দু’টো ডালের ফাঁকে সুন্দরবনের একটি বানরের লেজ গেলো আটকে। বানরটি ছটফট করছে, বানর বানরকে উদ্ধার করতে পারে না। ফলে অন্য বানররাও শুধু চেঁচামেচিই করছে। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো এক ফরেস্ট অফিসার, মনে মনে সে বললো, “বেশি বাঁদরামি করলে এমনই হয়।” ভদ্রতার খাতিরে জোরে বললো না, তবে আহত বানরের আর্তনাদ দেখে সে বেশ মজাই পেলো। অনেকে যেমন ফেসবুকে লাইক কমেন্ট করে না, পড়ে চলে যায়, এবং মনে মনে কিছু বলে যায়। সবাই যে মন্দ বলে যায় এমন নয়। এই যেমন, ঐ গাছতলা দিয়ে বাঘের থাবায় আহত এক মৌয়াল যাচ্ছিলো, সে ছিলো আহত এবং রক্তাক্ত। ডালের ফাঁকে লেজ আটকে যাওয়া বানরটিকে দেখে সে কষ্ট পেলেও নিরবে চলে গেলো। ঐ পথ দিয়ে দুবলার চরে যাচ্ছিলো একদল পূণ্যার্থী। তারা সবাই বানরটির জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা করে আবার দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো। কয়েকদিন কেটে গেলো, বানরটি সংলগ্ন পাতা খেয়ে, এবং অন্য বানরদের এনে দেওয়া সামান্য খাবার খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছে। আজকে এই পথ দিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন কেতাদুরস্ত পর্যটক। এরমধ্যে একজন গুণগুণ করে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাচ্ছে। একজন আছে ভীষণ প্রকৃতিপ্রেমি, সে গাছের কচি পাতার পরশ মুখে বুলিয়ে নিচ্ছে। বানরটি খুব আশান্বিত হয়, ভাবে- এইবার নিশ্চয়ই এরা আমাকে উদ্ধার করবে। হঠাৎ প্রকৃতিপ্রেমির চোখে পড়ে বানরটি, সে চিৎকার করে অন্যদের বানর দেখায়। ততদিনে বানরটি ডাকাডাকি করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, চুপচাপ ডালের ওপর শুয়ে থাকে আর ভাবতে থাকে এই বুঝি মানুষগুলো ওকে উদ্ধার করবে। পর্যটকদের মধ্যে একজন ঢিল মেরে বুঝতে চায়- বানরটি নড়ে না কেন। ঐ সময় ওখানে হাজির হয় একজন শুকনো কাঠ কুড়ানি। তার হাতে ছিলো একটি ধারালো দাও। লোকটি বানরটিকে দেখে বুঝতে পারে যে, ওর লেজ আটকে আছে। কাঠ কুড়ানি লোকটি গাছে উঠে ডাল কেটে বানরটিকে মুক্ত করে। ততক্ষণে প্রকৃতিপ্রেমী, সঙ্গীত শিল্পী এবং অন্যান্য শখের পর্যটকরা নতুন কোনো বিস্ময়ের আশায় সামনে অগ্রসর হয়েছে।