ঈদের শার্ট // অসীম বিশ্বাস মিলন

অসীম বিশ্বাস মিলন

ঈদের শার্ট

আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছে। আজ ঘরে ঘরে ঈদ। গ্রামে গঞ্জে ঈদ। আকাশে বাতাসে ঈদ। সবার মনে ঈদ। কামাল, জামাল, ছগির প্রত্যেকেই পরেছে ঈদের নতুন জামা-কাপড়। ঈদের খুশীতে সকলেই মাতোয়ারা। প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস, হাসি-আনন্দ ছোখেমুখে। কিন্তু ‘অবহেলা’ নামের অবহেলার পাত্র অবলা শিশুর আকাশে ওঠেনি ঈদের চাঁদ। আজও তার আকাশে দারিদ্রের কালো মেঘ। মুখে নেই হাসি, চোখে নেই আনন্দ, গায়ে নেই নতুন ঈদের শার্ট। আছে পেটে ক্ষুধার জ্বালা, মুখে মলিনতার স্পষ্ট ছাপ, শরীরে ছয় বছর পুরানো কুরিয়ে পাওয়া ছেড়া-ময়লা আলখাল্লা জামা। চোখে বেদনার কোনো আকুতি। কারণ-সে গরীবের চেয়ে আরো গরীব, মহাগরীব।

মানিকগঞ্জের এক ইটের ভাটায় অবহেলা কাজ করে পেটে ভাতে। সারাদিনে সে যে কয়টা ভাত খায় তার চেয়ে ঢের বেশি বকা খায় মালিক ও অন্যান্য কর্মচারীদের মুখ থেকে। নীরবে হজম করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাঁর। সারাদিন কাটে ভাঙ্গা ইট গুছানো, কাঁদামাটি গোলা আর বড়দের কাজে সাহায্য করে। সকলে তাকে হেলা বলে ডাকে। হেলা সবার কাছ থেকে শুধু অবহেলাই পায়, এটা তার মনের বড় বেদনা। তাঁর প্রশ্ন জীবনে কী কখনো আসবেনা এতটুকু সুখের ছোঁয়া? মুখে কী উঠবেনা কখনো মাংস ভাত? মনে কী আসবেনা কখনো আনন্দের ঈদ? জীর্ণ শীর্ণ শরীরে পড়বেনা ঈদের নতুন শার্ট? নির্জনে খোলা আকাশের নিচে বসে আল্লাহের কাছে সে প্রশ্ন করে অভিমানে। আর স্বপ্ন দেখে ঈদের নতুন শার্ট। হেলার জন্ম ফরিদপুরে নিতান্ত অজো পাড়া গাঁয়।

পিতামাতার এগারতম অনাদর আর অবহেলার সন্তান। পরিবারের সুখশান্তি, হাসি-আনন্দ চুষে ক্লিন্ন খিন্ন করেছে দারিদ্রের সকল অক্টোপাস। বৃহৎ পরিবার পূর্ব থেকেই ছিল গরীব এখন সদস্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় নিরন্ন। জোটে না পরিমিত খাবার তাই জোয়ারের কচুরিপানার মতো জীবন স্রোতে ভাসতে হচ্ছে তাঁদের। ক্ষুধা, অপুষ্টি আর দারিদ্র্য দিনদিন বেড়েই চলছে হেলার পরিবারে।

জায়গা জমিহীন ভাসমান এ পরিবার এখন নিয়তির আশ্রয়ে অপেক্ষমান। পরিবারে অভাব অশান্তি নিত্যসঙ্গী। হেলার পিতা মাতা উপায়হীন সন্তানদের নিয়ে হেলার পিতা কাশেম আলী ছগির সাহেবের রাইচ মিলে কাজ করে। ছগির সাহেব বড়ই ভালো মানুষ, বড়ই দয়ালু। বলা যায় তাঁরই অনুগ্রহে কাশেম টিকে আছে পৃথিবীতে। তিনি বার বার বুঝিয়েছেন কাশেমকে পরিবার ছোট রাখতে, সন্তান কম জন্ম দিতে, কাশেম শোনেনি তাঁর কথা।

