বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলা সদরের পাশের গ্রাম টেংরাখালিতে পানীয় এবং গৃহস্থালী কাজের পানির তীব্র সংকট

কচুয়া, বাগেরহাট
কচুয়া, বাগেরহাট
এ ধরনের উৎস থেকে পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে কচুয়ার চর টেংরাখালি গ্রামের মানুষ।
এ ধরনের দূষিত পানি তারা গোসল এবং গৃহস্থালীর অন্যান্য কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে

অবস্থা দাঁড়িয়েছে এমন যে মানুষ খালের পানি খেতেও বাধ্য হচ্ছে কখনও কখনও। বিষয়টা এখন— “হয় পানি কিনে খাও, নয়তো  ‍দূষিত পানি খাও।” কারণ, টিউবওয়েল নেই, থাকলেও সেগুলো ‘ব্যবহারযোগ্য’ নয়, এমনকি টিউবওয়েলের পানিতে মানুষ পান করা ব্যতীত যেসব কাজ করতে পারে তাও করছে না, এতটাই তাদের মধ্যে আর্সেনিক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। 

কচুয়া, বাগেরহাট
পানির সমস্যা নিয়ে কথা বলছেন গ্রামের কয়েকজন ভুক্তভোগী নারী।

টিউবওয়েলর পানিতে যে আয়রন থাকে সেগুলিকেই তারা আর্সেনিক ভাবছে, আতঙ্কিত হচ্ছে, ফলে সকল ধরনের গৃহস্থালির কাজ গ্রামবাসীর জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে, প্রান্তিক মানুষের সমস্যাটা একটু বেশি হলেও গ্রামের কোনো পরিবার এখন পানির সমস্যার বাইরে নয়। 

সমস্যার শুধু পানীয় জল নয়, সমস্যা রান্নার পানি সহ সকল ক্ষেত্রে। শিশুরা ব্রাশ করে মুখ ধুচ্ছে পুকুর বা বেড়ের ময়লা পানিতে, তবু তারা টিউবওয়েলের ধারে কাচ্ছে যাচ্ছে না, কারণ, তাদের বলা হয়েছে আর্সেনিক একটা মারণঘাতী রোগ এবং বাগেরহাটের টিউবওয়েলগুলোতে আর্সেনিক আছে।

আর্সেনিক থাকতে পারে, কিন্তু নিরাপদ লেভেল অতিক্রম করেছে কিনা, কোথায় আর্সেনিক আছে, কোথায় অার্সেনিক নেই, এরকম কোনো পরিচ্ছন্ন ডাটাবেজ কিন্তু উপজেলা পরিষদের কোনো অফিশে রক্ষিত নেই, তাহলে কীসের ভিত্তিতে গ্রামবাসীদের এভাবে আতঙ্কিত করা হলো? 

আমরা ফলোআপনিউজ.কম থেকে চরটেংরাখালি গিয়ে কয়েকটি পরিবারের সাথে, বিশেষ করে মহিলাদের সাথে কথা বলেছি।

ভুক্তভোগীরা যা বলছে এবং যা করছে—

গ্রামবাসীর মূল ভাষ্য হচ্ছে, আর্সেনিক আতঙ্ক, তারা ধরে নিয়েছে টিউবওয়েলের পানি মানে বিষ। পানিতে যে আয়রন তারা দেখছে সেটিকেই অনেকে আর্সেনিক ভাবছে। বৃষ্টির পানি কোনো না কোনোভাবে সবাই ব্যবহার করছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত এবং সুসংগঠিতভাবে নয়। তারা তাকিয়ে আছে যে কেউ এসে তাদের সমস্যার সমাধান করে দেবে। ফলে নিজেদের চেষ্টায় সমস্যার সমাধান করতে তারা তৎপর হতে পারছে না। পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি ধরে রেখে কাজ করার ব্যবস্থা তারা করছে না। পুকুরগুলোর পাড় উঁচু করে পানি বিশুদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে না, পানির কোনো ট্রিটমেন্ট করছে না। বিপরীতে তারা খাল বেড়ের পানি নির্দিধায় ব্যবহার করছে। 

সরকার বা অন্য কোনো তরফ থেকে পাওয়া না পাওয়ার  কিছু উদাহরণ তাদের সামনে আছে –যেগুলো ইতিবাচক হচ্ছে না। সরকার এবং ইউএসএইডের পক্ষ থেকে প্রতিটি গ্রামে দুএকটি ৩০০০ লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংক দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিম্নআয়ের মানুষের পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছে মূলত গ্রামের প্রভাবশালীরা। কিন্তু এটা দেখে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, ফলে তারা তাদের খারাপ অবস্থাটা জিইয়ে রাখতে চায়, তাদের ধারণা এভাবে থাকলে ওরকম ট্যাংক বা কিছু হয়ত পাওয়া যাবে। খুব কষ্ট করে হয়ত নিজেদের সমস্যা নিজেরা তারা সমাধান করে ফেলতে সক্ষম, কিন্তু এরকম কিছু উদাহরণ তৈরি হওয়ায় সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার নিজস্ব সে ক্ষমতাটুকুও তারা হারিয়ে ফেলছে।  

গ্রামবাসীর পানির এ সমস্যা নিয়ে ফলোআপনিউজ.কম কথা বলেছে কচুয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সমাজ হিতৈষী মো: মঈনুল ইসলাম শিকদারের সাথে। তিনি বলেছেন, সমস্যাটা ঠিকমতো জানতে পারলে তিনি সাধ্যমতো গ্রামবাসীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন।