না, আর লিখবোনা যুদ্ধাপরাধ, মৌলবাদ,দেশ, রাজনীতি নিয়ে। এমনিতেও লিখলে কিছুই হয়না শুধু মনের ঝালটা মিটাই। কিন্তু তাতেও নাকি অনুভূতি আহত হয়, ‘শান্তি’ বিনষ্ট হয়, উন্নয়ন ব্যাহত হয়। তাই এমন কিছু নিয়ে লিখতে হবে যাতে কারোই সমস্যা না হয়।
আচ্ছা গাছ-পালা নিয়ে লেখা যাক। আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় গাছের পরিমান অনেক কম। বিভিন্ন কারনে নিয়মিত বৃক্ষনিধন তো হচ্ছেই। গত বছর হেফাজৎ-শিবির আন্দোলনের নামে প্রচুর গাছ কেটেছিলো। সম্ভবত মরুভূমি তাদের পছন্দ বলেই গাছের প্রতি ক্ষোভ। তার উপর রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করলে সুন্দরবনের ঝুঁকি…
… একি, এসব কী লিখছি! না না এ লেখা চলবে না। শান্তি বিনষ্ট হবে, উন্নয়ন ব্যাহত হবে। অন্য কিছু নিয়ে লিখতে হবে…
…হুম শিক্ষা নিয়ে লেখা যায়। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। প্রতিবছর পাশের হার বাড়ছে কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার কী অবস্থা! ব্যাপক ভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। যেনতেন ভাবে পাশ করাকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মেধা মূল্যায়নের বালাই নেই। দেশে ত্রি স্তরের শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রচলিত…
…দূর, এ নিয়েও লেখা ঠিক হবে না। শিক্ষার হার তর তর করে বাড়ছে। এই অবস্থায় এমন লেখা মানে শিক্ষার উপর আঘাত…
…বরং ভ্রমন কাহিনী লিখি। কয়েকবছর আগে সীতাকুন্ডু গিয়েছিলাম। সেখান থেকে পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড়গুলো দেখা যায়। দেশের আদিবাসীদের উল্লেখযোগ্য অংশই সেখানে বাস করে। যদিও সেটেলার আর সেনাবাহিনীর আগ্রাসনে তারা বিপর্যস্ত।এছাড়াও অনেক আগে কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের সময় বিশাল এলাকা তলিয়ে গিয়েছিলো…
…সর্বনাশ, এসব লিখলে নির্ঘাত বিচ্ছিন্নবাদী রাষ্ট্রদোহী হয়ে যাবো! থাকুক আদিবাসীরা তাদের মতো। আমি নিরাপদ কিছু…
…পেয়েছি চলচ্চিত্র। আমাদের চলচ্চিত্রের অবস্থা খুবই বেহাল। যদিও গুটিকয় মানুষ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন তারেক মাসুদ। দুর্ভাগ্য বসত তাঁকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি। দেশের একটা শ্রেণী তাঁকে পছন্দ করে না। কারন তার চলচ্চিত্রে ধর্মীয় গোঁড়ামি, জঙ্গিবাদ স্থান পেয়েছিলো। তাঁর পরিচালিত মাটির ময়না ‘কান চলচ্চিত্র উৎসবে’ পুরস্কৃত হলেও তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার প্রথমে মুক্তি দিতে চায়নি ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে। পরে…
…অসম্ভব! আমার ঘাড়ে ক’টা মাথা যে ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়ে লিখবো? বরং…
…প্রেম, হ্যাঁ প্রেম-ভালোবাসা সবচেয়ে নিরাপদ বিষয়। কে না আছে জীবনে একবার হলেও প্রেম করে! অনেক ছেলে আছে যারা একের পর এক প্রেম করে। কিন্তু প্রতিবারই বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার পরই সম্পর্ক ভেঙে দেয়। অনেকে আবার অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। এসব ক্ষেত্রে শুধু মেয়েদেরই দোষারোপ করা হয়। ওই ছেলেগুলো ঠিকই বিয়ের ক্ষেত্রে অক্ষতযোনির মেয়ে খুঁজে। কিন্তু ওই মেয়েরা পরবর্তীতে খুব কমই স্বাভাবিক জীবন যাপন…
…নাহ; নারী অধিকার, নারী স্বাধীনতা এসব নিয়ে টু শব্দও করা যাবে না। সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে, ছেলে-মেয়েরা সব উচ্ছন্নে যাবে। সমাজ ঠিক থাক আমি…
…নিজেকে নিয়েই কিছু লেখা যাক। আমার জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য সুবিধাবাদিতা, দোদুল্যমানতা, স্বার্থপরতা সবই আমার মধ্যে আছে। তবু ভালো নিম্নবিত্ত বা কৃষক-শ্রমিক শ্রেণীতে জন্মাইনি। কৃষকরা পায়না ফসলের ন্যায্য মূল্য, শ্রমিকরা পায় না ন্যায্য মজুরী। সবচেয়ে বৃহত শিল্প খাত গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তাও নেই। কখনো ভবন ধ্বস, কখনো আগুন লেগে তারা গণহারে মারা যায়। তারপর লোক দেখানো উদ্ধার তৎপরতা, নামকাওয়াস্তে তদন্ত কমিটি, ক্ষতিপূরনের ভুয়া আশ্বাস, বিচারের নামে অভিযুক্তকে আড়াল করা এগুলো…
…উফ, আমার দ্বারা আসলেই লেখা সম্ভব না। কী সুন্দর করে তরতর করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমি কিনা বাগড়া দিতে বসেছি! এসব তো লেখে ষড়যন্ত্রকারীরা যারা দেশের শিল্প খাত ধ্বংস করতে চায়, কৃষি উন্নয়ন নশ্চ্যাৎ করতে চায়। বাস্তবতা ছেড়ে নাহয়…
.
..গল্প লিখি। এক যে ছিলো রাজা। এখন তো আর রাজার যুগ নেই। সর্বশেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় পরাজিত ও নির্মম ভাবে নিহত হয়েছিলেন। অবশ্য মীরজাফর তার কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করেছিলো অচিরেই। কিন্তু মীরজাফরের চেয়ে শতগুন ভয়ঙ্কর যুদ্ধাপরাধীরা অনেক বছর এ দেশে শান্তিতে বসবাস করেছে। ক্ষমতার স্বাদও নিয়েছে। বর্তমানে যদিও তাদের বিচার চলছে কিন্তু ধীর গতির ট্রাইব্যুনাল, যে কোন দিন রায়, সরকারের সাথে আঁতাতের অভিযোগ, শাহবাগ আন্দোলন…
…মাথা খারাপ! এসব নিয়ে লিখলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যাহত হবে। স্বাধীনতা বিরোধী, রাজাকারের দোসর তিলক পড়বে!
তাহলে কী নিয়ে লিখবো আমি! কেউ কি বলতে পারবেন কী নিয়ে লিখতে সরকার, রাজনৈতিক দল, মৌলবাদী, জনগণ, স্বাধীনতা পক্ষ-বিপক্ষ সব গোষ্ঠী শান্ত থাকবে? আছেন কি কেউ বুদ্ধি দেওয়ার মতো?
হ্যালো…
ওয়াশিকুর বাবু
20 November 2014