তাঁর মূর্খতা তাঁর বিপদের কারণ। ছগির সাহেবের হতাশা সে আর কতো দেখবে কাশেমকে। কাশেমের স্ত্রী তাঁর বাসায় ঝি এর কাজ করে। বড় দুই ছেলে ভ্যান চালায় রাস্তায় রাস্তায়। তিন কন্যার একজনকে বিয়ে দিয়েছে ইকবালের কাছে। ইকবালও ভ্যান চালায়। তাঁরাও সুখী নয় কারণ তাঁরাও নিতান্ত গরীব। হেলার ছোট এক ভাই হিন্দু বাড়ীতে গরু বাছুর দেখা শোনার কাজ করে। আর ছোট ছেলে কদিন হলো মারা গেল কাশেমের হাতে।

কাশেম বড় নিষ্ঠুর মানুষ। ছোট ছেলে বার বার ঈদের নতু শার্ট চাইত। সে ঈদ হোক আর নাই হোক, ঈদের নতুন শার্ট তাঁর চাই। জীবনে সে একবারই নতুন শার্ট গায়ে পরেছে। কবে নতুন শার্ট গায়ে পরেছে ছোট ছেলে তা জানে না। একটা নতুন শার্টের আকাঙক্ষা তাকে কাঁদিয়ে তোলে। অবুঝ বালক বেলা অবেলা পিতার কাছে চাইতে থাকে। কানের কাছে এমন ঘ্যানঘ্যানানি কাশেমকে খুব বিরক্ত করে। অবশেষে সহ্য করতে না পেরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু নিয়তি কাশেমের চেয়ে অধিক নিষ্ঠুরতা প্রকাশ করে। ছোট ছেলের জীবনই চলে যায় গাছের সঙ্গে মাথায় ধাক্কা খেয়ে। এতে পরিবারের আরো দুঃখের ছায়া নেমে আসে। দুষ্টু লোকের খবরে পুলিশ আসে বাড়ীতে। উপায় খুঁজে না পেয়ে ছগির সাহেবের কাছে ছুটে যায় কাশেম।

সাহেব বুদ্ধি দিয়ে বুঝিয়ে কিছু টাকা দিয়ে দেয়। সে যাত্রায় কাশেম শ্রীঘরের বন্ধীদশা থেকে মুক্তি লাভ করে। কিন্তু মনের মধ্যে দুঃখ যন্ত্রণা আর হতাশা দীনতার জেল কেন তাকে অদৃশ্য বন্ধনে আটকে রাখে। সাহেব তাকে বারংবার সাহায্য করলেও সে যেন মুক্তি পায় না। পিতার কাছে ঈদের নতুন শার্ট চেয়ে ব্যর্থ হয় হেলা। গভীর রাতে ফসলের মাঝে কাকতারুয়ার গায়ে পরানো শার্ট চুরি করে শরীরে পরে সে। বেশিদন হয়নি শার্টের বয়স। দু’ তিন বার হয়েতো বৃষ্টিতে ভিজেছে, শিশিরে সিক্ত হয়েছে কয়েক রাত।

মালিক কী বলে, তাই সে লুকিয়ে লুকিয়ে পরতো গায়ে। একদিন বাবার অকথ্য গালাগালি, আর পরিবারের অবজ্ঞা অশান্তি তাকে অভিমানী করে ফেলে। মনের খেয়ালে ছুটে চলে সুখের সন্ধানে শহর মুখে। তখন তাঁর বয়স প্রায় সাত। মধ্য বয়সী এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী দোকানে সাহায্যকারী হিসেবে নিতে চায় তাকে। নতুন শার্ট কিনে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। লোভে পড়ে সঙ্গী হয় তাঁর।

দৌলদিয়া ফেরিতে মেশিনের যন্ত্র দেখতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে হেলা। ঐ লোকটি তাকে আর খুঁজে পায় না। নদী পার হয়ে দিশাহীন হেলা লোক বাসে উঠে পড়ে অজান্তে। মনের খেয়ালে নেমে পড়ে মানিকগঞ্জ। ভয়ার্ত হেলা কাঁদো কাঁদো মুখে জড়সড় ভাবে রাস্তার পাশে বসে থাকে। কেউ তাকে না দেয় সাহস না দেয় খাবার কিংবা আশ্রয় ঠিকানা। রাত তখন প্রায় ১১টা। জব্বার নামের এক বৃদ্ধ তাকে আবিষ্কার করে ইটের ভাটায় নিয়ে যায়। সেই হতে এখনো সে ইটের ভাটায় কাজ করে।

