গৃহকর্মী শিশুটির নাম সাবিনা। বয়স ১১ বছর। ডিম পোচ করতে গিয়ে ডিমের কুসুম ছড়িয়ে যায়। এ কারণে সাবিনার বুকে ও হাতে গরম খুনতি দিয়ে ছ্যাঁকা দেন ‘ম্যাডাম’। রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে পেটান। আঘাতে কালো হয়ে ফুলে প্রায় বন্ধ সাবিনার দুই চোখ। মাথা, গলা, পিঠ, ঊরুসহ সারা শরীরেও নতুন-পুরোনো অসংখ্য দাগ।
পল্লবী থানা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) এবং সাবিনাকে উদ্ধারকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে সাবিনা জানিয়েছে, ডিম পোচ ভালোভাবে করতে না পারায় ম্যাডাম তাকে পিটিয়েছেন। গত ২জুলাই সকালে সাবিনাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগেই ‘উন্নত চিকিৎসা’র জন্য ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে।
ছয় মাস আগে টাঙ্গাইলের সাবিনা ঢাকায় কাজ নেয় লে. কর্নেল তসলিম আহসানের বাসায়। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, শিশুটির ওপর এই নির্যাতন চালান তসলিম আহসানের স্ত্রী আয়েশা লতিফ। জানা গেছে, ঘটনার সময় তসলিম আহসান যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। আয়েশা লতিফের এক মেয়ে আছে। বর্তমানে তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, থানা এবং ওসিসির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশুটিকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতেন আয়েশা লতিফ। গত ৩০ জুন সর্বশেষ নির্যাতনের শিকার হয় সে। শিশুটি কোনোভাবে মিরপুরের ডিওএইচএসের বাসা থেকে পালাতে সক্ষম হয়। মিরপুর ১২ নম্বরে মিরপুর সেনানিবাসের কাছে মোল্লা মার্কেটের সামনে থেকে স্থানীয় ব্যক্তিরা যখন তাকে উদ্ধার করে, তখন শিশুটি ভালোভাবে হাঁটতেই পারছিল না। উদ্ধারের পর শিশুটিকে পল্লবী থানায় নেওয়া হয়। সেখানেই সে বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ফৌজদারি কর্যবিধিতে মামলা করে গত রোববার। সেদিনই পল্লবী থানার উদ্যোগে তাকে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম পরিচালিত ওসিসিতে নির্যাতনের শিকার নারী ও মেয়েশিশুদের আইনি সেবাসহ সমন্বিত সেবা দেওয়া হয়।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসির সামনে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তৎপর হতে দেখা যায়। তারপর হুইলচেয়ারে বসিয়ে সাবিনার মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে তাকে প্রথমে জরুরি বিভাগের গেটের দিকে নেওয়া হয়। তখন একজন বলেন, এই গেট দিয়ে বের হওয়া যাবে না। তারপর হুইলচেয়ার টেনে হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের দিকে নেওয়া হয়।
গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মিজানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয়
মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউএলএ) নির্বাহী পরিচালক এবং সরকারের শিশুশ্রমবিষয়ক কমিটির কো-চেয়ার সালমা আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, “বেটার ট্রিটমেন্টের” জন্য শিশুটিকে সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, ওসিসি থেকে রাতারাতি কেন শিশুটিকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হলো? কোন মহলের চাপের কারণে এটি করতে হলো?’
সালমা আলী বলেন, ওসিসিতে থাকা অবস্থায় বিএনডব্লিউএলএ শিশুটির কাছ থেকে ওকালতনামা নিয়েছে। শিশুটির মামলায় আইনি সহায়তা দেবে বিএনডব্লিউএলএ।
পল্লবী থানায় এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আসিফ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, মামলার আসামি এখন পর্যন্ত পলাতক আছেন। মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মেয়েটির শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। তাই তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে।
ওসিসির সমন্বয়কারী বিলকিস বেগম বলেন, শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে সিএমএইচে পাঠানো হয়েছে।
খবরটির বিস্তারিত প্রথম আলো পত্রিকা থেকে নেয়া। ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নেয়া।