অবসরে পড়তে পারেন “প্রেমের প্রলাপ” কাব্যগ্রন্থ থেকে

cupid

 

 

ত্রয়ী


ভালোবাসি, ছটফট করি

তুমি যখন বরন্যে।

তবুও ভালোবাসি

তুমি যখন অরন্যে।

বুঝি না, তুমি যখন গোপন কর।

শুনি না, তুমি যখন বলে দাও তা।

বলি না, তুমি বদলাও।

শুধু ভালোবাসি, ছটফট করি।


আসক্তিতে, ইর্ষায়, বিরহে, বিভ্রান্তিতে

জ্বলে পুড়ে ছারখার।

কখনো হিংস্র, অবশেষে ক্লান্ত।

কাঙ্গাল আমি তবু

তোমার জন্যে হন্যে হয়ে রই।


তুমি জানো না, জানো কি?

আমার সব অহংকার

চুরমার করে ভেঙ্গে পড়ে তোমায় পায়।

তোমায় ভালবাসি

জানো কি কতটুকু তা? জানো না।

পঞ্চপ্রেম


তোমাকে যে চায় সে নতুন;

ক্ষণে ক্ষণে একেক সে আমি,

প্রেমটুকু শুধু সত্য, মানুষ মিথ্যা।


সবটুকু আলোর বিনিময়ে

তবু আমি তোমাকে চাই।

বর্বরতায়ও কি তবে কিছু প্রেম থাকে?


উল্কাপিণ্ডের মতো হঠাৎ এসে

প্রাত্যহিক আলোটুকু নিভিয়ে

চলে গেল সে।


আকাশে তো চাঁদ ওঠে না, ওঠে কি?

কাউকে ভালোবাসাও যায় না, যায় কি?

তবু চারিদিকে কত জ্যোৎস্না, কত প্রেম!


স্বামী সঙ্গে সেই যে নবনী বলেছিল আমায়,

“ভালোবাসতাম তোমাকে”

স্বামী তাকে ‘বহুগামিনী’ অপবাদ দিয়ে চলে যায়।

আমি বললাম, ভালোবাস যদি তবে আস,

নবনী বলল, তুমিও একই অপবাদে তাড়াবে।

ভালোবাসলে একা থাকতে হয়।

এসো

তুমি ক্ষুদ্র বলে আমাকে

ক্ষুদ্র ভাবো।

প্রাণ খুলতে পারতে যদি

খুঁজে পেতে মহাসমুদ্র।

ডাকো কেন

দুঃসাহসে মিছেমিছি?

কী করে মিলতে পারে

মহাসমুদ্র আবদ্ধ কুয়ায়?

যদি চাও প্লাবিত হও,

উব্দেল হয়ে

নিরাভারণে মিলাও।

তুমি বরং আমাতে

অস্তিত্বহীন হও, কখনো

এক অতি বর্ষাকালে।

পঙ্কিলতায় তুমি বিলীন,

তোমার সত্য তুমি দেখতে

কি পাও?

স্থবিরতায় তুমি মলিন।

স্বকীয়তা নয়,

সহস্রাব্দকালেও তুমি ঐ একই,

সংকীর্ণ, তুমি স্বরূপহীনা।

এসো,

আগামী বর্ষাতে বিলীন হও,

তোমার অগ্রগামীদের হারাও,

তৈরি হও, নতুন হও,

উব্দেল হয়ে নিরাভরণে

মহাসমুদ্রে মিলাও।

কী বলে ডাকি তাকে?

সাগরকে বললাম সাগর।

কয়েক শো মাইল পেরিয়ে

লোকালয়ে এসে বললাম,

সাগর।

সাগর রেগে কয়,

“আমি তো নদী!”

গ্রামের পাশ দিয়ে

বয়ে যেতে দেখে বললাম,

নদী।

নদী রেগে কয়,

“আমি তো খাল!”

