Headlines

পুরুষদের চাইতে নারীদের কাছে কনডম, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ থাকা বেশি জরুরী

কনডম, জন্মবিরতিকরণ পিল কেনারে আপনারা ট্যাবু করে রাখবেন, মানবশিশুরে জারজ সন্তান বলে গালি দিবেন, সিঙ্গেল মাদারকে বেশ্যা বলে সমাজচ্যূত করবেন আর ডাস্টবিনে নবজাতকের লাশ দেখে মানবতার গান গাইয়া উঠবেন, দুক্ষে মইরা যাবেন -এ হয় না, কিছুতেই হয় না। এ বড় হিপোক্রেসি, বড় দ্বিচারিতা।

Afrin Sharif Bithi

একজন পুরুষ ফার্মেসি থেকে কনডম কিনছে -এ দৃশ্য বড়জোর হাস্যকর বা লজ্জাষ্কর বা দৃষ্টিকটু হইতে পারে, কিন্তু এটা তাদের জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। চাল-ডাল কেনার মতো স্বাভাবিকভাবে পুরুষরাও কনডম কিনতে পারেনা। কিছুটা গোপনীয়তা, কিছুটা সংকোচ, কিছুটা লজ্জা থাকে হয়ত)। 

কিন্তু একজন নারী কনডম কিনছে, খাইছে! এ দৃশ্য তো লজ্জা শরমের দোহাই দিয়া তাবত দুনিয়ারে তৎক্ষনাৎ জাহান্নামে নিয়া যাবে! অথচ পুরুষদের চাইতে নারীদের কাছে কনডম, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ থাকা বেশি জরুরী, বেশি প্রাসঙ্গিক, বেশি যৌক্তিক, বেশি উচিৎ। কারণ, অপ্রত্যাশিত প্রেগন্যান্সির কারণে একজন পুরুষের কিছুই হয় না, যাবতীয় সমস্যায় ভুগতে হয় একজন নারীকেই।

আপনারা যেটারে অবৈধ মেলামেশা বলেন, সেই মেলামেশার ফলে এ্যাক্সিডেন্টলি যদি কোনো নারী গর্ভবতী হয়ে যায় সেই সন্তানরে পৃথিবীর মুখ দেখানোর মতো সামাজিক অবস্থা এ দেশে (শুধু এদেশেই না, অল্প কিছু জায়গা বাদে সারাবিশ্বেই এমন) আছে? নাই, কোনোভাবেই নাই।

তার উপর সেই সন্তানের স্পার্মওয়ালা যদি সেই নারীরে বা সন্তানরে অস্বীকার করে তাহলে তো কোনো উপায়ই আর থাকে না। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই হয়। মূর্খতা, অসচেতনতা, অশিক্ষা, দরিদ্রতা এসব তো আছেই। তো বাস্তব বিবেচনায় এইসব নারীরা অ্যাবরশন করতে বাধ্য হয়। অ্যাবরশন করতে না পারলে লুকাইয়া চুপাইয়া সন্তান জন্ম দিয়া জীবিত বা মৃত ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে যায়।

মোটকথা সার্বিক বিবেচনায় এ ধরনের কাজ করতে ওই নারীরা এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলে বাধ্য হয়। যে ডাক্তাররা বা নার্সরা এই কাজ করে তারা হয়তো টাকার বিনিময়ে করে। কিন্তু তারা যদি টাকার বিনিময়ে এই কাজ না করত তাহলে ওই নারীদের সন্তানসহ আত্মহত্যা করতে হইত, নয়তো সমাজই তাকে গলা টিপে মেরে ফেলত।

যার হাত পা ছুঁয়ে দেখে নাই, যার জন্য মায়া জন্মায় নাই, যার অস্তিত্বের কারণে নিজের জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়, যার জন্মই হইছে কোন বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে, যার জন্মের জন্য কোনো মধুর সম্পর্কও তিতা হইয়া গেছে সেই শরীরের অস্তিত্বের চাইতে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে তার নিজের জীবনই বেশি প্রিয় হবে, এটাই স্বাভাবিক, এটাই হয়ত বাস্তবতা। আর যে মায়েরা এসব করে তাদের যে কষ্ট হয় না এ কথাই বা আমরা ভাবি কী করে! কষ্ট হলেও, বুক ফেটে গেলেও তাদের কিছু করার থাকে না।

একটা জীবন্ত শরীরকে কেটেকুটে অ্যাবরশন করা বা জন্ম দিয়ে নবজাতককে মেরে ফেলে বা জীবিত রেখে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়াকে আমি সমর্থন করছি না, কোনোভাবেই করছি না। এই দৃশ্য আমি নিতে পারি না, বাস্তবেও না, কল্পনায়ও না।

আমি শুধু বলতে চাইছি, এই ধরনের কাজ করার কারণগুলা নিয়া আপনারা ভাবেন। জীবনযাপনের স্বাভাবিক বিষয়গুলারে সহজ করেন। লজ্জা শরমের ট্যাবু ভাঙেন। দুইটা মানুষের স্বেচ্ছা সম্পর্ককে অবৈধ মেলামেশা বইলেন না। জন্মবিরতিকরণ পিল, কনডম এসবরে নিয়া হাসি তামাশা কইরেন না, লজ্জার ব্যাপার ভাইবেন না। মানুষ যে লজ্জা পায়, ভয় পায় এটা মানুষের দোষ না। এই সমাজই তারে অহেতুক লজ্জা পাওয়া শিখায়। আর এই লজ্জা, ভয়ই পরবর্তীতে তারে জীবনমরণ প্রশ্নের সম্মুখীন করে। তখন তার আর কিছু করার থাকে না।

সুতরাং এই সমাজরে বদলাইতে হবে, ভাঙতে হবে। যে সমাজে কোনো মা তার সন্তানরে ডাস্টবিনে ফেলে যাইতে পারে না এমন একটা সমাজ গড়তে হবে। আপনাদের প্রত্যেকের অংশগ্রহণ ছাড়া এমন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।


আফরিন শরীফ বীথি   আফরিন শরিফ বিথী