‘এজেন্ডা অব এনিহিলেশন এন্ড অকুপেশন’

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান

দিব্যেন্দু দ্বীপ


কোনোকিছু সত্য মানলে সেটাকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে হয়। জনগণ পছন্দ করছে না বলে পাল্টি দিয়ে দিলেন, তাহলে তো সমস্যা। দেশের কিছু বামপন্থী এবং ধর্ম নিরপেক্ষ আওয়ামীলীগের কিছু নেতা এখন বলতে শুরু করেছেন, ধর্মের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই, এটা বামনেতাদের কথা। আওয়ামীলীগ ঐ নেতারা বলছে, ‘ধর্মীয় অনুভূতি’ হিহিহি, এটা তো রক্ষা করতেই হবে … তবে কাউকে হত্যা করা যাবে না। একেবারে লেজওয়ালা কথাবার্তা এগুলো।

আওয়ামীলীগ বলতে পারে, কারণ মেনিফেস্টো যাইহোক না কেন কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে তারা ক্ষমতার তথা সুবিধাবাদের রাজনীতিই করে। কিন্তু বামদের বেলায়? ধর্মের সাথে আপনাদের কোনো বিরোধ নেই মানে? বাম রাজনীতির অন্যতম প্রধান ডিক্লারেশন হচ্ছে— মানুষে মানুষে ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকতে পারবে না, সেক্ষেত্রে সমাজ জীবনে হিন্দু ধর্ম, ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম ইত্যাদি ধর্ম থাকে কীভাবে?

এখানে ধর্মীয় সহাবস্থানেরও কোনো সুযোগ নেই। সামনে ধর্মীয় সহাবস্থান পিছনে চাপাতি-ছুরি, এরকম কোনো তত্ত্বের জায়গা মানুষবাদী রাজনীতিতে থাকার কথা নয়। সম্প্রদায় থাকলে সাম্প্রদায়ীকতা থাকবে, চাপাতি ছুরিও থাকবে।

মূল কথা হচ্ছে— শুধু মানুষের ধর্ম থাকবে, আর কোনো ধর্ম (কাল্পনিক কোনো ধর্ম) থাকতে পারবে না। ব্যক্তিগত ঈশ্বর থাকতে পারে, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক এবং সামষ্টিক ঈশ্বর থাকতে পারবে না। নাস্তিকদের বক্তব্যও কিন্তু একই। তবে বাংলাদেশী নাস্তিকদের কথা ভিন্ন, এরা কেউ হিন্দু নাস্তিক, কেউ মুসলিম নাস্তিক, অর্থাৎ নাস্তিক হলেও বেশিরভাগ তারা সাম্প্রদায়িক।

বাম রাজনীতির সাথে এবং নাস্তিকতার সাথে ধর্মীয় জঙ্গিবাদীদের বিভেদটা খুব স্পষ্ট। ধর্মীয় জঙ্গিবাদীরা কী বলে? কট্টর মুসলিমরা বলে পৃথিবীটা মুসলিমদের দখলে আসতে হবে, সরাসরি না বললেও খ্রিস্টানদের মনোভাবও তাই, হিন্দুদের অতটা কাভারেজ নেই বলে তারা এভাবে ভাবতে চায় না, তবে অতি কট্টররা এই ভাবনার বাইরেও নয়।

অর্থাৎ এই ধর্মগুলোর অন্তর্নিহীত তাৎপর্য হচ্ছে, ‘এজেন্ডা অব এনিহিলেশন এন্ড অকুপেশন’। এই যে কট্টরদের পৃথিবীজুড়ে এক এবং অদ্বিতীয় হওয়ার বাসনা, এটা কি নাখাবুখা জনগণের বাসনা? মোটেই তা না। শিক্ষিত চৌকষ বুদ্ধিজীবী ঘরানার লোকেরাই এই ধারণার পালে হাওয়া দেয়, পিছনে তারা ‘আসল ধর্ম’ হয়ে বসে থাকে, সামনে ‘নকল ধর্ম’ চাপাতি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে।

একথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে এ ধরেনের হত্যাকাণ্ডে নীরব ঘাতকের ভূমিকা পালন করে ‘আমি এবং আমরাই’ তত্ত্বের ধারক বুদ্ধিজীবীরা। এই সত্যগুলো স্বীকার না করে গোজামিল দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, জঙ্গিবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ করা। তারা আপনাকে দিয়ে এই কথাই বলাতে চেয়েছে এবং বলাতে সমর্থ হয়েছে যে ‘এটা আসল ধর্ম নয়’। ওরা ‘নকল ধর্ম’ দিয়ে নিধন করবে, আর আপনারা ‘আসল ধর্মর’ দুধ-মধু চুষবেন, এটাই তো মূল কথা, নাকি?