এরপর আবার ফিরে গেলাম,

গিয়ে বললাম,

পানি।

সাগর শুধু তাকিয়ে রয়,

নদীও চুপ,

খালেরও সেই একই রূপ।

পরমেশ্বর

বন্দী ঈশ্বরের আভাস পেয়ে

হেঁটেছি তোমারর পিছে পিছে।

বিমুখ হইনি,

অনুগত ঈশ্বরকে ঘুম পাড়িয়ে

তুমি তখন গেড়ুয়া বসন খুলেছ মাত্র।

ষাষ্টাঙ্গে তুমি ধ্যানমগ্ন,

ফুল-বেলপাতা, ধুপ ধুনোর সুঘ্রাণ,

মোমবাতি প্রজ্বলিত—

আধো আলো আধো ছায়াতে

তোমার নগ্ন নিথর দেহ প্রকম্পিত।

হঠাৎ মোহাচ্ছন্ন নীরব নিনাদ রাত

চৌচির করে নৈঃশব্দ্য ভেঙ্গে

জাগিয়ে তুলেছে তোমার আমার পরমেশ্বর।

আহ্বান

নারী,

আয়।

আজ করি কিছু অন্যায়।

প্রতিধ্বনীতে হয় না কোনো ক্ষয়।

নারী,

আয়।

ভয় কী?

সবইতো থাকে অব্যায়।

নারী,

মাথায় একটা সাদা ছাতা দিয়ে আয়।

নারী,

একটা কালো মুখোশ পরে আয়।

নারী,

সবার অলক্ষে অন্তরীপ হয়ে আয়।

তোর জন্য

একটা তোর জন্য

সত্যি আমি সর্বহারা,

একটা তোর জন্য

ক্লান্ত আমি দিশেহারা।

ভালোবাসা মানে

যে তোকে আমি পাই গোপনে,

অন্য সবাই থাকে

আমার আটপৌর জীবনে,

নিত্যদিনে।

যাবি আজকে দিন দুপুরে,

শহরটাকে আড়াল করে,

একটু দূরে, হাত ধরে?

জানবে না কেউ মানুষেরা।

কীসের এত ভয়?

ঈশ্বরও তো এমনই হয়।

প্রিয়তমা, একটু দাঁড়াও

একটু দাঁড়াও প্রিয়তমা, হৃদয় ঋজু করো, শোনো;

জীবনটা নয় তোমার তরে; চাই না তোমাকেও।

ভালোবাসি সত্য; প্রতিশ্রুতি বলে একটু শুধু বেশি

যতটুকু ভালোবাসি বনের কোলা ব্যাঙ, বাঘ।

নেই এর চেয়ে বেশি কিছু আয়োজন, চিরভাস্কর অর্জন,

শুধু একসাথে, একাগ্রে সাগরটা দিতে হবে পাড়ি।

সত্য বলেছি বহুবার, মৌনতায়-গানে-ভণিতায়।

যদি ভিন্ন ভাবো, মিছে কেন কষ্ট পাও?

তবু যদি দেখা হয় কোনো মোহনায়,

প্রকৃতি-প্রবৃত্তে আবার না হয় মুগ্ধ হব; এখন বিদায়!

যদি জানতে

কোকিল ভাবল

আমি নিরামিষাশী।

কাক ভাবল

আমি শুধু ভালোবাসি।

কেবল হরিণ জানে

আমি শুধুই মাংসাসী।

ত্রিপত্র


নিশ্চিত সে এসেছিল পুরুষের খোঁজে,

নইলে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত না হয়ে কেউ

কি মঙ্গলে যেতে পারে?

এসে দেখে এতো পুরুষ নয়, প্রেমিক!

অমনি সে মত বদলালো,

বলে, আসেন, চাঁদ দেখি।


তুমি বলছ সতীত্ব!

আমি তো বুঝি

পোড় খাওয়ারাই শুধু পরীক্ষা নিতে জানে।


তুমি তো জানো আমি কী চাই,

জানো না বুঝি?

তবু কেন

শুধু প্রেমিক হতে বলো!

আশ্রয়

দেখি তোমায়,

সভ্যতার নিমিত্তে, সংকল্পে

তোমার আশ্রয়, প্রশ্রয়।

কত প্রাণ সওয়ার তোমাতে,

তোমার এত সয়!

শুনেছি এই সেই তুমি,

হায়েনাও এখন অপেক্ষা শিখেছে।

উঁকি দিয়ে দেখি বিস্ময়ে,

একটি সাপ, নিস্তেজ হয়ে

তোমার পাশে ঘুমায়।

দুটো ব্যাঙ —ওরা সম্মিলনে

তোমার বুকে হুমড়ি খায়।

একটু দূরে

বাঘ-সিংহ হামাগুড়ি দেয়।

এভাবেই সভ্যতার পর সভ্যতা জন্ম নেয়।

মনের মানুষ

চন্দ্রালোকিত রাতে তপোবনে

তাকে প্রত্যাখান করেছিলাম সেদিন

তার নিষ্ঠুরতার পরিচয় পেয়ে।

চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যানে সে মানুষ হয়েছে।

শুভ্র হয়ে আবার এসেছে আজ অমাবস্যায়,

তবে আর শুধু বনে নয়, মনেও।

তৃষ্ণার্থ

ভীষণ তৃষ্ণার্থ আমি

একটি নায়াগ্রা জলপ্রপাত চুমুক দিতে চেয়েছিলাম।

ছদ্মবেশে সে বলল,

“আমি সাহারা মরুভূমি”।

আমি বললাম,

“মরুভূমিতেই আমি তৃষ্ণা মেটাব,

খুড়ে খুড়ে তলদেশ থেকে

একটি মহাসাগর তুলে আনব।”