পরনে সেই পুরানো কাকতারুয়ার আলখাল্লা শার্ট। যদিও ইতোমধ্যে দুই একটা শার্ট গেঞ্জি পেয়েছে তো পুরানো তথাপি ফসলের মাঝে কাকতারুয়ার গা হতে চুরিকরা জামাটি তার অধিক ভালো লাগে। কাশেম আলী অনেক খুঁজাখুজি করেও হেলাকে সন্ধান করতে পারেনি। অবশেষে ছোট ছেলের শূন্যতা ভুলেই গেছে প্রায়। উপরন্তু ভালোই হয়েছে অভাবের সংসারে একটু হলেও অভাব কমেছে তার।

এদিকে হেলা মানিয়ে নিয়েছে পরিবার ছাড়া নতুন পরিবেশে। সুতরাং বাড়ীর কথা তাঁর মনে পড়লেও অতো বেশি কাঁদায় না। যদিও তাঁর বাড়ী কোথায় বলতে পারে না শুধু ফরিদপুর নাম ছাড়া। তাছাড়া উপায়তো নেই বাড়ী ফেরার। কারণ নির্দিষ্ট করে বলতে ব্যর্থ যে, তাঁর বাড়ী, তাঁর মা বাবা, তাঁর গ্রাম কী, কোথায়? অবলা-অবহেরার পাত্র হলেও হেলা এখন ইট ভাটা মালিকের কর্মচারী। সারাদিন তাঁর অনেক অনেক কাজ। পাশের গার্মেন্টস কারখানা সনামধন্য এমপি সাহেবের। এবারের ঈদ উপলক্ষ্যে তিনি ঈদের আগের দিন গরীবদের নতুন জামা কাপড় পাঞ্জাবী, লুঙ্গী ইত্যাদি দান করবেন। মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সাধারণের চোখে তিনি দারুণ লোক। দয়ালু ব্যক্তি। সবাইকে ঈদ-পুজায় জামা কাপড় টাকা পয়সা দিয়ে গরীব দুঃখী মানুষের সাহায্য করে থাকেন। মাঝে মাঝে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

সাধারণ জনগন অবশ্য জানে না এসবই ওনার একান্ত নিজ স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে চুরি করে আনা। এমপি ছিলেন নির্বাচনের পূর্বে পঁচিশ বিঘা সম্পত্তির মালিক, বাড়ী ছিল টিনের কাঁচা ঘর। এখন ওনার বুহৎ বৃহৎ ৫/৬টি প্রজেক্ট, তিনটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টোরী, ৫০০ বিঘা জমি। গ্রামে শহরে একাধিক বাড়ী, দালান বাড়ী। উনি এখন মিডিয়া এনে নতুন বস্ত্র বিতরণ করেন। পত্রিকায় বড় লাইন ছাপানো হয়। খবরে দেখানো হয় মাননীয় এমপি সাহেব দরিদ্রদের মাঝে নতুন জামা কাপড়, টাকা পয়সা দান করিতেছেন মুক্ত হস্তে।

