হাসপাতালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং প্রকল্প অবহিতকরণ সভা

প্রাণতোষ তালুকদার:

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নীতিমালা, আইনি কাঠামো ও পরিকল্পনাসমূহের বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার ৪৯ নং ওয়ার্ড এর মনোয়ারা অর্থোপেডিক এন্ড জেনারেল হাসপাতাল, ৩৫/৭/১ গোলাপবাগ, সায়েদাবাদ-কমলাপুর বিশ্বরোড, ঢাকা-১২০৩-তে ২৩/১১/২০১৭ তারিখ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং প্রকল্প অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাটির আয়োজন করেছে পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি)।
বক্তব্য দিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের ডেপুটি এসিসট্যান্ট ডিরেক্টর মোঃ আনোয়ার হোসেন, যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ অফিসার রাহাত সাহেব, মনোয়ারা অর্থোপেডিক এন্ড জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মনোয়ারা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনে পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) এর প্রকল্প সমন্বকারী মোঃ ইকবাল হাসান, প্রজেক্ট অফিসার তাহমিনা আক্তার, মনিটরিং অফিসার উর্মিলা নখরেট, ও প্রকল্প সমন্বয়কারী জনাব সুবোধ।
উক্ত অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের ডিপোটি এসিসট্যান্ট ডিরেক্টর মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, মা যখন সন্তান নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দক্ষতা-অদক্ষতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। দক্ষ ডাক্তারের প্রয়োজন হয়। অদক্ষ ডাক্তার হলে রোগীর ক্ষতি হয়।
তিনি সকলকে সচেতন হওয়ার জন্য বলেছেন। তিনি বলেন, বিল্ডিংগুলো করছেন, কে করছেন? কেন করছেন? কিভাবে করছেন? ডেভেলপারদের উদ্দেশ্যে করে তিনি একথা বলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোনো ভবনে সিগারেট (ধূমপান) খাওয়া চলবে না। একইসাথে তিনি পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের কথা বলেছেন। আগুন নেভানোর দরকার নাই, আগুন যাতে না লাগে সেই কাজটা করার জন্য বলেছেন তিনি। সেই জন্য দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে ইলেকট্রিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগে। সময় সময় ইলেকট্রিক তারগুলো পরীক্ষা করার কথা বলেছেন এবং রুমগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখার কথাও বলেছেন। বিদ্যুৎ নিয়ে স্পার্কিং হলে শুকনো কাঁথা বা শুকনো তোয়ালে দিয়ে চাপা দিতে বলেছেন। তাহলে নিভে যাবে, ভয় থাকবে।
মনোয়ারা অর্থোপেডিক এন্ড জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মনোয়ারা বলেছেন মানুষের কল্যাণে ডাক্তার রোগীদের সেবা করেন এবং তিনি সকলের সহযোগিতা চান। রোগীদের সাথে যারা আসেন তারা যেন ধৈর্য্যর সাথে ডাক্তারদের সহযোগিতা করেন এবং ডাক্তারের পাশে থাকেন।
যাত্রাবাড়ীর থানার পুলিশ অফিসার রাহাত বলেন, পুলিশ কেস হলে প্রাইভেট হাসপাতাল রোগী ভর্তি নিতে চায় না। সরকারি হাসপাতালে পুলিশ কেসের রোগী ভর্তি করার পরামর্শ দেয়া হয়। এ ব্যাপারটি তিনি প্রতিকারের কথা বলেছেন। প্রতিদিনই রোড এক্সিডেন্টে মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন। নিকটস্থ হাসপাতালে যাতে পুলিশ কেসের রোগীদের ভর্তি করানো যায় এটার সমাধান চান তিনি।
প্রকল্প সমন্বয়কারী সুবোধ বলেন, ৩৩, ৩৮, ৪৭, ৪৯ নং ওয়ার্ড মডেল ওয়ার্ড হিসেবে দাঁড় করাতে চান তাঁরা । হাসপাতালগুলোকেও মডেল হিসেবে দাঁড় করানোর কথা বলেছেন তিনি।
বক্তাগণ হাসপাতালগুলোতে ভূমিকম্পসহ দুর্যোগের ঝুঁকি বিশ্লেষণ পূর্বক স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ সম্পর্কে ঝুঁকিহ্রাসের পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অনেক পুরাতন ভবন, সরু গলি ও হাসপাতাল রয়েছে। বেশিরভাগ নতুন বহুতল ভবনগুলোও সঠিকভাবে ভূূমিকম্প সহনশীল করে নির্মাণ করা হয়নি। রয়েছে নানা রকমের ঝুঁকি, বিপদাপন্ন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে বেশিরভাগ মানুষ। ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগের ঝুঁকি নিরুপণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উক্ত ঝুঁকিহ্রাস কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে কোনো বরাদ্দ না থাকার পাশাপাশি জনসাধারণ পর্যায়ে দুর্যোগ সচেতনতার অভাব রয়েছে। এলাকাসমূহের স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ভূমিকম্প সচেতনতায় তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় জনসাধারণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা বেশি।
একটি দুর্যোগ সহনশীল নগর নির্মাণে প্রয়োজন রয়েছে সমন্বিত উদ্যোগ, বিদ্যমান আইন ও নীতি কাঠামোর আলোকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়। ভূমিকম্পসহ নগরাঞ্চলের অন্যান্য দুর্যোগ যথা অগ্নিকাণ্ড, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, প্রতিষ্ঠান ও জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে “পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি), প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ” এর সহযোগিতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত ৪টি ওয়ার্ডে “নগরাঞ্চলের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি” প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন আর্থিক সহায়তা করছে “ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হিউমেনিটারিয়ান এইড এন্ড সিভিল প্রটেকশন” বিভাগ। প্রকল্পটি ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, জোনাল অফিস, সিটি কর্পোরেশন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি, ওয়ার্ড পর্যায়ে দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক দল এবং বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে। প্রকল্পটি এলাকার বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠী তথা নারী, পুরুষ, শিশু, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবে।
প্রকল্পটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প ২০২১-এ সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত যার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলায় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও জনগোষ্ঠীর দুর্যোগ সহনশীলতা তৈরী হবে। এ প্রকল্পটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আওতাধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত; এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, এসওডি এবং নীতিমালাসমূহের আলোকে পরিচালিত হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে পিএসটিসি এবং প্লান ইন্টারন্যাশনাল-এর একদল অভিজ্ঞ কর্মীদল আছেন, যারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী। এছাড়াও নিয়মিতভাবে ওয়ার্ড দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সাথে নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পরিদর্শন করা হবে এবং পরিদর্শন পরবর্তী সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে পিএসটিসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রকল্পের অগ্রগতি কর্ম এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিল অফিস, জোনাল অফিস, সিটি কর্পোশেন এবং জেলা প্রশাসকের অফিসে মাসিক/ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রেরণ করার কথা বলেছেন।
সর্বশেষে ৩৩, ৩৮, ৪৭, ৪৯ নং ওয়ার্ডের হাসপাতাল ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রকল্প অবহিতকরণের কথা বলা হয়েছে যাতে করে ভূমিকম্প এবং অগ্নি নির্বাপনের সময় কিভাবে হাসাপাতালের ডাক্তার-রোগী ও জনগণকে বাঁচানো যায় তার একটি প্রতিকারের জন্য কমিটি গঠন ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা পপুলেশন সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) করবে।