সে বলল,

“তুমি তো অমন ডুবুরি নও,

বরং তুমি খালে বিলে যাও।”

অনর্থক চাষাবাদ

নদীতে চর জেগেছে, অক্ষাংশে;

খবর রাখেনি বাঙলার কৃষক।

দূর বহুদূরে লোকালয় পেরিয়ে মেঘের আড়ালে

এক চিলতে উর্বর জমিন

সুবজ কচি ঘাসে ছেয়ে আছে,

মাঝে মাঝে প্লাবন, পল্লবিত কচি পাতা—

ঝড়-তুফান থমকে গিয়ে সেখানে

কান পেতে শোনে কলকল জলের চলাচল।

মাঝির জীবন নদীমাতৃক, নদীতে একটু ভর করে

শুধু নাও বেয়ে ভেসে চলা, এর বেশি নয় কিছু।

ভীরু ভ্রমনকারী শ্বাপদ ভেবে দূর দূরে থাকে,

ছবি তুলে নেয় তীরে দাঁড়িয়ে।

জমিন বোঝে না ফ্রেমে বাঁধিয়ে কী সুখ ওদের!

 

উর্বরতা মানে ফসল, উর্বরতা মানে সৃষ্টি,

ভরা ভাদরে সদ্য জেগে ওঠা জমিনের

প্রয়োজন জাত কৃষক, থমকে দাঁড়ানো পথিক নয়।

 

চারিদিকে প্লাবিত জমিন, দিগন্ত বিস্তৃত—

তবু হাহাকার, ফসলহীন পৌষ মাস!

রসহীন, শুকনো খটখটে জরাগ্রস্ত

প্রাপ্যজুমিনটুকু নিয়ে বাঙলার কৃষকের বসবাস।

ঐটুকুই তার একমাত্র সম্বল, ওখানেই তার চাষাবাদ।

ছিড়ে খুঁড়ে রোজ তুলে নিতে চায়

কোনোমতে একমুঠো ফসল।

অনর্থক চাষাবাদে

কৃষকের আজ মন নেই, মায়া নেই আর।

বিস্মৃত স্মৃতিগুলো

দুঃখ লাগে না তোমার?

আমার তো লাগে।

তাই বলে কি

হুমড়ি খেয়ে আকাশ এসে পড়ে?

বিশাল বলেই তো পারে না।

দূরে থাকে মহাকাশ,

আরো দূরে অগোচরে নক্ষত্ররা।

একবার তুমি পিছন ফিরলে

ভেঙ্গে দিতাম দেয়ালটাকে।

অবশেষে আকাশ ভাঙে দিগন্তে।

এখনো মনে পড়ে,

বিস্মৃত স্মৃতিগুলো একাকীত্বের

এক বিষন্ন বিকেলে এসে

আমাকে ভাবায়, হাসায়, কাঁদায়।

ভালোবাসা এমনই অদ্ভূত,

কে যে কোথায় গিয়ে কখন ঠকে!

গুপ্তধন

গুপ্তধন নিজের ঘরে,

চুরি গেলে দিগুণ মেলে।

চারপাশে ওরা পাহারাদার,

প্রেম জানে না প্রেম মানে না,

ওরা তো শুধু খরিদ্দার।

প্রেম

তুমি বলছ সতীত্ব!

আমি তো বুঝি

পোড় খাওয়ারাই শুধু

নিঁখুত পরীক্ষা নিতে জানে।

একসাথে

তুমি যদি আমার মনের কথা লিখতে,

আমি যদি তোমার মনের কথা লিখতাম,

তুমি যদি আমার স্বপ্ন দেখতে,

আমি যদি তোমার স্বপ্ন দেখতাম,

তাহলে আমরা দুটো করে আমি হতাম!

ওরা হেরে যেত নিশ্চিত,

মানুষেরা জিতে যেত, তাই না?