মাননীয় এমপি মহোদয় এসেছেন। বস্ত্র বিতরণী শুরু হয়েছে। হাজার হাজার লোকের ভীড়। গরীব দুঃখী মানুষ এমপির হাত থেকে ঈদের নতুন জামা কাপড় নিচ্ছে। কিন্তু হেলা এত দুর্বল যে, ভীড়ের মাঝে জনতার সাথে ঠেলাঠেলি যুদ্ধে টিকে থাকতে পারলো না। তিন চার বার ব্যর্থ চেষ্টার পর যখন পাশের ভাঙ্গা গাছের গুড়ির ওপর হেলান দিয়ে বসেছে তখন অনকাঙ্ক্ষিত হট্টগোলে এলোমেলো হয়েছে বস্ত্রদান কর্মসূচী। বাধ্য হয়ে পুলিশের সাহায্যে নতুন জামা কাপড় বিতরণ বন্ধ ঘোষণা করা হলো। চলে গেলেন এমপি সাহেব। আশাহত হেলা ইটভাটায় ফিরবে এমন সময় ইমন নামের আর এক সহকর্মীর কাছে জানতে পারে যে প্রায় তিন মাইল দূরে করিমনগরে ঈদের নতুন জামা দেয়া হবে। ঈদের শার্টের আকাঙক্ষা তাকে বড়ই ক্ষুধার্ত ও লোভী করেছে। তাই সে ইমনের সঙ্গী হয়েছে করিম নগরে যাওয়ার আশে। হাঁটতে হাঁটতে তাঁরা শেষ বিকালে পৌছায় সেখানে। বড় আকুতি মিনতি শেষে জজ সাহেবের বাড়ীতে ঢুকতে সক্ষম হয় দুজন।

তখন নতুন বস্ত্র টাকা পয়সা দেয়া শেষ। পড়ে থাকা দুটি শার্ট দুজনকে দেয়া হয়। তাতেই তাঁরা মহাখুশী। কিন্তু এ খুশী বেশি সময় স্থায়ী হয় না। বাসে ওঠার প্রাক্কালে ছেঁচড়া চোরের পালায় শার্ট দুটি হারায় তাঁরা। নিদারুণ দুঃখ ও হতাশা নিয়ে ভাটায় ফেরে। কিছুই বলতে পারে না কাউকে। অসময়ে দেরি করে ফেরার কারণ জিজ্ঞাসা করে ম্যানেজার সাহেব। কিছুই বলতে পারে না হেলা। পরিশেষে অন্য বালকের মাধ্যমে জানতে পারে ম্যানেজার মূল ঘটনা।

ইট ভাটার মালিক এ ঈদে দেশে থাকবেন না। তাই ঈদের বেতন বোনাস ম্যানেজারের নিকট বুঝে দিয়ে বিদেশে চলে যান কয়েকদিন আগে। ম্যানেজার সাহেব পারতেন অনেক কিছু করতে। কিন্তু তিনি তেমন সদয় ব্যক্তি নয়। ফলে কর্মচারীরা কাঙ্ক্ষিত বেতন বোনাস পায়নি। হেলাকে মাত্র দুইশত টাকা দিলেন তাঁর ঈদ খরচের জন্য। এখানেও আবার হেলার প্রতি অবহেলা। শত ইচ্ছা থাকলেও ঈদে নতুন শার্ট এবারও তবে পরা হবে না। দুইশত টাকায় হবে কী একটি নতুন শার্ট? তবুও আশা নিয়ে দোকানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ঈদের দিনে শার্ট ক্রয় করতে।

ডাক্তার নাছির সাহেব দীর্ঘদিন রাশিয়ায় ছিলেন। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ। মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন। পাশে থাকার চেষ্টা করেন সর্বদা। গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষের এতটুকু সাহায্য করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করেন। নিজের ছেলে মেয়ে স্ত্রী কেউ নেই তাঁর। বাংলাদেশে ফেলে রাখা শত শত বিঘা সম্পত্তি তিনি সাধারণ লোকের মাঝে বিলিয়ে দেবেন বলে ঘোষণা দেন। তিনি রাশিয়া ভিয়েতনাম সহ বিভিন্ন দেশে সাম্যনীতি অহিংসাবাদ—ধনীদের অতিরিক্ত অর্থ গরীবদের মাঝে বিতরণ ইত্যাদি মহৎ কাজ দেখে বিস্মিত হন। তিনি ও ঐ মহৎ শিক্ষায় দিক্ষিত হন। নিজের সম্পত্তিকে বিলিয়ে দিতে চান গরীব দুঃখীদের মাঝে আর নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান মানুষের সেবায়।

