বর্তমান সময়ের একটি আলোচিত বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিপ্রাপ্ত ফটোগ্রাফার শহীদুল আলমের গ্রেপ্তার এবং তাকেরিমান্ডে নেয়ার বিষয়টি।
রাজধানীর রমনা থানার আইসিটি মামলায় দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ও আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার (০৬ আগস্ট) বিকেলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এর আগে রোববার (৫ আগস্ট) রাত পৌনে ১১ টার দিকে শহিদুল আলমকে ধানমণ্ডির ৯/এ সড়কের বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে দৃকের কমিউনিকেশন অফিসার আমিনা নেয়ামত জানান।
গ্রেফতার দেখানোর পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
বিখ্যাত এ ফটোগ্রাফারকে নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন লেখক তসলিমা নাসরিন।
শহিদুল আমাকে লুকিয়ে রেখে প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন : তসলিমা
দৃক গ্যালারি ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, শহিদুল তাকে লুকিয়ে রেখে প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘১৯৯৪ সালে জুন মাসে খালেদা জিয়ার সরকার আমার বিরুদ্ধে “মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছি” এই অভিযোগ করে বাংলাদেশ ফৌজদারি আইনের ২৯৫/এ ধারায় মামলা করেছিল, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছিল। তখন আমার শুভাকাংখীরা উপদেশ দিয়েছিলেন, আমি যেন আত্মগোপন করি, কারণ ধর্মান্ধ পুলিশ অথবা জেলের ভেতর ধর্মান্ধ কয়েদিরা আমাকে খুন করতে পারে, ধর্মীয় অনুভূতি বলে কথা!’
তসলিমা লিখেন, ‘আমার ওই চরম দুঃসময়ে আমাকে আশ্রয় দেওয়ার সাহস ঢাকা শহরে প্রায় কারোরই ছিল না। রাস্তায় তখন প্রতিদিন আমার ফাঁসির দাবিতে মিছিল করছিল লক্ষ লক্ষ মৌলবাদি। সেই সময় হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের বাড়িতে আমাকে লুকিয়ে রেখে আমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন শহিদুল আলম। নিচের ছবিগুলো ওঁরই তোলা। আমি আজ তাঁর দুঃসময়ে তাঁকে চরম অসম্মান আর হেনস্থা থেকে বাঁচিয়ে আনতে পারছি না, সে ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি, শহিদুল আলমের মতো সভ্য, শিক্ষিত, নির্ভীক মুক্তচিন্তককে ভিন্ন মত প্রকাশের জন্য আজ যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, এ তাঁর নয়, এ গোটা দেশের লজ্জা। আজ শহিদুল আলমের দুঃসময় নয়, আজ বাংলাদেশের দুঃসময়।’
প্রসঙ্গত, দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন। ওই ঘটনায় রমনা থানার তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে ৫ আগস্ট গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। এরপর গত ৬ আগস্ট ডিবি (উত্তর) পরিদর্শক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
শহীদুল আলম মূলত একজন ফটো সাংবাদিক হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি একজন শিক্ষক ও সমাজকর্মীও। দেশী বিদেশী বড় বড় সব গণমাধ্যমে তাঁর ছবি ছাপা হয়েছে, আলোচিত সমালোচিত হয়েছে। তিনি অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি দৃক গ্যালারি এবং পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা। দৃক গ্যালারিতে ফটো প্রদর্শণী হয়ে থাকে, পাঠশালা আয়োজন করে প্রশিক্ষণের।