সমর্পণ


একটা মানুষ দাও—

ভালবাসতে চাইব না,

ভালবাসা চাইব না।

শুধু বলব-শান্তি দাও,

ফিনফিনে হাওয়ায় বসে

আবোল তাবোল গল্প শুনাও।

ভুলগুলো ভোলাও।


বার বার ভুল করে কাছে আসা,

নিশ্চিত শত্রু জেনেও ভালবাসা।

পরকীয়া

কিছু দুঃখ ছিল তোমায় দেবার মতো।

দেখি ওরা তোমায় পেলে শুধু সুখের কথা কয়।

কিছু কান্না ছিল তোমায় দেবার মতো।

খি ওরা তোমায় পেলে হেসে কুটি কুটি হয়।

তোমার একটা বাড়ি আছে?

সেখানে আমায় একটা ঘর দেবে?

বাড়ি নেই, ঠিক আছে–

তোমার একটা ঘর আছে?

সেখানে আমাকে একটু থাকতে দেবে?

তাও নেই, ঠিক আছে—

তুমি আমাকে সঙ্গে নেবে?


চলে আসো চুপি চুপি মধ্যরাতে।

রাতটুকু তোমাকে থাকতে হবে আমার ঘরে।

সেও গিয়েছে গোপনে।

গোপন অভিসার আরো গোপন করো।

মুক্তির এটাই একমাত্র পথ।


তোমাকে ভালোবাসার কোন দায় নেই আমার।

কাছে আসার অবসর নেই।

কোনো কৈফিয়ত নেই।

তুমি আসবে বলে অপেক্ষার আহম্মুকি নেই।

তবু তোমার কাছে কি প্রাণবন্ত আমি!

এ এক অদৃশ্য বন্ধন।

আড়ালে আমাদের চাপা ক্রন্দন।

তবু অপেক্ষা করো!

আমি যে আর পেরে উঠি না

তুমি কি তা বুঝতে পারো?

আমি ব্যর্থ হলে

তুমি কি তা বুঝতে পারো?

তোমাকে যে ভালোবাসি

তুমি কি তা বুঝতে পারো?

তোমার কাছে আসতে চাই

তুমি কি তা বুঝতে পারো?

বুঝতে পারো, তবু অপেক্ষা করো!

তবে কি তুমি সত্যি আমায় ভালোবাসো?

প্রেম

ভালোবাসি, চুরি করে, রাত দুপুরে;

তোমায় পেলে স্বপ্ন ফেরে।

মাতা নয়, পিতা নয়,

নেই সংসার তোমার-আমার;

হেথায় সেথায় মন পড়ে রয়।

দারা পুত্র পরিবার ফেলে

মনটাই শুধু একলা চলে।

ভালোবাসি রাত দুপুরে

শুধু তোমায় পেলে স্বপ্ন ফেরে।

 

যদি প্রেম চাও

বলতে পারো কোনটা তবে প্রেম?

বলবে কি আমায়

একটা সাগর

কত নদীতে মিলালে

তবে সত্য কিছু প্রেম হয়?

ও ছোট্ট নদী,

একলা তুমি সাগর জলে

মিছে হাবুডুবু খাও।

শুধু অহংকারে তুমি

আকাশ বাধতে চাও!

নদীর কোলে সাগর ঘুমায়

মাঝে মাঝে কল্পনায়,

ঘুম ভাঙলে সে তো অসহায়।

সত্য কি তাই হয়?

প্রেম যদি চাও দল বাধো,

পদ্মা-মেঘনা-সুরমা-যমুনা

গঙ্গা-কাবেরি-মিসিসিপি-ভলগা

ইন্দাস-নীল-আমাজন-দানিয়ুব

তোমরা দলবেধে আসো।

তবে তাতে কিছু প্রেম

মিলতে পারে সাগর জলে।

পতঙ্গ পোড়ে, আমি যে পোড়াই

মাঝে মাঝে

আমার সবই হারায়

তোমার পায়।

তুমি ভাবো ভালোবাসায়,

ভুলে যাও আমার সকল

ন্যায়-অন্যায়।

আমি জানি সে শুধু

উন্মাদনায়, প্রত্যাশায়।

যেমন

পতঙ্গ আগুনে ঝাঁপ দেয়।

পার্থক্য ঢের—

পতঙ্গ পোড়ে, আমি যে পোড়াই।

একই সুরে, একই লক্ষ্যে

চল, মিথ্যা বলি, আজ না হয় একটু বেশি,

চল, কোলাহল ছেড়ে, একটু দূরে আড়ালে;