এসব চিন্তাচেতনা পোষণ করে দেশের টানে ফিরে আসেন। মাইকে প্রচার করা হয় ডাক্তার নাছির সাহেব ঈদের দিনে গরীব দুঃখীদের হাতে নতুন বস্ত্র, মুখে অন্ন তুলে দিবেন একান্ত নিজের সম্পদ হতে। এ ঘোষণা সাধারণ লোকের কাছে আশার বাণী। ইতোমধ্যে নাছির সাহেব বিভিন্ন মঞ্চে তাঁর অঢেল সম্পদের সুষ্ঠু বন্টণ প্রক্রিয়া প্রকাশ করেছেন কয়েকবার। আশে পাশের গরীব মানুষের মনে বেঁচে থাকার আশা খুঁজে পেতে চলেছে।

অপেক্ষার পালা কবে সেদিন আসবে তাদের ভাগ্য দুয়ারে। সরকারকে দেশের এমপি, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং বড়লোকদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট আবেদন করেছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সম্পদ গরীব দুঃখীদের মাঝে সমান ভাবে বন্টণ করে দেয়ার জন্য। তিনি দেশে সাম্যতা দেখতে চান, মন মানসিকতা, অর্থ সম্পদ আর প্রভাব প্রতিপত্তিতে। সংগঠন করেছেন যে সংগঠন সদা কাজ করে যাচ্ছে তাঁর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য। তাঁর চোখে সবাই সমান। কেউ ধনী, কেউ গরীব থাকবে না। কারো পাহাড় সম টাকা থাকবে না, কেউ না খেয়ে মারা যাবে না।

গরীবকে বাঁচানোর দায়িত্ব ধনীদের। তিনি সরকারসহ দেশের সবাইকে এ কাজে এগিয়ে আসতে আহ্বান করেন নিত্যই। তিনি পূঁজিবাদির বিরুদ্ধে। সমস্ত বঙ্গদেশে একটাই প্রশ্ন—ডাক্তার নাছির সাহেব। সরকারও দারুণ চিন্তাযুক্ত। ধনীদের পথের সুঁচালো কাটা। ঈদের দিনে ভোরবেলা ডাক্তার নাছির সাহেব গোছল করে নতুন পোশাক পরে চললেন বাড়ীর সামনে উন্মুক্ত মঞ্চে গরীব দুঃখী মানুষের হাতে নতুন বস্ত্র, টাকা পয়সা দান করতে।

পথমধ্যে অজ্ঞাত যুবকের বন্দুকের গুলিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন অকস্মাৎ, মাটিতে লুটিয়ে পড়ল দেহ। শোকের ছায়া—কোন উত্তর নেই!

অনেক দামাদামি করে অবশেষে ব্যর্থ হেলা। একটা শার্ট সে কিনতে পারেনি। পাঁচশত টাকার নিচে কোনো শার্টই নেই বাজারে। সারাদিন কিছুই খায়নি সে। মাটির ব্যাংকে একটা একটা করে জমানো মোট একশত আঠাশ টাকা পঞ্চাশ পয়সা এবং ম্যানেজর কর্তৃক দেয়া দুইশত টাকা। মোট তিনশত আঠাশ টাকা পঞ্চাশ পয়সা। কিন্তু পাঁচশত টাকা হতে অনেক বাকী। খরচ হয়ে যাবার ভয়ে ক্ষুধা পেটে না খেয়ে শার্ট কেনার চেষ্টা করেছে। চোখ বন্ধ করলে সে চোখে দেখে নতুন শার্ট তাঁর গায়ে। মনে পড়ে বার বার তাঁর সেই সময়ের কথা। গত ঈদের কথা।

যে ঈদে মালিকের ছোট ছেলে এবং তাঁর বন্ধুরা নতুন শার্ট পরে খেলতে নেমেছিল দূর্বা ঘাসে ঈদের আনন্দ খেলা, ইটের ভাটায় লুকোচুরি খেলা খেলতে—নুতন ঈদের শার্ট তাঁর একমাত্র স্বপ্ন। অবশেষে যখন শার্ট কিনতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, তখন নদীর কিণারে এসে অত্যন্ত দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে একশত টাকার পুরাতন নোট দুটি ছিড়ে ক্ষত বিক্ষত করে নদীতে ভাসিয়ে দিল, আর কয়েনগুলো একটা একটা করে নদীর জলে ফেলতে লাগল—।


অসীম বিশ্বাস মিলন    Asim Biswas Milon