শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, ফরিদপুর-এর অনুরোধে, পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান, বিপিএম, ফরিদপুরের নির্দেশনায় ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাকারিয়া হোসেন শহীদ জায়া-শহীদ মাতা-বীরঙ্গনা, অসুস্থ চারুবালাকে দেখতে গিয়েছিলেন এক ঝুড়ি ফল উপহার নিয়ে।
চারুবালা থাকেন চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের দুর্গম পদ্মার চরে। চরভদ্রাসন থানা থেকে যেতে নদীও পার হতে হয়, পার হতে হয় চরের দীর্ঘ বন্ধুর পথ। চরভদ্রাসন উপজেলার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাকারিয়া হোসেন এসআই ফিরোজ আলী মোল্যা, এসআই আওলাদ হোসেন এবং শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সদস্য মোঃ নুরুল ইসলাম মিন্টু-কে সাথে নিয়ে বীরঙ্গনা চারু বালার বাড়িতে পৌঁছান। বাড়ি বলতে একটি ছাপড়া ঘরে ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রীত হয়ে আছেন চারুবালা।
মুক্তিযুদ্ধে চারু বালা-এর স্বামী এবং কোলের সন্তান বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন, চারুবালা নিজে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, তবু তার কোনো সরকারি সাহায্য জোটেনি, স্বীকৃতিও পাননি তিনি! ১৯ নবেম্বর (২০২০) তারিখে গবেষক সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপ চারু বালার খোঁজ পেয়ে তার বাড়িতে গিয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। দিব্যেন্দু দ্বীপ-কে সহযোগিতা করেছিলেন চরভদ্রাসন উপজেলার সাবেক সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইমদাদুল হক তালুকদার। চারুবালা-এর কথা চরভদ্রাসন উপজেলার ইউএনও সাহেবাকে জানানো হলেও তিনি এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেননি। চরভদ্রাসন উপজেলায় ভূমিহীনদের ///// টি ঘর দেওয়া হলেও একটা ঘর জোটেনি চারুবালার! অথচ অভিযোগ উঠেছে— এই ঘর বণ্টনের ক্ষেত্রে হয়েছে নানান ধরনের অনিয়ম হয়েছে।
এর আগে শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, ফরিদপুর চারুবালার পাশে দাঁড়ায়। ফরিদপুর কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শহীদ পরিবারের সন্তান মোঃ সাজ্জাদুল হক সাজ্জাদ চারুবালা-কে পাঁচ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য দেয়। ২৬ মার্চ শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, ফরিদপুর শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে পদযাত্রা এবং সভা করে সেখানেও চারুবালা ছিলেন মধ্যমণি। উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের আরও কয়েকজন বীরঙ্গনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি-এর আহ্বায়ক দিব্যেন্দু দ্বীপ বলেন, চারুবালা-কে চরভদ্রাসন বা গাজীরটেক সদরে কোনো একটি খাস জমিতে একটি ঘর করে দেওয়া জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব। আমরা বিস্মিত হচ্ছি কেন চারুবালা সম্পর্কে জানার পরও জেলা প্রশাসন কাজটি করলো না! আমরা চাই খুব দ্রুত সরকার যেন ফরিদপুর সদরে কোনো একটি খাস জমি তার নামে বরাদ্দ দিয়ে একটি ঘর করে দেয়। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার অসুস্থ চারু বালা-কে দেখতে চরভদ্রাসন উপজেলার ওসি সাহেবকে পাঠিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। এজন্য আমরা ফরিদপুরের সুযোগ্য পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান, বিপিএম-কে ধন্যবাদ জানাই। একইসাথে ধন্যবাদ জানাই শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, ফরিদপুরের আহ্বায়ক মোঃ সাজ্জাদুল হক সাজ্জাদ-কে। তিনি নিবেদিতপ্রাণ হয়ে শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর করছেন। এটা অনেক বড় ব্যাপার।
ফলঝুড়ি হাতে পেয়ে বীরঙ্গনা চারুবালা ভেজা চোখে অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, “৫০ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধে পকিস্থানি হায়েনারা আমার পরিবারে এসে স্বামী চন্দ্র চরণ বিশ্বাসকে গুলি করে হত্যা করে এবং আমার কোলে থাকা শিশু কন্যা পার্বতী (২) কে আছড়িয়ে মেরে ফেলে। এরপর ওরা আমার ওপর নির্যাতন চালায়। আামর পরিবারের ওপর ঘটে যাওয়া সেই বিভিষিকাময় দিনগুলি মনে রেখে পায়ে হেঁটে ও ঘোড়ার গাড়ীতে বহু কষ্ট করে পুলিশ অফিসাররা আমাকে দেখতে এসেছেন! জাতি আমাকে ভুলে যায় নাই, এর চেয়ে বড় কিছু আমার আর চাওয়ার নাই।”
এ বিষয়ে শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি, ফরিদপুর-এর আহ্বায়ক মোঃ সাজ্জাদুল হক সাজ্জাদ বলেন, আমি অভিভূত! ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান স্যার একজন মহৎপ্রাণ মানুষ, এটি তিনি আরেকবার প্রমাণ করলেন। শহীদজায়া এবং ’৭১-এর নির্যাতিত নারীরা খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমাদের বিস্ময়– কেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে না। আমরা একটি সংগঠন হিসেবে খোঁজ খবর রাখতে পারি, কিন্তু তাদের সহযোগিতা তো সরকারের পক্ষ থেকেই করতে হবে। জেলা পুলিশ এবং চরভদ্রাসন থানার ওসি সাহেবকে আমরা কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ, একজন শহীদজায়া, শহীদমাতা এবং বীরঙ্গনাকে দেখতে গিয়ে তারা অনেক বড় একটি কাজ করেছেন।