যাবি? খুঁজে পেতে আমাদের ন্যায্য হাসি।

চল, হিজাব পরে লুকিয়ে, বেলাটা একটু গড়ালে।

এমনভাবে আমি একদিন গিয়েছিলাম সত্যি,

সে এসেছিল সেদিন গেড়ুয়া বসনে, ভয়ে;

এখন সে সাদা মনে সংসারে, সুখে, ধর্মে।

আবার আমি তীর্থে যাব, তাকে ঘুম পাড়িয়ে।

যাচ্ছি অবশেষে, একই সুরে, একই লক্ষ্যে,

তাকিয়ে চারপাশে, পোশাকটা শুধু বদলিয়ে।

তুমি সত্য শুনবে?

প্রিয়তম,

সত্য বলব আমি ভেবেছি,

তুমি শুনবে?

না।

আমি সত্য শুনব ভেবেছি,

তুমি বলবে?

না।

আমি শুধু ভালোবাসব।

সত্য বলব না,

সত্য শুনবও না।

বিস্মৃত স্মৃতি

আমার মনে পড়ে একটা রংধনুর কথা,

সাতটা রঙের খেলা

সেদিন বিকেল বেলা।

হটাৎ উড়ে এসেছিল সোনালী মেঘ,

রোধ পড়ে চিকচিক করছিল

উড়ন্ত যৌবনা সে মেঘমালা,

আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল আবেশে।

রঙের খেলায় বিত্রস্ত হয়েছিলাম।

সব ফেলে ছুটে যেতে চেয়েছিলাম

রংমাখানো ঐ মেঘের কোলে।

আমাকে কিছু না বলে

মুহূর্তে সে কোথায় গিয়েছিল চলে।

আজ খুঁজে পেলাম তারে

একাকী, একটা স্বপ্ন নদীর ধারে।

আমি শুধু তোমাকে চাই

প্রিয়তম,

তোমার সবটুকু ভালোবাসা

রেখে আসো না-হয়

তোমার প্রেমিকের পায়।

আমি শুধু তোমাকে চাই।

প্রিয়তম,

মিথ্যা বলো তুমিও

আমার মতো।

আসো না আজ রাতে,

শিখিয়ে দেব সব তোমায়।

ঠিক এভাবেও হয়,

স্বর্গসমান গোপনীয়তায়

তুমি-আমি ঈশ্বর হয়ে বাঁচি।

প্রিয়তম,

রোজ একটু একটু করে

সময় ফুরায় তোমার আমার।

আসো না আজ একবার।

প্রিয়তম, যাবে আমার সাথে?

প্রিয়তম,

যাবে কাল রাতে

আমার সাথে আরবে?

তীর্থ শেষে ফিরব প্রাতে,

এরপর বৃন্দাবনে।

একই তুমি বেদুঈন,

কখনো কৃষ্ণপ্রেমে।

প্রিয়তম,

তোমার জন্য আমি আকাশ রাখি

ওদের শুধু শূন্যে ভাসাই।

প্রিয়তম,

আমার যে কান্না পায়,

কাঁদতে কাঁদতে তাকে হাসাই।

ঈশ্বর জানে

গিয়েছিলাম আজকে।

তুমি জানো না,

গৃহলক্ষ্মী জানে না;

শুধু ঈশ্বর জানে,

সেও আসে রোজ সেখানে।

স্মৃতি খুড়ে আনি দিন

দুঃখগুলো আসে কখনো কখনো

ভালোবাসার বেশে।

স্বর্গের সে দেবী

শুরুতে খিলখিলিয়ে হাসে।

দিগ্বিদিক তখন তুমি শ্রাবণ

ধারা হয়ে বও,

অভিমানে অসীম শূন্যে মিলাও।

মরুতে মহাপ্লাবনের প্রত্যাশায়

তুমি ছিলে সীমাহীন।

ওরা নিরাশ্রয়, আশাহত রয়;

আমার পথ হল অন্তহীন।

দূর হতে মধ্যরাতে

কারো কান্না সুর হয়ে ভাসে

অবিরাম আমার পাশে ।

চেয়ে দেখি সে তখন ঘুমঘোরে হাসে।

এক যুগ পরে কোনো এক

ক্লান্ত অবসরে স্মৃতি খুড়ে আনি দিন

সত্যি আজ মানি—

তুমি না অতটুকু জ্বালালে

আমি আরো বেশি জ্বলতাম সেদিন।

ভালোবাসা

একটা তোর জন্য

সত্যি আমি সর্বহারা

একটা তোর জন্য

ক্লান্ত আমি দিশেহারা।

ভালবাসা মানে

যে তোকে আমি পাই গোপনে,

ওরা থাকে আটপৌরে জীবনে,

নিত্যদিনে।

যাবি আজকে দিন দুপুরে,

শহরটাকে আড়াল করে,

একটু দূরে, হাত ধরে?

