কবিতায় শেখ শিপন

Sheikh Shipon

একাকিত্ব

একবিংশ শতাব্দীর অবিচ্ছিন্ন পৃথিবীতে মানুষেরা ভীষণ রকম বিচ্ছিন্ন,
বিচ্ছিরি রকম একা ।
ডিজিটাল এ যুগে হাজারো ফ্রেন্ড আছে,
কোথাও একজন এনালগ বান্ধব নেই, বন্ধু নেই।
এই সুপারসনিক বিশ্বে মনজগতে সবাই একা,
শরীরেও সবাই একা।
প্রগাঢ় ভালোবাসা নিয়ে প্রেমিকের পাশে বসে মানুষ একা,
মনহীন শরীরের মিলনে সঙ্গমরত দম্পতিও একা।
জলবায়ু সংকট, পারমানবিক সংকট ছাড়িয়ে
একাকিত্বই এ ধরণীর এখন একমাত্র মানবিক সংকট।

মরে যাবার আগে

মরে যাবার আগে একবার মুমূর্ষুর চোখে বিশ্ব দেখো—
বাঁচার কী আকুতি নিয়ে সেই চেয়ে থাকা!
মরে যাবার আগে একটিবার খালিপায়ে দুর্বা ঘাসের ডগায়
হীরার মতো শিশির মাড়িয়ে দেখো,
মরে যাবার আগে একবার চোঁখ বন্ধ করে দেখো—
প্রিয় মানুষের মুখখানা,
অথবা কল্পনা করো প্রথম সমুদ্র দেখা।
মরে যাবার আগে বুকভরে একবার নিঃশ্বাস নিয়ে দেখো
ফুসফুস কতটা প্রশান্তি দেয়।
শান্ত পুকুরে ঢিল ছুড়ে দেখো
ঢেউগুলোর নিজেকে টিকিয়ে রাখার কী প্রাণান্ত চেষ্টা!
মরে যাবার আগে আজল ভরে বকুল ফুলের ঘ্রাণ নাও,
কোনো এক ইদে প্রাণ ভরে আলিঙ্গন করো প্রিয় অপ্রিয় সকলকে।
মরে যাবার আগে প্রিয়তমাকে মন খুলে বলো,
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
মরে যাবার আগে আরো একটি বার বেঁচে দেখো।

সুখ

যে সুখ ছিলো প্রজাপতির ডানায়, দোয়েলের শিসে।
যে সুখ ছিলো কু্য়াশা জড়ানো খেজুর রসে, ভাঁপা পিঠায়।
যে সুখ ছিলো কাঠি লজেন্সে, বায়োস্কোপে।
যে সুখ ছিলো রাতভর পলাশীর আড্ডায়,
ধুলো মাখা চায়ের কাপে চুমুতে।
যে সুখ ছিলো হুডতোলা রিক্সায় অপরিণত প্রেমে,
ফুলার রোডে আবোল তাবোল হেঁটেচলায়।
যে সুখ ছিলো নিয়ন আলোতে প্রিতমাকে দেখার আকাঙ্ক্ষায়,
ভালোবাসা পাবার নিদারুণ ব্যকুলতায়।
তার কোনো কিছুই আর নেই এখন,
সব হারিয়ে
যেন সুখহীন এক চকচকে জীবনে নিত্য বসবাস।

কবিতার রং তুলি 

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে একটি কবিতা আঁকতে—
যে কবিতায় থাকবে ভালোবাসার তুলিতে আঁকা
শুভ্র শান্তি আর রক্তিম প্রেমের তৈলচিত্র।
যে কবিতায়  পৃথিবীর সকল সমুদ্র-মহাসমুদ্র একত্রে মিশে হবে প্রিয়তমের চোখ,
যেখানে প্রকৃতির প্রধানতম স্তবক হবে নদী ও নারী।
যে কবিতায় বিরহের সব রং দিয়ে আঁকা নীল আকাশ হবে
সকল ব্যর্থ প্রেমের মহাসম্মেলন।
যে কবিতায় বর্ষার প্রথম প্রহরে ঝুম বৃষ্টিতে প্রিয়তমার জন্য
কদম ফুল হাতে প্রতিক্ষায় থাকতে ভুল করবে না কোনো প্রেমিক।
যে কবিতায় বসন্তে বাসন্তী ফুলের পাপড়ি গায়ে জড়িয়ে
রমনীরা থাকবে কলহাস্যে মত্ত।
যে কবিতায় কথা রাখবে বোষ্টমি, বরুণা আর নাদের আলী।

প্রিয়তমার প্রতিক্ষায়

সমস্ত দুপুরের রূপালী রোদের গন্ধ গায়ে মেখে
সন্ধ্যা অবধি প্রিয়তমার প্রতিক্ষায় কেটেছে যৌবন।
একাকী জ্যোৎস্না স্নানে কেটেছে সহস্র রজনী,
অশ্বত্থের মতো দু’পায়ে গজিয়েছে শেকড়।
নিষ্পলক তাকিয়ে থাকতে থাকতে
স্থির চোখ হয়ে গেছে রত্ন পাথর।
বোধহীন এক একটি স্নায়ু যেন
পাঠকের অপেক্ষায় পাঠাগারে পড়ে থাকা বই।
তারপরও স্বপ্নাহত আমি ক্ষণে ক্ষণে ভাবি
এইতো এক্ষুনি আসবে প্রিয়তমা।
রূপকথার কল্পলোকের রাজ্য থেকে,
স্পর্শে উষ্ণতা-কামনা, বুকভরা ভালোবাসা—
চোখে নিঃস্বার্থ প্রেম আর মায়া নিয়ে।
সবাইকে হতবাক করে আসবে অপরূপা প্রিয়তমা।
উপড়ে ফেলবে পায়ের শেকড়,
আলতো চুমুতে ফিরিয়ে আনবে চোখের মনি,

স্নায়ুর ধুলো মুছে পড়ে নিবে সবগুলো অপাঠ্য অধ্যায়।


শেখ শিপন ১৯৮৬ সালের ২ মার্চ মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায় জন্মগ্রহন করেন । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে উপ-ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদ-এর প্রতিষ্ঠতা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ২০১০ থেকে ’১৩ সাল পর্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বর্তমানে পরিবেশ সংগঠন ‘যুব পরিবেশবিদ সমিতি বাংলাদেশ (ইয়েসবিড)’-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ শিপন রাষ্ট্রায়ত্ত বীমা প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কাজ করার পাশাপাশি বর্তমানে শখের বশে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেছেন। প্রকৃতিঅন্তঃপ্রাণ এ মানুষটি সবসময় পরিবেশ প্রতিবেশের কল্যাণের জন্য কাজ করে যেতে চান।