি ও নিরাপদ কাঁচামাল ব্যবহার করা।
২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে দেশের নাগরিকের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ অনুমোদিত হয়। এই আইন বাস্তবায়নের জন্য নিরাপদ খাদ্য বিধিমালা ২০১৪ তৈরি হয়েছে। খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে। একই সঙ্গে ২০১৮ সালে অনুমোদিত হয়েছে ‘নিরাপদ খাদ্য (স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সংরক্ষণ) প্রবিধানমালা ২০১৮’। এই প্রেক্ষাপটে দেশে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন কিছুটা বাড়তে শুরু করলেও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো খুব নাজুক।
গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেস্ক বা ‘বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা সূচক-২০২০’-এ ১১৩ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। ২০১৯ সালে অবস্থান ছিল ৮৩তম। শুধু বৈশ্বিকভাবেই নয়, সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। এ সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ড। গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্সটি প্রস্তুত এবং প্রকাশ করে ‘ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’। দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত নেপাল এবং পাকিস্তানের অবস্থানও বাংলাদেশের উপরে।
গবেষণা সংস্থা গ্লোবক্যানের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে মারা যায় ৯১ হাজার ৩০০ জন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কিডনি জটিলতায় দেশে ২০১৯ সালে যত মানুষ মারা গেছে, তার প্রায় তিন গুণ মানুষ মারা গেছে ২০২০ সালে। ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৮ হাজার ১৭ জন। আর ২০১৯ সালে মারা গেছে ১০ হাজার ৬২২ জন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যার ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট।
জনবহুল দেশ হওয়ায় অল্প জায়গায় অধিক শস্য ফলাতে গিয়ে কৃষক জমিতে ব্যবহার করছে শংকর বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। অতিরিক্ত কীটনাশক, আগাছানাশক বা ছত্রাকনাশক মাটির অণুজীব থেকে শুরু করে শামুক-কেঁচোসহ নানা উপকারী প্রাণী মেরে ফেলছে। দূষিত করছে কৃষিজমি সহ সামগ্রিক পরিবেশ। ফলে মানবস্বাস্থ্য সহ অন্যান্য প্রাণবৈচিত্র ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে। জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে শেষ পর্যন্ত জলাশয়ের পানিতে গিয়ে মিশছে। এতে মাছ মরে যাওয়া ছাড়াও অন্যান্য জলজ প্রাণী ও জলচর পাখিদের জন্যও খাদ্যসংকট তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ আয়তনে ছোট ও দুর্যোগপূর্ণ দেশ হলেও জনবহুলতার কারণে বিশ্বের ক্ষমতাশীল দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্য উৎপাদন করতে হয়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের কারণে অর্গানিক বা জৈব কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন ও বাজার আশানুরূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে না। মাঠ থেকে ভোক্তা পর্যন্ত খাদ্যকে কীটনাশক সহ সকল প্রকার ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত রাখতে হলে সব খাদ্য ও পানীয় নিয়মিত পরীক্ষা ও ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করা প্রয়োজন। একইসাথে ভেজালবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করতে হবে।
খাদ্যবাহিত রোগ প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১০ জনের মধ্যে ১ জনকে প্রভাবিত করে। ডায়রিয়া থেকে ক্যান্সার অনিরাপদ খাদ্যের জন্য হচ্ছে এমন রোগ সণাক্ত করা হয়েছে ২০০ টিরও বেশি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ২০১৮ সালে বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবস প্রতিষ্ঠা করে। WHO এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর সদস্য রাষ্ট্র এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে যৌথভাবে বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবস পালন করা হচ্ছে। এই দিনে ডব্লিউএইচও খাদ্যকে নিরাপদ করার জন্য একাধিক সেক্টরে নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানায়। নীতিনির্ধারকদের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য এবং তারা (খাদ্য উৎপাদনকারী এবং খাদ্য ব্যবসায়ীরা) যাতে খাদ্য নিরাপত্তার মান মেনে চলতে বাধ্য হয় এজন্য জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করতে আহ্বান জানায়। খাদ্য ব্যবসাকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক খাদ্য মান মেনে চলতে হবে এবং নিরাপদ খাদ্য সংস্কৃতি বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য কর্মচারী, সরবরাহকারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের জড়িত করতে হবে। একইসাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ পরিচালনার জন্য প্রচার এবং নিরাপদ খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এবং ভোক্তাদের বাড়িতে নিরাপদ খাদ্য হ্যান্ডলিং অনুশীলন করতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান নাগরিকদের জন্য মৌলিক চাহিদা তথা অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করার অঙ্গিকার করেছে। এখানে অন্ন বলতে যেমন শুধু ভাত বুঝায় না, তেমনি খাদ্য বলতে অবশ্যই আমাদের নিরাপদ খাদ্য বুঝতে হবে। যে খাদ্য মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিসরূপ তা কখনো খাদ্য হতে পারে না। ফলে খাদ্য বলতে অবশ্যই নিরাপদ খাদ্য। রাষ্ট্রের পক্ষে মানুষের এ সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। মানুষের অনেক মৌলিক অধিকারের মতো বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি চরমভাবে অবহেলিত। বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা সূচকে উন্নতি করতে হলে অনিরাপদ খাদ্য সরবরাহের ওপর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ বাজারে অনিরাপদ খাদ্য সরবরাহ বন্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বিএসটিআই সনদ দেওয়ার সময় যেমন সঠিকভাবে খাদ্যমান যাচাইবাছাই করছে না, আবার সময়ে সময়ে খাদ্যমান ঠিক আছে কিনা সেটিও যাচাই করছে না। বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবসে (৭ জুন) ২০২১ সালের স্লোগান ছিলো— ‘আজকের নিরাপদ খাদ্য আগামীর স্বাস্থ্য’। ২০২২ সালের স্লোগান— ‘অধিকতর নিরাপদ খাবার, অধিকতর ভালো স্বাস্থ্য।’ তবে শুধু স্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে খাদ্য নিরাপদ হবে না, প্রয়োজন সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে মাঠ পর্যায় থেকে ডাটা সংগ্রহ করে গবেষণা এবং সেই মোতাবেক আইনের সঠিক প্রয়োগ।
অনলাইন অবলম্বনে দিব্যেন্দু দ্বীপ