জানবে না কেউ মানুষেরা।

ঈশ্বরে কি ভয়?

সেও তো এমনই হয়।

কি হয় না?

 

প্রিয়তম, কবে তুমি বৃদ্ধ হবে?


প্রিয়তম,

কবে ছাড়বে ওরা তোমায়,

কবে তুমি বৃদ্ধ হবে?

আমি কি বাঁচব সেদিন?

পৃথিবী কি থাকবে ততদিন?

প্রিয়তম,

মনে আছে তুমি আমায় নিয়েছিল

স্বর্গে সেদিন।

আমায় বলেছিল,

“এখানে যথেচ্ছা পাপ করো,

দেখবে না কেউ!”

আরো বলেছিলে,

পৃথিবীতে গিয়ে আমি যেন না বলি কিছু।

প্রিয়তম, আমি কথা রেখেছি,

কাউকে বলিনি কিচ্ছু কোনোদিন।

প্রিয়তম, তুমি আজ ‍ভুল হবে

তুমি আজ ভুল হবে?

প্রিয়তম,

আমি শুধু খুলে ফেলব বলে

আমার জন্য তুমি

খোপায় একটা ফুল দেবে?

আমি শুধু পাব বলে

আমার জন্য তুমি আজ ভুল হবে?

এখন তোমার পুষ্টিকর ফল প্রয়োজন

প্রিয়তম,

আমাকেও তুমি কিছু খাতির করো বটে

শুধু সভ্যতার প্রতি এখনো

তোমার কিছুু দায় আছে বলে।

আমি বুঝি প্রিয়তম,

বীজ তোমার কাছেও মূল্যবান ঠিকই,

কিন্তু সে শুধু আগামীতে ফসল ফলাতে।

এখন তোমার পুষ্টিকর ফল প্রয়োজন।

ঠিক নেই, কিচ্ছু ঠিক নেই

প্রিয়তম,

ভেবেছ কি কোনোদিন

প্রতিটি ‘না’ কতগুলো শক্তিশালী

‘হ্যাঁ’ দিয়ে তৈরি?

আমি বলি ‘না’ —

তুমি মুখ অন্ধকার করে বল

ঠিক আছে!

কেন বল ঠিক আছে?

ঠিক নেই, কিচ্ছু ঠিক নেই,

তুমি ঠিক নেই, আমি ঠিক নেই।

এভাবে কি হয়?

জয় নয়, প্রেম মানে

আমাতে তোমার পরাজয়।

আমি তো পিছাই,

তাই বলে কি অবিরাম?

প্রেমের দেয়ালে গিয়ে ঠিকই আটকাই।

তুমি বলো ঠিক আছে!

কেন বলো, কেন আসো না

পিছে পিছে লুকিয়ে ভয়ে ভয়ে?

ঠিক নেই, কিচ্ছু ঠিক নেই।

তুমি ঠিক নেই, আমি ঠিক নেই।

প্রিয়তম, আমাকে ভুলিয়ে রেখো না শুধু

প্রিয়তম,

আমাকে ভুলিয়ে রেখো না শুধু,

আমাকে দাও তোমার সবকিছু।

আলো, অন্ধকার, তুমি—

তোমার সবকিছু আমাকে দাও।

প্রিয়তম,

ভুলতে পারি না কোনোমতে,

তোমার একাকী ও ছবি,

তুমি হাস্যোজ্জ্বল, মায়াবী—

তোমার পিছনে যেন কার ছায়া

আবছায়া হয়ে আমাকে কাঁদায়।

প্রিয়তম,

দিন চলে যায়, রাত চলে যায়,

শুধু আশায় আশায়।

আকাশও তোমার সাথে হাসে,

অন্তর্যামী দুঃখে ভাসে।


#সংকলন: নিঝুম জ্যোতি

বিশেষ দ্রষ্টব্য: কবিতাগুলোর স্বত্ত্বাধিকার কবি, তাই এখান থেকে কপি করা আইনের লঙ্ঘন।