বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ভুরিভুরি। আওয়ামী সরকার স্বজনপ্রীতি, দলবাজি এবং ঘুষ দুর্নীতির চূড়ান্ত করেছিলো এক্ষেত্রে। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে তো বটেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগেও দলবাজির পাশাপাশি হয়েছে ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়মের চূড়ান্ত। এ ধরনের সবচেয়ে বেশি হয়েছে নতুন হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। পাঠকদের জন্য পত্রিকা থেকে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো। মূল চিত্র এর চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ। ফলোআপ নিউজ গোপাগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পেরেছে সেখানে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী গোপালগঞ্জ জেলার। প্রতিটি নিয়োগে হয়েছে ঘুষ-দুর্নীতি। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। এর বাইরে উপাচার্য নিয়োগে দলবাজি এবং দুর্নীতির কথা তো সবারই জানা।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এই অনিয়মের অভিযোগ তোলার পর তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠিত কমিটি। নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে আদালতে মামলাও করেছেন এক চাকরিপ্রত্যাশী।
সরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা নানা সময়ে আলোচিত হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও এর বাইরে নেই। মঙ্গলবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ বছর আগে নিয়োগ পাওয়া এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
স্বজনপ্রীতি ও নিয়মবহির্ভূত নিয়োগে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স দুটোতেই প্রথম হওয়ার পর সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে ভাইভা দেই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ততদিনে আমার তিনটা পাবলিকেশনও ছিল। নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন তৎকালীন ভিসি ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবুল হোসেনসহ মোট ৫ জন।
ডেইলি ক্যাম্পাস, ৯ এপ্রিল ২০২৪
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে ‘সোচ্চার’ হয়ে বরখাস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনিয়মকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে পবিপ্রবির এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছরের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে পোস্টার টানানো হয়। ওই পোস্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ করা হয়েছে। এ পোস্টার লাগানোর ঘটনায় শিক্ষক মেহেদী হাসানকে অভিযুক্ত করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে সৈয়দা আছিয়া আশাই সবচেয়ে যোগ্য ছিলেন। স্নাতকে সিজিপিএ ৪ পাওয়ার পাশাপাশি স্নাতকোত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম এবং এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া পৃথক স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন মো. নূরুল হুদা নামের এক আইনজীবী। তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। এর আগে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে ভালো ফলের স্বীকৃতিস্বরূপ এসব স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।
এ দুই উপাচার্য হলেন– গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন। এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে তাঁরা এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়ে অহনা আরেফিনকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বশেমুরবিপ্রবির পুরকৌশল বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য। এ নিয়োগের বিনিময়ে গত ২২ মার্চ একিউএম মাহবুবের কন্যা ফারজানা মাহবুবকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন ছাদেকুল আরেফিন। প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ দুটিতে নিয়োগ বোর্ডেরও প্রধান ছিলেন এ দুই উপাচার্য।
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক খন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিদিনের সংবাদ, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেলেন ববি উপাচার্যের মেয়ে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়৷ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্কের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। দেশে বিগত কয়েক দশকে উচ্চ শিক্ষায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত দেড় দশকে। দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৩। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৩টি। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১০টি।
ডেইলি ক্যাম্পাস, ০৮ জুলাই ২০২৩
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অভিজিৎ সাহা নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, বশেমুরবিপ্রবি’র বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছে গত মাসের উনিশ তারিখ (১৯/০৬/২০২৩)। ক্যাম্পাসের একজন শিক্ষার্থী উক্ত নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হতে চলেছেন সাংবাদিকসহ অনেকের কাছ থেকেই এইধরনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বলা হচ্ছিল উক্ত প্রার্থী তার ভাইবা পার্ফরমেন্সে নাকি বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্যসহ সকলের কাছে সুনাম কুড়িয়েছেন বলেও। বিষয়টি সত্য হলে এটি এই ক্যাম্পাসের জন্য খুবই আনন্দের অনুষঙ্গ। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হবেন আর বিপত্তি পিছু নিবে না তাতো হয় না! এই ধরনের প্রচার আড়ালে-আবডালে শুরু হওয়ার পর এবার শুরু হলো, আমাদের মাঝে থাকা নোংরা মানসিকতার অদ্ভুত খেলা। ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পোস্টমর্টেম শুরু হলো, সেখানেও দমানো গেল না। শুরু হলো তার শ্বশুরকুলের ময়নাতদন্ত। ভুল ব্যক্তিকে শ্বশুর হিসেবে দেখিয়ে সবদিকে বিপত্তি তৈরি করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেন জাতির শ্রেষ্ঠ বিবেকধারী কেউ কেউ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতিকালে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একটি ডিসিপ্লিনে পিএইচডি করা ও বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীদের বিশেষ কায়দা করে বাদ দেয়া হয়েছে। সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সবেমাত্র মাস্টার্স পাস করা অনভিজ্ঞ লোকদের।
এছাড়া খুবির বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী পুজা মিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুলে ৯ মাস খণ্ডকালীন হিসেবে শিক্ষকতা করার পর তাকে সরিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ওই বিভাগেরই শিক্ষক মো. দুলাল হোসেনের স্ত্রীকে। অথচ তার স্ত্রীর একাডেমিক যোগ্যতা পুজা মিত্রের সঙ্গে মোটেও তুলনীয়ই নন। পুজার অনার্স ও মাস্টার্সের ফলাফল প্রথম দিকে। তিনি মাস্টার্সে থিসিস গ্রুপের শিক্ষার্থী। মেধাতালিকায় তার অবস্থান তৃতীয়। ইতোমধ্যে তার দুটি গবেষণা গ্রন্থও বের হয়েছে। কিন্তু দুলাল হোসেনের স্ত্রীর ফলাফল পুজার চেয়ে অনেক কম। তিনি নন-থিসিস গ্রুপের শিক্ষার্থী। কোনো লেখাপত্র না থাকলেও কেবল স্বামীর সুবাদে পুজাকে সরিয়ে নিজে জায়গা করে নিয়েছেন।
আরটিভি অনলাইন, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে লুকোচুরি অনিয়-দুর্নীতির প্রতিবাদে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. মো. আবু নঈম শেখ’র অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
এগুলোর হীমশৈলের সামান্য চূড়ামাত্র। প্রকৃত অনিয়ম দুর্নীতির কলেবর সীমাহীন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে ওঠার আগেই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক হচ্ছেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। শিক্ষক নিয়োগে যদি এভাবে অনিয়ম দুর্নীতি হয়, তাহলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণটিই আর থাকে না। সব সরকারের আমলেই নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে, তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেহেতু নতুন অনেকগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, ফলে নিয়োগ দুর্নীতিতে আওয়ামী সরকার বিগত সব সরকারকে ছাপিয়ে গিয়েছে।