এটি একটি লৌকিক গল্প। সেই প্রচলিত গল্পটির পূর্ণলিখন। একটু পরিবর্তন করেছি, নামটাও বদলে দিয়েছি। অবশ্য লৌকিক কাহিনীর কোনো স্বতসিদ্ধ নাম থাকে না। ঐ গল্পটি কিছুটা ভুল মেসেজ বহন করছিল, তাই কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে।
১
একদা এক কৃষক বাড়ি যাওয়ার পথে ক্ষীণ কণ্ঠে একটি আওয়াজ শুনতে পেল—“সাহায্য করো, সাহায্য করো।” চারিদিকে তাকিয়ে সে বুঝল শব্দটি একটি বড় পাথর খণ্ডের নিচ থেকে আসছে। সে বিস্ময়ের সাথে জানতে চাইল, “কে তুমি সাহায্য চাইছ?”
২
জবাব এল, “এইতো আমি।” পাথরটি গড়িয়ে এসে আমার গর্তের মুখে পড়েছে এবং আমি আর বের হতে পারছি না। আমি মরতে বসেছি। দয়া করে আমাকে বের করো। পাথর খণ্ডের কাছে গিয়ে কৃষক জানতে চাইল, “কিন্তু তুমি কে এখানে।” জবাব এল, “আমি একটি বিপদগ্রস্থ সাপ।”
৩
“সাপ? তোমাকে বের করার পর যদি তুমি আমাকে কামড়ে দাও কী হবে তখন?”
“না, না, আমি কথা দিচ্ছি; আমি তা করব না। দয়া করে আমাকে বের করো।” কৃষক সাপটির উপর দয়ালু হল এবং পাথর খণ্ডটি এক পাশে সরিয়ে দিল।
৪
গর্ত থেকে বেরিয়ে সাপটি হড়কে কৃষকের কাছে গিয়ে ফণা তুলল এবং তাকে কামড়াতে চেষ্ট করল। কৃষক পিছনে সরে গিয়ে চিৎকার দিল, “কেন তুমি আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছ?”
৫
সাপটি উত্তরে বলল, “কারণ, প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিদানে কিছু ক্ষতি প্রাপ্য হয়।”
কৃষক বলল, “আমি তা মনে করি না।”
“খুব ভালো কথা।” সাপটি বলল, “চলো কাউকে জিজ্ঞেস করি। যদি আমরা এমন কাউকে পাই যে, তোমার সাথে একমত হবে, তাহলে আমি তোমাকে কামড়াব না। কিন্তু যদি লোকে বলে যে আমিই ঠিক বলেছি, তাহলে আমি তোমাকে কামড়ে দেব।”
“কৃষক রাজি হলো।” তারা একসাথে রওনা হলো।
৬
কিছূক্ষণ পর. তারা একটি খোড়া ঘোড়া দেখতে পেল, শীর্ণ এবং গায়ে অনেক ছেঁচড়ে যাওয়া দাগ, এলোমেলো কেশর এবং লেজটাও ছিল খুব নোংড়া। কৃষক ঘোড়াটিকে থামাল।
৭
শোনো বন্ধু। “যদি কেউ কারো ভালো করে তাহলে প্রতিদানে তার কী পাওয়া উচিৎ?” কৃষক জানতে চাইল। এক মুহূর্তও দেরি না করে, ঘোড়াটি বলল, “ক্ষতি।” আমার দিকে দেখ, আমি আমারা প্রভূকে বছরের পর বছর ধরে বিশ্বস্ততার সঙ্গে সেবা দিয়েছি। এখন আমাকে না খাইয়ে ফেলে রাখা হয়েছে মরতে।
৮
সাপ কৃষককে বলল, “শুনেছো তো? চলো আরো কাউকে খুঁজি।” ঘোড়াটিকে রেখে তারা অন্য কারো সন্ধানে এগিয়ে চলল। তারা একটি ভেড়ার দেখা পেল। কৃষক ভেড়াটিকে একই প্রশ্ন করল।
