মূলত ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সাপ্তাহিক ছুটি আমাদের দেশে শুক্রবার করা হয়েছে, যাদিও ধর্ম সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে এমন অনেকে মনে করেন শুক্রবার ছুটি রাখা ধর্মের কোনো বিষয় নয়। আসলে সাপ্তাহিক ছুটি আগে রবিবারই ছিল। এরশাদ সরকার এসে এটি শুক্রবার করে। এরশাদ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য অনেক কিছুই করেছে, সমস্যা হচ্ছে সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসা যাচ্ছে না।
শুক্রবারই ছুটি ছিল অনেকদিন, পরে আবার একদিন বাড়িয়ে সাপ্তাহিক ছুটি করা হয় দুই দিন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করার পর সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবারের পরিবর্তে দুদিন করে। তখনই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তবে বিষয়টি আমলাদের এবং বিশালায়াতনের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর পক্ষে যাওয়ায় এ বিতর্ক পরবর্তীতে আর হালে পানি পায়নি।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমাদের দেশে শুক্র-শনি ছুটি এবং বেশিরভাগ দেশে রবিবার ছুটি, ফলে কার্যত ব্যবসা-বাণিজ্য সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে বাকি চার দিনের মধ্যে। এতে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।
মজার বিষয় হচ্ছে, শুক্রবার ছুটি করাতে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে আমাদের ব্যবসা বেড়েছে এমন কিন্তু নয়, তারা পোশাকসহ অন্য অনেক পণ্য আমাদানী করে এমন সব দেশ থেকে যাদের সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার। সৌদি আরব গার্মেন্টস (জায়নামাজও) পণ্য আমদানি করে চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান থেকে যাদের সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার। অন্যদিকে বাংলাদেশ রফতানি করে ইউরোপ-আমেরিকায় যেখানে সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার।
অাবার সকল মুসলিম দেশে যে শুক্রবার ছুটি এমনটিও নয়। পাকিস্তান, আলবেনিয়া, আজারবাইজান, বেনিন, ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, লেবানন, মালয়শিয়া (কিছু রাজ্যে), মরক্কো, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, তাঞ্জানিয়া, তিউনিশিয়া, তুরস্ক, জাম্বিয়া -এই দেশগুলোতে রবিবার ছুটি। বেশিরভাগ দেশের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা সোম থেকে শুক্র মোট চল্লিখ ঘণ্টা অফিশ করে থাকে। ক্যামেরুন, বুরুন্ডি, চিলি, মেস্কিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা -এরকম কয়েকটি দেশে সাপ্তাহিক কর্মসময় ৪০ ঘণ্টার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন বলেছেন, সাপ্তাহিক ছুটি হওয়া উচিৎ রবিবার। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। তিনি বলেছেন, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যার কারণে সপ্তাহ পাঁচ দিনের মধ্যে আটকে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের মানুষও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে শুক্রবার অফিশ করে।