মানব মুক্তির জন্য কাজ করেছিলেন ট্রান্সসেনডেনটালিস্টরা

220px-Emerson_by_Johnson_1846-crop
রালফ ওয়াল্ডো এমারসন

ইউরোপ আমেরিকা এমনি এমনি ইউরোপ আমেরিকা হয়ে ওঠেনি। নিঃসন্দেহে তারা এখন আমাদের তুলনায় উন্নত এবং নাগরিক হিসেবে সভ্য। তবে এই সভ্যতারও লম্বা একটা ইতিহাস আছে। আজকে যেমন আমাদের দেশে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে, ধর্মের অবমাননাকারী আখ্যা দিয়ে শুভবোধ সম্পন্ন মানুষদের হত্যা করা হয়, দু’শো বছর এবং তারও আগে ইউরোপ আমেরিকায়ও তা করা হত।

১৮২০-১৮৩০ সালের দিকে আমেরিকায় ‘ট্রান্সসেনডেন্টালিজম’ নামে একটি মতবাদ বিস্তার লাভ করে। এটি ছিল ইউরোপের ‘রোমান্টিসিজম’, ডেভিড হিউমের ‘সন্দেহবাদ’ এবং ইমানুয়েল কান্টের ‘ট্রান্সসেনডাল’ মতবাদের একটি মিউটেশন। ইন্ডিয়ার ফিলসফি থেকেও ট্রান্সসেনডেনটালিস্টরা কনটেন্ট করেছিল। বিশেষ করে উপনিষদ (উপনিষদ বা বেদ ধর্ম নয়, দর্শন ) থেকে।

আমেরিকায় তখনও চার্চের একচ্ছত্র আধিপত্য। চার্চের বাইরে গিয়ে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করার সুযোগ ছিল না। বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য রালফ ওয়াল্ডো এমারসন, হেনরি ডেভিড থরো, মার্গারেট ফুলার প্রমুখ অনুভব করলেন শুধু বিচ্ছিন্ন এবং ব্যক্তিগত চর্চার মাধ্যমে চার্চের আধিপত্য থেকে বের হয়ে এসে মানব মুক্তি ঘটানো সম্ভব নয়। তারা সঙ্গবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন এবং গঠন করেছিলেন ট্রান্সসেনডেনটালিস্ট ক্লাব। প্রথমে ক্লাবের অন্যতম উদ্যোক্তা ফ্রেডেরিক হেনরি হেজের নামানুসারে ক্লাবটির নাম ছিল—”Hedge’s Club

ক্লাবটির নাম ট্রান্সসেনডেনটালিস্ট দিয়েছিল মূলত জনগণ। এটি ঐ অর্থে কোনো ক্লাব ছিল না, যারা সম্মিলিতভাবে বিশেষ কোনো কর্মসূচি হাতে নিত। সবাই যার যার জায়গা থেকে কাজ করতেন। মাঝে মাঝে সমমনারা একত্রিত হতেন, এতে কাজের প্রতি প্রত্যেকের কমিটমেন্ট তৈরি হত, এবং সাহস-উৎসাহ বাড়ত। এ সম্পর্কে হেজ লিখেছেন, “There was no club in the strict sense… only occasional meetings of like-minded men and women”

ট্রান্সসেনডেনটালিস্টদের লেখাগুলো তখনকার সাময়িকপত্রগুলো ছাপত না, বা ছাপতে সাহস পেত না। এই অবস্থায় ক্লাব নিজস্ব সাময়িকপত্র বের করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই সময় ব্রাউনসন নামে এক ভদ্রলোক এগিয়ে আসেন, যিনি তখন “বোস্টন কোয়র্টালি রিভিউ” ছাপতেন। এই পত্রিকাটিকে তিনি ক্লাবের কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন, তবে হেজ, পার্কার এবং এমারসন প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। ১৯৪০ সালে “The Dial” নামে ক্লাবের নিজস্ব পত্রিকা বের হয়। এমারসন পত্রিকাটির জন্য “”Journal in a new spirit” শিরোণামে ভূমিকা লিখেছিলেন। অর্থের অভাবে ১৮৪৪ সালে “দ্যা ডায়াল” বন্ধ হয়ে যায়।

[এমারসনের “Nature” নামক প্রবন্ধটি ছিল গ্রুপের মূল মেনিফেস্টো।]


দিব্যেন্দু দ্বীপ