৯
ভেড়াটি বলল, “ভালো কাজের বিপরীতে সবসময় খারাপ কিছু আসে।” আমার দিকে দেখ। আমি সবসময় কোনো অভিযোগ ছাড়াই আমার মনিবের সব আদেশ মেনে নিই। কিন্তু এই শীতে সে আমার শরীরের পশমের আচ্ছাদন ছেটে নিয়েছে, তাই এখন আমি শীতে ভুগছি। তাছাড়া গরমের সময় শরীরটা আবার পশমে ভরে যায়, তখন আমি ঘেমে উঠি।”
১০
হঠাৎ কৃষকের মাথায় একটি বুদ্ধি আসল। একটা অজুহাতে সাপটাকে পথে দাঁড় করিয়ে রেখে সে বনের ভেতর গেল শিয়ালের সাথে কথা বলতে। “শিয়াল, শোনো: তুমি কি মনে করো যে কেউ ভালো করলে প্রতিদানে তার খারাপ করা উচিৎ?” “অবশ্যই” শিয়াল উত্তর দিল।
১১
এরপর কৃষক শিয়ালটিকে বলল, “আমি একটি সাপের সামনে গিয়ে তোমাকে একই প্রশ্ন করব। যদি তুমি উত্তরে বলো যে কেউ ভালো করলে তারও ভালো করা উচিৎ, তাহলে আমি তোমাকে একটি শুকর ছানা, একটি ভেড়া অথবা একটি হাঁস দিব। “খুব ভালো” শিয়াল বলল। কৃষক সাপটির কাছে ফিরে গেল।
১২
সাপটিকে সাথে নিয়ে কৃষক শিয়ালের কাছে গেল এবং একই প্রশ্ন শিয়ালকে করল। শিয়াল বলল, “কেউ ভালো করলে তারও ভালো করা উচিৎ। কিন্তু, তুমি আমাকে এ প্রশ্ন কেন করছ?” কৃষক শিয়ালকে ঘটনাটি বলল। শিয়াল সাপটির দিকে তাকিয়ে বলল, “এই বুঝি; আমার তো মনে হয় একটি সাপ পাথরের নিচে পেঁচিয়ে থাকতে পারে না।
১৩
“কিন্তু এটা ছিল একটি বিশাল পাথর খণ্ড, এবং এটি আমার গর্তের মুখ বন্ধ করে রেখেছিল।” সাপটি শিয়ালের যুক্তি খণ্ডাতে বলল। “আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না” শিয়াল বলল।
১৪
সাপটি বলল, “তাহলে আসো এবং নিজের চোখে দেখ” এটা বলেই সে কৃষক এবং শিয়ালকে সাথে নিয়ে সে তার গর্তের দিকে যাত্রা করল। দেখিয়ে সাপটি বলল, “এটিই সেই পাথর খণ্ডটি”
শিয়াল মাথা নাড়ল এবং বলল, তোমার মতো এত বড় একটি সাপের পক্ষে এত ছোট গর্তে ঢোকা সম্ভব হতে পারে না।”
বিরক্ত হয়ে সাপ সেটি প্রমাণ করতে চাইল, “তুমি সেটি ভাবতে পারো না?” এটা বলে দ্রুত সে গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়ল।
১৫
এবার শিয়াল চিৎকার করে বলল, “দ্রুত ওর গর্তের মুখটা বন্ধ করে দাও, কৃষক।” কৃষক পাথরটি টেনে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিল, সাপটি চিরতরে আটকা পড়ল।
১৬
এভাবে কৃষক ভুল শিক্ষা পেল। বন্দুক তুলে নিয়ে সে শিয়ালটিকে গুলি করতে চাইল যে তাকে এখনই বাঁচাল। বন্ধুক তুলতে দেখে শিয়ালটি অবশ্য আগেই পালাল।