আপনার বিশ্বাস নিয়ে আমি প্রশ্ন উঠাই না, আমার বিশ্বাস নিয়েও আপনি প্রশ্ন না উঠালে কৃতজ্ঞ থাকব

শিক্ষক ও লেখক

আপনাদের অনেকের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা হারানোর ঝুঁকি নিয়েই এখন কিছু কথা বলব— অনেকে আমাকে বারবার বলছেন এই বিপদের দিনে স্রষ্টাকে স্মরণ করতে, কেন করছি না তাও অনেকে জানতে চেয়েছেন। দয়া করে কেউ এটাকে ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না, কারণ, এই মিছিলে আপনি একা নন। অনেকের কাছে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই কথাগুলো বলতে এসেছি।

আপনারা যারা প্রতিটা পোস্টে, প্রতিটা বার্তায়, প্রতিটা মন্তব্যে স্রষ্টাকে স্মরণ করছেন, তাদের প্রতি কি আমি একবারও অশ্রদ্ধা দেখিয়েছি? কোনো বিরূপ মন্তব্য করেছি? স্রষ্টাকে স্মরণ না করার পরামর্শ দিয়েছি কখনো? আমি যদি আপনাদেরকে আপনাদের মতো থাকতে দিই, আমাকে কেন আপনারা আমার মতো থাকতে দেবেন না?

জীবনে অনেক বিপদে পড়েছি, বিপদ থেকে বেঁচে ফিরে এসেছি এবং যথাস্থানে কৃতজ্ঞতা পৌঁছে দেবার চেষ্টাও করেছি। আমার কাছে স্রষ্টা অচেনা অজানা ভীতিকর দূরবর্তী কেউ নন। আমার কাছে তার প্রকাশ জাগতিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া, পন্থা এবং সেগুলোর আবিষ্কারক ও প্রচারকদের মাধ্যমে, সাহায্যকারী সকল মানুষের মাধ্যমে। স্রষ্টা এবং সৃষ্টি আমার কাছে আলাদা কিছু নয়। আমি যখন ডাক্তারদের প্রতি, বিজ্ঞানীদের প্রতি, ওষুধের প্রতি, গাছ-ফুল-পাখিদের প্রতি, সকালে উদিত সূর্যের উষ্ণতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, সেটাই স্রষ্টার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।

স্রষ্টা যদি সর্বজ্ঞ হন, তিনি জানেন এই মুহূর্তে আমি বিপদে আছি, এবং আমাকে বাঁচানোর প্রয়োজন বোধ করলে তিনি নিজেই এগিয়ে আসবেন বলে মনে করি। ডাকাডাকি করে তার কাজে বিঘ্ন ঘটানোর কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আমি অতি ক্ষুদ্র, বুদ্ধিহীন একজন মানুষ। আমার সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতা আছে বলে মনে করলে তিনি নিজেই এগিয়ে আসবেন —এটুকু মাহাত্ম এবং সহমর্মিতার কৃতিত্ব আমি তাকে দিতে চাই। আমি তাকে আমার সম্পর্কে বেখবর ভাবি না, আমি তার কাছে কাচুমাচু হয়ে প্রার্থনা না জানানো পর্যন্ত তিনি টলবেন না অতটা নিষ্ঠুরও তাকে ভাবি না।

আমি বা আমার সন্তান করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে দোষ হবে করোনার জন্মদাতা প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কোনো সমস্যার, যদি বেঁচে থাকি সেই কৃতিত্ব হবে আমাকে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং আমি মেনে চলতে পেরেছি সেগুলোর, আমার শক্ত ইমিউন সিস্টেমের। এই বিষয়ে স্রষ্টাকে সব ধরনের দায়বদ্ধতা থেকে আমি মুক্তি দিয়ে রাখতে চাই।

আমার স্রষ্টা বিষয়ক ভাবনা আপনার সাথে বা প্রচলিত ধর্মগুলোর সাথে মিলতেই হবে –এমন কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা উচিৎ বলে আমি মনে করি না। আপনার বিশ্বাস নিয়ে আমি প্রশ্ন উঠাই না, আমার বিশ্বাস নিয়েও আপনি প্রশ্ন না উঠালে কৃতজ্ঞ থাকব, বিশেষ করে এই কঠিন সময়ে। আমি ধর্মপ্রচারক নই, আমি একজন সাধারণ মানুষ যে আপনারই মতো একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে ভান, ভণিতা, তর্কবিতর্ক করার শারীরিক বা মানসিক শক্তি আমার নেই, কারোরই থাকার কথা নয়। আপনি যদি স্রষ্টায় বিশ্বাস করেন, তাহলে উনার খাতিরে এই সময়টা সবাইকে তার নিজের মতো থাকতে দিন।


জেসমিন চৌধুরী  Jesmin Chowdhury